ঢাকার উত্তরার এক রেস্তোরাঁয় পাওয়া যাচ্ছে শুঁটকি পিৎজা, খেতে কেমন
প্রকাশ: ১ জুলাই, ২০২৫

মানুষ হিসেবে আমি বেশ ভোজনরসিক, তবে শুঁটকি জিনিসটা আমাকে টানে না। বাড়িতে রান্না হলেও খানিকটা এড়িয়েই চলি। তবে ফাস্ট ফুডের মধ্যে পিৎজার কথা একেবারে আলাদা। বন্ধুদের আড্ডায় বা সবাই একত্র হলে পিৎজা অর্ডার করতেই হয়। মোজারেলা পনির আর ঝাঁজালো সসের সঙ্গে মাংস, মাশরুম ও ক্যাপসিকামের যুগলবন্দী, সে এক অসাধারণ খাবার। তবে অপছন্দের শুঁটকি আর পছন্দের পিৎজার যুগলবন্দী! নিঃসন্দেহে এক জগাখিচুড়ি। এই ধারণা ঠিক কি ভুল, যাচাই করতে গত সপ্তাহে হঠাৎ একদিন মাকে নিয়ে গেলাম এই নতুন ধরনের পিৎজা খেতে। শুঁটকি পিৎজা!
বন্ধুর মুখে প্রথম শুনি, উত্তরার এক রেস্তোরাঁয় পাওয়া যাচ্ছে শুঁটকি দিয়ে বানানো পিৎজা। শুনেই কেমন দ্বিধা জেগে উঠল—শুঁটকি তো আমাদের খুবই চেনা দেশি খাবার, আর পিৎজা তো পুরোপুরি বিদেশি। এ দুইয়ের মিশেলে কীভাবে সুস্বাদু খাবার তৈরি করা সম্ভব? কৌতূহল এতটাই বেড়ে গেল যে ভাবলাম, একবার যাচাই করতেই হয়।
উত্তরার গরিব-এ-নেওয়াজ অ্যাভিনিউয়ের জমজম টাওয়ারের কিছুটা সামনে এগোলেই পিৎজা দ্য টাউন রেস্টুরেন্ট। শুঁটকির সঙ্গে পিৎজা ব্যাপারটা কেমন যায়, চেখে দেখতেই মূলত সেখানে যাওয়া। রেস্তোরাঁটা বেশ ছিমছাম। মেনুর একদম নিচের দিকে বড় করে লেখা ‘শুঁটকি পিৎজা’। ৮, ১২ আর ১৬ ইঞ্চি মাপের পিৎজা। দাম শুরু ৬৯৯ টাকা থেকে। একটা ১২ ইঞ্চি শুঁটকি পিৎজা অর্ডার করলাম। খানিক বাদে যখন গরম-গরম পিৎজা টেবিলে এল, বুঝলাম সত্যি নতুন কিছু খেতে চলেছি। ভাজা মলা মাছের শুঁটকির হালকা ঝাঁজ, মোজরেলা চিজ, সঙ্গে বিশেষ সস আর দেশি মসলার মিশ্র স্বাদ প্রথম কামড়েই অনুভব করলাম। পিৎজায় থাকা বালাচাওয়ের স্বাদও বেশ ভালো লাগছিল।
খেতে খেতেই রেস্তোরাঁর স্বত্বাধিকারী শিহাব শাহরিয়ারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘শুঁটকি পিৎজার চল আমাদের দেশে খুব একটা নেই। ছয় মাস আগে যখন মেনুতে এটা সংযোজন করি, তখনো সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করছিলাম। ভিন্নধর্মী এই পিৎজা গ্রাহকদের কেমন লাগবে! তবে দুই মাস ধরে নিয়মিতই বিক্রি হচ্ছে আমাদের শুঁটকি পিৎজা। এখন প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫টা শুঁটকি পিৎজা বিক্রি হয়।’
শিহাব শাহরিয়ারের কথা শুনে বুঝলাম, শুধু খাবার বানিয়ে বিক্রি করলেই হবে না, খাবার নিয়ে চিন্তাভাবনাও করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘শুঁটকি নিয়ে আমাদের দেশে দুটি ভাগ আছে। কেউ শুঁটকি খেতে খুব ভালোবাসে, কেউ আবার একদম সহ্যই করতে পারে না। তবে আমরা চেয়েছি এমন কিছু বানাতে, যেটা মানুষের স্মৃতির সঙ্গে যুক্ত হবে, আবার নতুনত্বও আনবে।’
শিহাব শাহরিয়ার আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে শুঁটকি পিৎজার ধারণা নতুন হলেও জাপান, ফিলিপাইন, কোরিয়া, নরওয়ে, থাইল্যান্ডে অনেক আগে থেকেই শুকনো মাছ দিয়ে পিৎজা তৈরি হয়। এটাকে তারা ডাকেও ভিন্ন ভিন্ন নামে। যেমন থাইল্যান্ডে এটাকে বলা হয় প্লা খেম পিৎজা। নরওয়েতে এটাকে বলে স্টক ফিশ পিৎজা। দেশভেদে মাছের ধরনও বদলে যায়। যেমন আমাদের দেশে মলা মাছের শুঁটকি সহজলভ্য। পাশাপাশি, ছোট মাছ ব্যবহার করলে শুঁটকির অতিরিক্ত কড়া ঘ্রাণও কিছুটা কমানো যায়। সামনে হয়তো পিৎজার জন্য লইট্টা মাছের শুঁটকির কথা ভাবতে পারি।’
শিহাব শাহরিয়ার বলেন, ‘শুঁটকি আমাদের সংস্কৃতির বড় একটা অংশ। বিদেশি পিৎজায় দেশি স্বাদ যুক্ত হলে ক্ষতি কী?’
সত্যিই তো! ফিউশন থেকে যদি সুস্বাদু কিছু হয়, তবে ফিউশনই ভালো।
রেস্তোরাঁ থেকে বের হওয়ার সময় আমি আর মা দুজনেই বেশ সন্তুষ্ট। মা–ও বললেন, ‘শুঁটকি দিয়ে বানানো পিৎজাও যে এতটা মজার হবে ভাবিইনি।’
ভেবে ভালো লাগল, আমাদের মতো অনেকেই হয়তো এ উদ্যোগ দেখে দেশের সংস্কৃতি, শুঁটকির প্রতি নতুন করে আগ্রহী হবেন। হয়তো তরুণ প্রজন্ম যাঁরা শুঁটকি খেতে অনাগ্রহী, তাঁরাও এই পিৎজার মাধ্যমে দেশি স্বাদের প্রতি আকৃষ্ট হবেন।