Advertisement

আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই

যুগান্তর

প্রকাশ: ১ জুলাই, ২০২৫

24obnd

‘আমরা দুই ভাই ও দুই বোন ছিলাম। ছোট ভাই হৃদয় আমার মাকে (খোদেজা বেগম) দেখাশোনা করতো। ওর আয় দিয়ে মায়ের খরচ চালাত। এখন মাকে দেখার কেউ নেই। কারখানায় কাজে যাওয়ার পর আমার ভাইকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে মারধর করে হত্যা করেছে। আর কোনো শ্রমিক ভাইয়ের জীবন যেন এভাবে দিতে না হয়। আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’

কথাগুলো বলছিলেন- গাজীপুর নগরীর কোনাবাড়ীতে নিহত শ্রমিক হৃদয়ের বড় ভাই লিটন মিয়া। তিনি যুগান্তরের প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।

এদিকে কারখানায় চুরির অপবাদ দিয়ে হৃদয় (১৯) নামের ওই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তাকর্মীসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সোমবার রাতে কোনাবাড়ীর সেলিমনগর এলাকা থেকে শফিকুল ইসলাম (৩০) নামের এক নিরাপত্তাকর্মীসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

শফিকুল ইসলাম রাজশাহীর বাগমারা এলাকার হাটমাদনগর গ্রামের বাসিন্দা ও গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড নামের কারখানাটির নিরাপত্তাকর্মী। এর আগে রোববার হাসান মাহমুদ নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তিনিও ওই কারখানার শ্রমিক।

এ ঘটনায় হৃদয়ের বড় ভাই লিটন মিয়া বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় গত শনিবার রাতে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

নিহত শ্রমিক হৃদয় (১৯) টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি কারখানাটিতে মেকানিক্যাল মিস্ত্রি (অস্থায়ী) হিসেবে কাজ করতেন। গত শনিবার ভোরের দিকে গাজীপুর নগরের কোনাবাড়ীতে গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড নামের কারখানায় চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত শ্রমিক হৃদয়ের বড় ভাই লিটন মিয়া বলেন, আমি পরিবার নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকা থেকে সাভারে চাকরি করি। কোনাবাড়ী থানার হরিণাচালা এলাকায় একটি বাড়িতে মাকে নিয়ে ছোট ভাই হৃদয় এবং পাশের অন্য একটি বাসায় ছোট বোন ও বোন জামাই ভাড়া থেকে কারখানায় চাকরি করে। ছোট ভাই হৃদয় গত শুক্রবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে বাসা থেকে কারখানায় যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে যায়।

শনিবার সকালে তার মাকে কারখানা থেকে এক লোক ফোন করে জানায়, তার ছেলে মারা গেছে। হাসপাতালে লাশ পাঠানো হয়েছে। আপনারা সেখানে যান। পরে তার মা তাকে (লিটন) ফোন করে বিষয়টি জানালে শনিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে লাশ দেখেতে পান।

তিনি বলেন, রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরে লাশ নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে রাত ১১টার দিকে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। সোমবার দুপুরে তারা একটি মিলাদেরও আয়োজন করেন।

গাজীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে কারখানায় এক শ্রমিককে রশি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মারধরের ভিডিও রোববার রাতে ছড়িয়ে পড়ার পর কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, কারখানার ভিতরে একজন মানুষকে রশি দিয়ে বেঁধে পিঠমোড়া করে পিটিয়ে যারা হত্যা করেছে- তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত। ভিডিও ফুটেজ দেখেছি কারখানা কর্তৃপক্ষের লোকজনই তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তাহলে আসামি অজ্ঞাত হয় কিভাবে? আমরা নিরাপদ কারখানা চাই, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই, এ ঘটনায় যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

ওই ঘটনার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ এক নোটিশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে। তবে গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনার পর কারখানাটি দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষ সেটি খুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) তাহেরুল হক চৌহান বলেন, আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করছি। এরই মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন জানান, গোপন সংবাদে খবর পেয়ে সোমবার মধ্য রাতে ওই এলাকার একটি বাসা থেকে শফিকুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে তার জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

কারখানার মালিক লুৎফর রহমান ও ডিজিএম কামরুল হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা কেউ ফোন ধরেননি।

আরও পড়ুন

Lading . . .