প্রকাশ: ৩০ জুন, ২০২৫

নোবেলজয়ী ইতালিয়ান নাট্যকার দারিও ফোর আলোচিত নাটক ‘অ্যাকসিডেন্টাল ডেথ অব অ্যান অ্যানার্কিস্ট’। ইতালিতে ঘটে যাওয়া বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে রচিত হয়েছে নাটকটি। মিলান শহরের পুলিশ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে রেলওয়ে বোমা হামলার ঘটনায় রেলশ্রমিক পিন্নেলিকে অভিযুক্ত করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় পিন্নেলি রহস্যজনকভাবে পুলিশ সদর দপ্তরের চতুর্থ তলা থেকে পড়ে মারা যান। ইতোমধ্যে নাটকটি বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে মঞ্চস্থ হয়েছে।
সেই স্রোতধারায় গত বছর ঢাকার মঞ্চে নাটকটি নিয়ে এসেছে নাট্যদল বাতিঘর। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নাটকটির নামকরণ করা হয়েছে প্যারাবোলা। নাটকটির অনুবাদ করেছেন শাহানা জয় ও খালিদ হাসান রুমী। নাট্যরূপ দেওয়ার পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন মুক্তনীল। দলের ১৭তমটি প্রযোজনাটির ১২তম মঞ্চায়ন হলো বুধবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে।
প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক মুক্তনীল বলেন, একটি মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই নাটকের কাহিনী। এই মৃত্যুকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে দেখতে জানা যায় মৃত্যুর মূল কারণ। এভাবেই সুশাসন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থায় এই দেখার সুযোগটা রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে আমরা বিস্মৃতিপরায়ণ জাতি হিসেবে সময়ের ব্যবধানে সবকিছু ভুলে যাই। এটা আমাদের সীমাবদ্ধতা। এই সীমাবদ্ধতার সুযোগে আমাদের সঙ্গে চলে মর্মান্তিক প্রহসন। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে।
মানুষের জীবন নিয়ে চলে হেঁয়ালি ও তামাশা। যেখানে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারই আমরা পেয়েছি ৩৫ বছর পর সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থা তো সহজেই অনুমেয়। কসমেটিক উন্নয়নের আড়ালে যে নিষ্ঠুর সত্যটি লুকিয়ে আছে আশঙ্কা তা একসময় পুরো সমাজটাকে না গ্রাস করে ফেলে। উন্নয়ন যে হচ্ছে না তা কিন্তু নয়; তবে মানবিক বোধ ও নীতি-নৈতিকতার যে ধস নেমেছে, তা রোধ করা কি সম্ভব হবে এই যাত্রায়? উত্থাপিত সেসব প্রশ্ন ও জবাবদিহিতার মাঝে সত্যের অনুসন্ধান করা হয়েছে নাটকের কাহিনীতে।
নাটকটিতে মূলত দুর্নীতি, ছদ্মবেশ, অনুপ্রবেশ, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং তদন্তের নানান অসঙ্গতি তীক্ষè সংলাপ, রসিকতা ও বক্রোক্তির মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে। বাচাল প্রকৃতির এক খ্যাপা মানুষ একদিন ছদ্মবেশে একটি পুলিশ দপ্তরে অনুপ্রবেশ করে একজন তদন্তকারী বিচারকের ভূমিকায়। সেখানে তার বুদ্ধিদীপ্ত ভূমিকা দর্শকদের মনে করিয়ে দেয় কীভাবে ইতালির বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বামপন্থি দলগুলো পুলিশ এজেন্টদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল।
খ্যাপার দৃষ্টিভঙ্গি ও বক্তব্য পুলিশ সদস্যদের বিভ্রান্তি ও দ্বন্দ্বের দিকে নিয়ে যায়। একজন আসামিকে যেভাবে ট্রমাটাইজড করা হয়, সেই একই মিথ্যার ফাঁদে পড়ে হতাশায় নিমজ্জিত হয় তদন্ত অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। ঘটনা পরম্পরার নানান এ্যাঙ্গেল বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে নাটকের শেষ অংশে গিয়ে উন্মোচিত হয় প্রকৃত সত্য। দর্শক জানতে পারে প্রকৃত নৈরাজ্যবাদী কে।
প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন-মুক্তনীল, ফয়সাল মাহমুদ, তাজিম আহমেদ, শৈবাল সান্যাল, শিশির সরকার, সোহানুর রহমান, রুম্মান শারু, নীলয় বিশ্বাস ও সাদ্দাম রহমান।
আরও পড়ুন