৯ মাসে ৬০% খরচ করতে না পারলে অর্থছাড় বন্ধ
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকের (৯ মাস) মধ্যে ৬০ শতাংশ অর্থ খরচ করতে না পারলে শেষ অর্থাৎ চতুর্থ প্রান্তিকের অর্থছাড় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উদ্দেশে এ নিয়ে গত সোমবার একটি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বর্তমানে এমনভাবে বাজেট বাস্তবায়ন করছে যে এতে আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাজেট বাস্তবায়নের গতি ধীর হচ্ছে, যার ধারাবাহিকতা দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকেও থাকছে। বাজেট বাস্তবায়নের হার বেশি দেখা যায় চতুর্থ অর্থাৎ শেষ প্রান্তিকে গিয়ে। এ কারণে সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
ওই পরিপত্রে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে বাজেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অগ্রগতির চিত্র জানতে চাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনার মধ্যে রাজস্ব আহরণ, কেনাকাটা, খরচ এবং বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ সংগ্রহের পরিকল্পনা থাকতে হবে। প্রথম প্রান্তিকের সবকিছু ঠিকঠাকভাবে শেষ করতে না পারলে দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে অর্থছাড় স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি সার্বিক সুশাসনের সঙ্গে জড়িত। আর তাই এ পরিপত্র পরিপালনের বিষয়টি আসতে হবে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক দুই দিক থেকেই। বাজেট বাস্তবায়নের এ দুর্বলতম দিক যেহেতু একধরনের ‘কালচার’ হয়ে গেছে, ফলে শুধু একটি পরিপত্র জারির মাধ্যমে ভালো কোনো সুফল আশা করা কঠিন।
বিষয়টি সার্বিক সুশাসনের সঙ্গে জড়িত। আর তাই এ পরিপত্র পরিপালনের বিষয়টি আসতে হবে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক দুই দিক থেকেই। বাজেট বাস্তবায়নের এ দুর্বলতম দিক যেহেতু একধরনের ‘কালচার’ হয়ে গেছে, ফলে শুধু একটি পরিপত্র জারির মাধ্যমে ভালো কোনো সুফল আশা করা কঠিন।মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সাবেক অর্থসচিব
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ১ শতাংশও বাস্তবায়ন হয়নি। বাস্তবায়ন হয়েছে আধা শতাংশের চেয়ে সামান্য বেশি, অর্থাৎ মাত্র দশমিক ৬৯ শতাংশ, যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। পরিমাণের দিক থেকে জুলাইয়ে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মতো কম।
গত ১৮ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জুলাইয়ে ১ শতাংশের কম এডিপি বাস্তবায়ন গ্রহণযোগ্য নয়। গতবারের অজুহাত এবার দেওয়া যাবে না।
বাজেট বাস্তবায়নের এমন অবস্থা থেকে উত্তরণ চেয়ে অর্থ বিভাগ বলেছে, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক শেষ হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। চলতি মাসের মধ্যে সবাইকে বাজেট বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করতে হবে এবং প্রথম প্রান্তিক শেষ হওয়ার এক মাসের মধ্যে সবাইকে বাজেট বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনও জমা দিতে হবে অর্থ বিভাগে।
অর্থ বিভাগ বলেছে, সময়মতো বিভিন্ন পরিষেবা (ইউটিলিটি বিল) পরিশোধ, মেরামত, সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্ত, মালামাল ক্রয় ও সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষ দিকে পদক্ষেপ নিয়ে থাকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো, যা অগ্রহণযোগ্য। এসব কারণে প্রতিবছরের শেষে সরকারকে অপরিকল্পিত ঋণের দায় নিতে হচ্ছে। অথচ সুষ্ঠুভাবে আগাম পরিকল্পনা করতে পারলে এসব অপরিকল্পিত ঋণ এড়ানো এবং ঋণজনিত ব্যয়ও কমিয়ে আনা সম্ভব।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্থ বিভাগ প্রতিবছরই সেপ্টেম্বর মাসে এ ধরনের পরিপত্র জারি করে থাকে। কিন্তু কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগই তা যথাযথভাবে পরিপালন করছে না। পরিপালনে ব্যর্থতার জন্য কাউকে আবার শাস্তিও পেতে হচ্ছে না।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, শাস্তির বিষয়টি আপাতত তাঁদের বিবেচনায় নেই। তবে অর্থ বিভাগের আশা হচ্ছে, সবাই পরিপত্রের কথাগুলো অনুসরণ করবে।
আরেক সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, এবারের পরিপত্রে অবশ্য একটি নতুন দিক এসেছে। সেটি হচ্ছে, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকের মধ্যে ৬০ শতাংশ অর্থ খরচ করতে না পারলে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে চতুর্থ প্রান্তিকের অর্থছাড় না করা। এটা ভালো, তবে এভাবে বলার একটি ঝুঁকির দিকও আছে। তখন তাড়াহুড়া করে কেনাকাটার প্রবণতাও তৈরি হতে পারে।
অপচয় রোধে অর্থ বিভাগের অধিকতর তদারকি দরকার বলে মনে করেন মাহবুব আহমেদ।