বিপিএলকে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিযোগিতায় উন্নীত করার পরামর্শ
প্রকাশ: ১৬ জুলাই, ২০২৫

অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃক ক্রিকেটার-কোচদের পারিশ্রমিক দিতে গড়িমসি ও টালবাহানা এবং নানা ধরনের অনৈতিক পন্থা অবলম্বনে বিপিএল এখন এক বিতর্কিত ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে পরিণত হয়েছে। যে আসরে নিয়মের চেয়ে অনিয়মটাই বড়। যার আকর্ষণ, উত্তেজনা আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিনকে দিন কমছে।
শুরুর কয়েক বছর বিপিএল সাড়া ফেললেও এখন বিপিএল শুধু বিতর্কেরই জন্ম দেয়। নামী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করপোরেট হাউজগুলোর অংশগ্রহণও কমে গেছে। নামী ও বড় করপোরেট হাউজগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি না হওয়ায় প্রতিযোগিতার আকর্ষণ কমে গেছে। পারিশ্রমিক নিয়ে মালিকদের গড়িমসি ও পারিশ্রমিক না দেওয়ার ঘটনা বাড়তে বাড়তে নামী, উঁচুমানের হাই প্রোফাইল ভিনদেশি ক্রিকেটারের সংখ্যাও গেছে কমে।
যে টুর্নামেন্ট খেলতে ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, এবি ডি ভিলিয়ার্স, ডেভিড ওয়ার্নার, আন্দ্রে রাসেল, সুনিল নারিনের মত সুপারস্টাররা প্রায় নিয়মিত অংশ নিতেন, সেই আসরে এখন অতি সাধারণ মানের বিদেশি ক্রিকেটারের দেখাও মেলে না। সব মিলিয়ে বিপিএল এখন এক আকর্ষণহীন ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে পরিণত হয়েছে। তার সঙ্গে বিতর্ক, অনিয়ম আর অব্যস্থপনা তো আছেই।
তবে আশার কথা, আমিনুল ইসলাম বুলবুল বিসিবির নতুন সভাপতি হওয়ার পর বিপিএলের গা থেকে বিতর্ক আর সমালোচনার কালো দাগ মুছে ফেলার প্রাণপন চেষ্টা শুরু করেছেন। বিসিবি পরিচালকদের মধ্যে সবচেয়ে চৌকস মাহবুব আনাম। তাকে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত ভালো কিছু হবে কি না, তার উত্তর দেবে সময়। তবে এরইমধ্য মনে হচ্ছে বিপিএলের অনিয়ম, আর অর্থনেতিক অস্বচ্ছতা দূর করতে মরিয়া বিসিবি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিপিএলের গা থেকে কাল দাগ মুছে ফেলতে এবার বদ্ধ পরিকর তারা। বিপিএলের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা অংশীদারদের সঙ্গে বসে কথা বলে এই টুর্নামেন্টের নানা অনিয়ম, অব্যস্থাপনা আর অসচ্ছতা দূর করার চেষ্টা চলছে।
সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুরে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলসহ গভর্নিং কাউন্সিল চেয়ারম্যান মাহবুব আনাম, পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম , আকরাম খান ও ইফতিখার রহমান মিঠু বসেছিলেন ক্রিকেটারদের সঙ্গে। জাতীয় দলের ২ সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিমসহ মিঠুন ও জাকির হাসানও ছিলেন সেই বৈঠকে।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল ও বিসিবির ৩ শীর্ষ কর্তা মাহবুব আনাম, নাজমুল আবেদিন ফাহিম আর ইফতিখার রহমান মিঠু মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে একান্তে কথা বলেছেন বাংলাদেশি গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গে। তবে আইসিসি ও এসিসির সভায় যোগ দিতে বর্তমানে দুবাই থাকা বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে বিসিবি ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের শীর্ষ কর্তাদের এ মতবিনিময় সভায় থাকতে পারেননি।
দেশের বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিকসহ ক্রীড়া সাংবাদিকদের তিন শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিএসজেএ, বিএসপিএ ও স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যান্ড রাইটার্স কমিউনিটির মনোনীত প্রতিনিধিরা এ বৈঠকে অংশ নেন।
সাংবাদিকরা সবাই বিপিএলকে কালো দাগমুক্ত করার কথা বলেন। নানা বিতর্ক, অনিয়ম আর অব্যস্থপনার অবসান ঘটিয়ে কী কী উদ্যোগ নিলে বিপিএল বিতর্কিত আসরের পরিবর্তে একটি সফল ও আদর্শ আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, তার পরামর্শ দিয়ে সাংবাদিকদের অনেকেই বিপিএল আয়োজনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নির্ধারণের জোর তাগিদ দেন।
বিসিবি কেন, কী কারণে বিপিএল আয়োজন করে? শুধু অর্থনৈতিক মুনাফা, ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সামাজিক পরিচিতি বৃদ্ধি আর ক্রিকেটারদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই কি এ আসর আয়োজনের প্রধান লক্ষ্য? দেশের ক্রিকেটের উন্নয়ন, কল্যাণ ও মঙ্গলে বিপিএল আদৌ কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে কি না? বিপিএলের আয়োজনে দেশের ক্রিকেটের অবকাঠামোগত কোনো উন্নতি হচ্ছে কি না? জাতীয় দল উপকৃত হচ্ছে কি না? টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের পাইপলাইন সমৃদ্ধ হচ্ছে কি না? প্রতিবছর কোনো সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার উঠে আসছে কি না? ক্রিকেট ভেন্যু বাড়ছে কি না? উইকেটের মান ভাল হচ্ছে কি না? এসব খুঁটিয়ে দেখা বিশেষ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন সাংবাদিকরা।
তারা আগামীতে এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করার দিকে বিশেষ মনোযোগী হওয়ারও পরামর্শ দেন। সাংবাদিকরা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য, পরিকল্পনা নিয়ে বিপিএল আয়োজনের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। পাশাপাশি বিপিএলের বাণিজ্যিক মূল্য নির্ধারণ ও বৃদ্ধির পরামর্শও দেন তারা।
সাংবাদিকরা ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধ নিয়ে প্রতিবার যে অনিয়ম হয়, ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে তা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি তোলেন এবং তার পূর্বশর্ত হিসেবে দেশের এবং লব্ধ প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ফ্র্যাঞ্চাইজি স্বত্ত প্রদানের নিশ্চয়তাও দাবি করা হয়।
সাংবাদিকদের কথা শেষ হওয়ার পর বিপিএল গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান মাহবুব আনাম বলেন, আমরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলার পর আজ (মঙ্গলবার) ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে বসলাম। তাদের মতামত শুনলাম, জানলাম। আমরা বিপিএলের অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গেও পর্যায়ক্রমে বসব এবং চেষ্টা করব একে একটি মানসম্পন্ন টুর্নামেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে।