Advertisement

ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দুধ-চা বিক্রি করে ভাগ্য ফেরাল প্রতিবন্ধী আবুল

যুগান্তর

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট, ২০২৫

ছবি: যুগান্তর
ছবি: যুগান্তর

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের ভাড়ালিয়ারচর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী আবুল হোসেন। বয়স ৩৬। চলাফেরায় অক্ষম আবুল হোসেন গত ৮ বছর ভ্যানরিকশায় করে পথে-ঘাটে ভিক্ষা করতেন। এখন সেই ভ্যানরিকশায় দুধ বিক্রি করে মাকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। দুধ বিক্রির পাশাপাশি রাতে বাড়ির পাশে চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, গত তিন বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান আবুলের বাবা ছত্তার বিশ্বাস। তারা দুই ভাই। বড় ভাই হাসান বিশ্বাস একই বাড়িতে থাকেন। তবে বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। মা-ভাইয়ের খোঁজ তেমন একটা নেন না।

মাত্র তিন শতক জায়গা ছাড়া কিছুই নেই তাদের। প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে আবুল হোসেন তিন মাস পর পান মাত্র ২৬০০ টাকা। এ দিয়ে সংসার চলে না তাদের। তাই মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে চলতে হতো আবুলের। বর্তমানে মা হাসিনা বেগমকে (৫৬) নিয়ে আবুল দুধ-চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জন্মের এক বছর পর হঠাৎ করে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাত-পাসহ পুরো শরীর শুকিয়ে যায় আবুল হোসেনের। তারপর পঙ্গুত্ববরণ করেন তিনি। কোনো উপায় না পেয়ে ভ্যানরিকশা ভাড়া করে ভিক্ষাবৃত্তি করতে বাধ্য হন তিনি। ৮ বছর ভিক্ষা করেন।

আট মাস আগে বোয়ালমারীর সুমন নামে এক ব্যক্তির সহযোগিতায় আবুল ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দুধের ব্যবসা শুরু করেন। সুমন বিভিন্ন সরঞ্জামসহ দশ হাজার টাকা পুঁজি দেন তাকে।

সেই টাকা দিয়ে গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে দুধ সংগ্রহ করে বোয়ালমারী বাজারে মিষ্টির দোকানে বিক্রি করেন তিনি। এ কাজে সহযোগিতা করেন ভ্যানচালক রাজন বিশ্বাস।

প্রতি দিন ২ থেকে ৩ মণ দুধ বিক্রি করেন আবুল। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ির সামনে একটি দোকানে চা বিক্রি করেন আবুল হোসেন। সবমিলিয়ে খরচ বাদে গড়ে প্রতিদিন ৪শ থেকে ৫শ টাকা রোজগার হয় তার।

সরেজমিন দেখা যায়, তার বাড়িতে টিনের ছোট্ট দুটি ঘর। অন্যের ওপর ভর করেই চলতে হয় তাকে। সেক্ষেত্রে মা ও ভ্যানচালকের সাহায্য নিয়ে জীবিকার সন্ধানে বের হন আবুল হোসেন।

স্থানীয় মাসুদ বলেন , ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে আবুল হোসেন সকালে দুধ বিক্রি করে। দুপুরের পর বাড়ির সামনে চা বিক্রি করে মাকে নিয়ে সংসার চালায়।

স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান বলেন, আবুল হোসেন আগে ভিক্ষা করত, এখন দুধ বিক্রি করে। দেখা হলে আমরাও তার কাছ থেকে দুধ কিনি।

ভ্যানচালক রাজন বিশ্বাস বলেন, আবুল ভাই কারো সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না। আগে আমি বাড়ি থেকে ভ্যানে তুলে নিয়ে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতাম ভিক্ষা করতে। এতে নিজের কাছেও খারাপ লাগত। এখন ব্যবসা করে সংসার চলে তার। বেশ ভালো লাগে।

আবুল হোসেন বলেন, ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করলেও এটা তার মনকে সায় দিচ্ছিল না। নিজের শারীরিক অবস্থা যাই হোক, ভিক্ষা করতে লজ্জা লাগত। বোয়ালমারীর সুমন ভাইয়ের আর্থিক সহযোগিতায় ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুধ বিক্রি করি এবং বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ির পাশে দোকানে চা বিক্রি করি এখন মানসিকভাবে শান্তিতে আছি

আবুল হোসেনের মা হাসিনা বেগম বলেন, জন্মের পর আবুল হোসেন ভালো ছিল। ছোটবেলায় জ্বর হওয়ার পর থেকে তার শরীরের অবস্থা এমন হয়ে গেছে। এখন দুধের ব্যবসা ও চা বিক্রি করে চলে আমাদের সংসার।

ঘোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, তার নামে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি বেসরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পেলে তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, ভিক্ষাবৃত্তির পেশা ছেড়ে কর্মসংস্থানের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। আবুল হোসেন সমাজের জন্য একজন অনুকরণীয় মানুষ। তার জন্য সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।

আরও পড়ুন

Lading . . .