৭ কারণে এশিয়া কাপে ভারতের সেরা বাজি হতে পারেন সূর্যবংশী
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট, ২০২৫

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হবে এশিয়া কাপ। আট দলের এই প্রতিযোগিতায় এবারও সন্দেহাতীতভাবে ফেবারিট ভারত। তবে শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে ভারতের দল কেমন হবে, তা নিয়ে কয়েক দিন ধরে জোর আলোচনা চলছে।
বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, রবীন্দ্র জাদেজাদের মতো তারকারা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলে দিয়েছেন। তবু সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বাধীন বর্তমান দলে ‘ম্যাচ উইনারের’ অভাব নেই। দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড় আছেন দারুণ ফর্মে। তাই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকার কাকে রেখে কাকে নেবেন, তা চূড়ান্ত করতে গিয়ে মধুর সমস্যায় পড়তে পারেন।
সব ঠিক থাকলে আগামীকাল এশিয়া কাপের দল ঘোষণা করবে ভারত। সেই দলে ‘বাজির ঘোড়া’ হতে পারেন দেশটির ক্রিকেটের নতুন বিস্ময় বালক বৈভব সূর্যবংশী। ১৪ বছর বয়সী সূর্যবংশীকে এত তাড়াতাড়ি সিনিয়রদের মঞ্চে সুযোগ দেওয়া হবে কি না, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে কেন তাঁকে এশিয়া কাপে খেলানো যেতে পারে, এমন সাতটি যৌক্তিক কারণ তুলে ধরা হলো—
এবারের এশিয়া কাপ হবে টি-টোয়েন্টি সংস্করণের, যা বৈভব সূর্যবংশীর খেলার ধরনের সঙ্গে সবচেয়ে মানানসই। সংস্করণ যেটাই হোক, শট খেলতে ও দ্রুত রান তুলতে ভালোবাসেন এই ওপেনার। পাওয়ারপ্লের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে এশিয়া কাপে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তিনি একাই যথেষ্ট।
সর্বশেষ আইপিএলে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করেছেন সূর্যবংশী। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ানের কীর্তি গড়ার পর তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত জুন-জুলাইয়ে ইংল্যান্ড সফরে ব্রিটিশদেরও মন জিতে নিয়েছেন। ওই সফরে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ওয়ানডে সিরিজে পাঁচ ইনিংসে ৭১ গড়ে করেন ৩৫৫ রান, স্ট্রাইক রেট ১৭৪.০১, ছক্কা ২৯টি!
সিরিজে রান, স্ট্রাইক রেট ও ছক্কা মারায় কেউ সূর্যবংশীর ধারেকাছে কেউ ছিলেন না। তাঁর যুবাদের ওয়ানডে ইতিহাসে এক সিরিজে সর্বোচ্চ। ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর কিছুদিন তাঁর আইপিএল দল রাজস্থান রয়্যালসের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন। ১০ আগস্ট থেকে আছেন বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে (এনসিএ)। বোঝাই যাচ্ছে, যেকোনো সময় ডাক পড়লেই খেলতে প্রস্তুত তিনি।
অনেকের কাছে মনে হতে পারে, সূর্যবংশী শুধু মেরে খেলতেই জানেন; রয়েসয়ে নয়। কিন্তু এই বয়সেই সূর্যবংশী যে কতটা পরিণত, সেটার উদাহরণ টানতে গিয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিন টেনেছেন সর্বশেষ আইপিএলের উদাহরণ। সম্প্রতি এক পডকাস্টে ভারতের সাবেক এই স্পিনার বলেছেন, ‘আইপিএলে আমি ওকে নানা রকমের বল করে বিচলিত করা চেষ্টা করলাম। কিন্তু বড় শট খেলার পরিবর্তে ওকে ঠান্ডা মাথায় কিছু সিঙ্গেল নিতে দেখলাম। আমি ভাবছিলাম, এসব কী হচ্ছে? এই ছেলেটা কোত্থেকে এল?’ অশ্বিনের তখনই মনে হয়েছে, সূর্যবংশী পরিস্থিতি বুঝতে জানেন। এশিয়া কাপের মতো বড় মঞ্চে এবারই সুযোগ এলে নিজেকে আরও পরিণত ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন সূর্যবংশী।
ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছে গত ২০ জুলাই। দলটির পরের ম্যাচ ২১ সেপ্টেম্বর, অস্ট্রেলিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়া সফরের স্কোয়াডে সূর্যবংশীকে রাখা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে না খেললে তাঁর দুই মাসের বিরতি পড়ে যাবে। এতে তাঁর ছন্দেও ছেদ পড়তে পারে। কিন্তু সূর্যবংশী এখন যেহেতু বসেই আছেন, তাই এশিয়া কাপে পরখ করে দেখাই যায়। একজন খেলোয়াড়ের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন জাতীয় দলের হয়ে খেলা। সূর্যবংশীও নিশ্চয় বয়সভিত্তিক দলের অস্ট্রেলিয়া সফর বিসর্জন দিয়ে ভারত জাতীয় দলে অভিষিক্ত হতে চাইবেন।
ইংল্যান্ডের মতো কঠিন কন্ডিশনে নিজেকে প্রমাণ করেছেন সূর্যবংশী। আরব আমিরাতের কন্ডিশনে খেলা তাঁর জন্য খুব একটা চ্যালেঞ্জিং হবে না। মরুর দেশটিতে গত বছরই তিনি যুবাদের এশিয়া কাপে খেলেছেন। সেটি বিবেচনায় নিয়ে এবার বড়দের এশিয়া কাপেও তাঁকে খেলানো যেতে পারে।
আগামী বছর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করবে ভারত। টুর্নামেন্ট মাথায় রেখে এখন থেকেই দল গোছানোর কথা বলেছেন ভারতের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর। দল গোছানোর এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে এশিয়া কাপ দিয়েই। সাম্প্রতিক সময়ে যাঁরা ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন, তাঁদের বেশির ভাগই থাকছেন, তা মোটামুটি নিশ্চিত। পরীক্ষা-নিরীক্ষার অংশ হিসেবে থাকতে পারে একটি-দুটি চমক। সেই চমকের অংশ হতে পারেন সূর্যবংশী। ভারতের বিশ্বকাপজয়ী সাবেক ব্যাটসম্যান ও বিসিসিআইয়ের সাবেক নির্বাচক কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত তো তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে বলেই দিয়েছেন, শুধু এশিয়া কাপেই নয়; আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও অভিষেক শর্মার উদ্বোধনী সঙ্গী হিসেবে তিনি সূর্যবংশীকে দেখতে চান।
১৯৮৯ সালে শচীন টেন্ডুলকারকে ভারত জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন বিসিসিআইয়ের তখনকার নির্বাচকেরা। টেন্ডুলকারের বয়স তখন ছিল মাত্র ১৬ বছর। অল্প বয়সে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে টেন্ডুলকার নিজেকে কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছেন, তা না বললেও চলছে। ১৪ বছরের সূর্যবংশীকেও জাতীয় দলে সুযোগ দিয়ে আগারকারের নির্বাচক প্যানেল একটা বাজির চাল চালতেই পারে।