Advertisement

ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ঝকঝকে অবহেলিত সাই সুদর্শন

এই সময়

প্রকাশ: ২৪ জুলাই, ২০২৫

সাই সুদর্শন,ছবি সৌজন্যে ফেসবুক
সাই সুদর্শন,ছবি সৌজন্যে ফেসবুক

সব্যসাচী সরকার

ম্যাচের আগের দিন ব্যাট হাতে নেটেই নেই। তা হলে এ বারও বাইরে, ধরেই নিয়েছিল মিডিয়ার একাংশ। সাই সুদর্শনের ক্রিকেট রুটিনটাই আসলে অন্যরকম। ক্যাপ্টেন শুবমান তাঁকে একবার ম্যাচের আগের দিন জিজ্ঞেসও করেছিলেন, ‘নেট করবি না?’ সোজা না বলে দেন সাই। আসলে এটাই তাঁর প্র্যাক্টিস, ম্যাচের আগের দিন হাল্কা জগিংটাই তাঁর রুটিন।

ছ’টা ইনিংসে সুযোগ পেয়েও করুণ নায়ার সে ভাবে দাগ না কাটায় সাইকে এ বার দিতেই হতো সু়যোগ। ২৩ বছর বয়সী তামিলনাড়ুর তরুণের ৬১ রানের ইনিংসে মানসিক কাঠিন্য, অদম্য জেদ আর হার-না-মানা সংগ্রামের অন্যতম উদাহরণ। স্টোকসের শর্ট বলে পুলটা কি করতেই হতো? নিশ্চয়ই ভাববেন সাই।

তবু এই ইনিংসে মরিয়া লড়াই থাকল। চেন্নাইয়ের মায়লাপোরের গলি ক্রিকেট থেকে উঠে এসে ম্যাঞ্চেস্টারে সার্চলাইটের আলোয়। ওল্ড ট্যাফোর্ডের উইকেট যে খুব সহজ তা নয়, বাউন্স আছে, আছে মুভমেন্ট।

সেখানে দাঁত কামড়ে একটা দিক সামলাচ্ছিলেন সুদর্শন। কাট, পুল, ড্রাইভ সব কিছুই তাঁর ভাণ্ডারে, জীবনের দ্বিতীয় টেস্টে এই হাফ সেঞ্চুরি তাঁকে দেবে তিন নম্বরে প্রতিষ্ঠা।

সাই-ঋষভ জুটি এগোচ্ছিল দারুণ, কিন্তু তখনই ওকসের ইয়র্কারে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বল ঋষভের পায়ের পাতায়। পা মুহূর্তে ফুলে ঢোল, অ্যাম্বুলেন্সে মাঠ ছাড়তে হল তাঁকে।

এক্সাটার্নাল ইনজুরি বলে ধ্রুব জুরেল কিপিং করতে পারবেন, কিন্তু এই ইনিংসে ঋষভ আর ব্যাট করতে পারবেন কি না, সেটা নিয়েই প্রশ্নচিহ্ন। দিন শেষে ভারত ২৬৪-৪, ক্রিজে় জাডেজা (১৯) ও শার্দূল (১৯)।

একটা সেশন খেললে ভালো, পরেরটাতেই ডুবতে পারো। টেস্ট ম্যাচের চিরাচরিত অলিখিত নিয়ম। যার জন্য চলতি সিরিজে়ই বহুবার ভুগতে হয়েছে ভারতকে। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেও গল্পটা অনেকটা একইরকম। তবে এ দিন শেষ সেশনটা ভারতেরই। ১১৫রান, একটা উইকেট। কাঁটা বলতে ঋষভের চোটটা।

লাঞ্চে ৭৮-০, সকালে মেঘলা আবহাওয়ায় আচার্র-ওকস-কার্সদের সামনে নতুন টকটকে লাল ডিউকস বল খেলার সময়ে রাহুলকে দেখাচ্ছিল সাবলীল, অন্য দিকে অল্পের জন্য ব্যাটের কাণা এড়িয়ে বেশ কয়েকবার বেঁচেছিলেন যশস্বী।

লর্ডসে পরপর দুটো ইনিংসে যশস্বীকে ফিরিয়েছিলেন ভয়ঙ্কর আর্চার। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আর্চারের প্রথম স্পেলের ২৫টা বল স্নেহশীল বড়দার মতো সামলে দেন, যেগুলোকে খেলতেই হয়নি যশস্বীকে।

ব্যাক কাট করে স্টোকসকে একটা ছক্কাও এসেছিল তাঁর ব্যাটে। চ্যালেঞ্জের সামনে টেস্টের প্রথম দিন প্রথম সেশনে ৭৮-০ মানে অন্তত প্রথম রাউন্ডের ব্যাট্‌লটা আপনি জিতেছেন।

কিন্তু লাঞ্চের পরে যে সময়ে ইনিংসটা লম্বা টানার কথা, ক্রিস ওকসের আউট সুইংয়ে উইকেট দিয়ে যান স্থিরতার প্রতিমূর্তি রাহুল (৪৬, ৯৮ বলে)। প্রাথমিক নড়বড়ে ভাব কাটিয়ে যশস্বী তখন সচল, অনায়াস।

আর একটা হাফ সেঞ্চুরি, শুধু ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্টে হাজার রান---এসব হয়ে গেল, কিন্তু আট বছর পরে টেস্ট খেলতে নামা বাঁ হাতি লিয়াম ডসনের লেংথে ভুল করে স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরা (৫৮, ১০৭ বলে)। সামান্য মনোঃসংযোগের অভাব। দীর্ঘ পাঁচ টেস্টের সিরিজে় শেষের দিকে যা সব সময়ে ভয় দেখায়।

৯৪-০ থেকে দ্রুত ১২০-২, শুবমানের চেহারাটা ড্রেসিংরুম থেকে বেরোতেই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের গ্যালারি থেকে ‘বু-উ-উ-উ’ সহ ভেসে এসেছিল নানা রকম বিদ্রুপাত্মক আওয়াজ।

লর্ডসের তৃতীয় দিন জাক ক্রলির সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শুধু বেন স্টোকস অ্যান্ড কোম্পানি নয়, ইংল্যান্ডের বিখ্যাত বার্মি আর্মিরও টার্গেট ভারত অধিনায়ক।

বিরাট কোহলি এসব ক্ষেত্রে অবিচলিত থেকে নিজের সেরা গেমটা বের করে এনেছেন বহুবার, এদেশে বা অস্ট্রেলিয়ায়। লর্ডসে দুটো এবং এখানে একটা ইনিংসে ব্যর্থতার পরে শুবমানকে ভাবতে হবে, তাঁর সমস্যাটা কোথায়। তাঁকে ক্রিজে় দেখেই যোদ্ধা স্টোকস উইকেটের গন্ধে হাতে তুলে নিয়েছিলেন বল।

ফোর্থ স্টাম্প লাইনে যে বলটা বেরিয়ে যাবে বলে অফস্টাম্প কভার করে জাজমেন্ট দিয়েছিলেন শুবমান, সেটাই কাট করে ভিতরে ঢুকে এল। স্টোকের আর একটা মাস্টারস্ট্রোক। মাঠের বাইরে কোলাহল বা বহির্বিশ্বকে যদি ফর্মে থাকা ব্যাট মাথার ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলেন, খুব দ্রুত ব্যাটিং ছন্দ জানালা দিয়ে হাওয়ায় ভেসে যেতে পারে।

মেন্টাল ফ্যাটিগ হতে পারে, ক্যাপ্টেন্সির চাপও হতে পারে। কিন্তু দ্রুত এই টেন্টেটিভ ‘খেলব কি খেলব না’ মানসিকতা থেকে বেরোতেই হবে শুবমানকে (১২, ২৩ বলে)। সিরিজে় আরও তিনটে ইনিংস বাকি, ভারতীয় ব্যাটিংকে ক্লিক করতে হলে তাঁকে রান করতেই হবে।

সঞ্জয় মঞ্জরেকর যেমন বলে দিচ্ছেন, ‘বিরাটের ক্ষেত্রে যে আগ্রাসনটা স্বাভাবিক, সেরকম কিছুকে অনুসরণ করতে গিয়ে তোমার নিজের ছন্দ যেন চলে না যায়, সেটা শুবমানের মাথায় রাখা দরকার।’

Sai Sudharsan

যা প্রচলিত, সেটাকে পাল্টে ফেলে নিজস্ব একটা ভাবনা তৈরি করাই ক্যাপ্টেন বেন স্টোকসের ট্রেডমার্ক। ঠিক সেই কারণেই টস জিতে ফিল্ডিং। যেখানে আজ পর্যন্ত কোনও টিম ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে জেতেনি।

স্টোকস অবশ্য টস হওয়ার পরে কারণ হিসেবে মেঘলা আবহাওয়ার কথা বলেছিলেন। অন্য দিকে, পরপর চারটে টস হারলেন শুবমান।

গত টেস্ট থেকে তিনটে বদল। অংশুল কম্বোজের অভিষেক। ভদ্রস্থ শুরুই করেছে ভারত। আপাতত দায়িত্ব সেই জাডেজা ও টেলএন্ডারদের।

Lading . . .