দুই দশক পর কারামুক্তি, সঙ্গে লাখ টাকা সঞ্চয় দুই নারীর
প্রকাশ: ১ জুলাই, ২০২৫

দীর্ঘ ২০ বছর পর অবশেষে মুক্তির আলো দেখলেন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের দুই নারী বন্দি- আয়েশা আক্তার ও নার্গিস আক্তার। তবে শুধু কারামুক্তিই নয়, জেল জীবনের উপার্জিত প্রায় লাখ টাকার সঞ্চয় নিয়ে, নতুন জীবনও শুরু করলেন তারা। অন্য আরও একজন মুক্তিপ্রাপ্ত হলেন পুরুষ কয়েদি জহিরুল ইসলাম। তিনজন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিল।
সোমবার (৩০ জুন) বিকেলে কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এই দুই নারী দণ্ডবিধির ৫৬৯ ধারায় মুক্তি লাভ করেন।
কারাগার সূত্র জানায়, বন্দি থাকা অবস্থায় নার্গিস আক্তার বিভিন্ন উৎপাদনমুখী কাজ করে উপার্জন করেছেন ৭৩ হাজার টাকা। অন্যদিকে, আয়েশা আক্তার নিজের হাতে তৈরি ফুল ও হস্তশিল্প বিক্রি করে সঞ্চয় করেছেন প্রায় ৯৮ হাজার টাকা।
কারাগার সূত্র জানায়, কারাবিধি অনুযায়ী যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামি যদি টানা ২০ বছর কারাভোগ করে, এবং তার বিরুদ্ধে নতুন কোনো অভিযোগ না থাকে, আচরণ সন্তোষজনক হয়, মামলার প্রকৃতিও সহনীয় হয়—তাহলে সরকারের বিশেষ বিবেচনায় তাকে মুক্তি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিধান অনুসরণ করে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৩ সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
কারাগারে কাটানো বছরগুলোকে শুধুই নিঃসঙ্গতা বা অনুশোচনার গল্প বানাননি তারা। বরং রূপ দিয়েছেন আত্মমর্যাদা আর পুনর্গঠনের এক অনন্য উদাহরণে। আয়েশা ও নার্গিস আরও জানিয়েছেন, কারাগারে শেখা দক্ষতাগুলো কাজে লাগিয়ে সমাজে ফিরে তারা ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে চান। তাদের বিশ্বাস- এই অর্থ, অভিজ্ঞতা আর আত্মবিশ্বাসই হবে নতুন জীবনের মূল পাথেয়।
কারা সূত্র আরও জানায়, ২০ বছর সাজা পূর্ণ হলে সংশ্লিষ্ট বন্দির তথ্য তিন মাস আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। যাচাই-বাছাই শেষে মন্ত্রণালয় যে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করে, তার ভিত্তিতে এই তিন বন্দির মুক্তির আদেশ কার্যকর করা হয়।
মুক্তিপ্রাপ্ত নারী কয়েদি নার্গিস আক্তার কারাগারে অবস্থানকালে নকশীকাঁথা সেলাই ও সুই-সুতা দিয়ে ফুল তৈরির কাজ করে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ৭৩ হাজার টাকা সঞ্চয় করেন। অপর নারী কয়েদি আয়েশা আক্তার সঞ্চয় করেন ৯৮ হাজার টাকা।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুন বলেন, আমাদের লক্ষ্য, বন্দিরা শাস্তির পাশাপাশি শিখে যান কিছু। যাতে সমাজে ফিরে গিয়ে নতুন জীবন গড়তে পারেন। আয়েশা ও নার্গিস সেই চেষ্টারই সফল উদাহরণ। তারা কারাগারে থেকেই সেলাই, কাঁথা ও হস্তশিল্পের কাজ করে নিজেরা সাবলম্বী হয়েছেন।
কারা জীবনের আঁধার কাটিয়ে নতুন সূর্যের আলোয় ভেসে উঠেছেন দুই নারী। তাদের গল্প এখন শুধু মুক্তির নয়, এটা এক রকমের নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা।
কারাগারকে শুধু একটি শাস্তির জায়গা না রেখে সংশোধনাগারে রূপান্তরের লক্ষ্যে বন্দিদের জন্য গৃহীত কর্মমুখী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ইতিবাচক ফল আনছে।
কারা কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, এ ধরনের উদ্যোগ ও সঞ্চিত অর্থ তাদের সমাজে পুনর্বাসন ও নতুন জীবনের সূচনা করতে সহায়ক হবে।