Advertisement
  • হোম
  • শিক্ষা
  • শিক্ষক সংকটে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, মিলছে না ইউজিসির...

শিক্ষক সংকটে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, মিলছে না ইউজিসির অনুমোদন

আমার সংবাদ

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট, ২০২৫

শিক্ষক সংকটে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, মিলছে না ইউজিসির অনুমোদন
শিক্ষক সংকটে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, মিলছে না ইউজিসির অনুমোদন

প্রতিষ্ঠার দুই দশক পেরোলেও শিক্ষক সংকট কাটেনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিবছর নতুন বিভাগ ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে শিক্ষক বাড়েনি।

ফলে প্রয়োজনীয় সংখ্যার অর্ধেকেরও কম শিক্ষক কর্মরত থাকায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান, গবেষণা ও একাডেমিক কার্যক্রম। এতে অসম্পূর্ণ সিলেবাস, সেশনজটসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রকাশনা অনুযায়ী, বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ১০ হাজার ৮০৯ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। উচ্চশিক্ষার মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত একজন পূর্ণকালীন শিক্ষক থাকা প্রয়োজন। সে হিসাবে ৫৪০ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ২২০ জন। এর মধ্যে অনেকেই শিক্ষাছুটিতে থাকায় কার্যত সক্রিয় শিক্ষক সংখ্যা আরও কম।

রেজিস্ট্রার সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের মধ্যে নয়টি বিভাগে শিক্ষক সংখ্যা পাঁচজন বা তারও কম। এর মধ্যে ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজে কোনো শিক্ষকই নেই। পপুলেশন সায়েন্স বিভাগে অনুমোদিত ৮ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ জন শিক্ষাছুটিতে থাকায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। দর্শন, মার্কেটিং ও নৃবিজ্ঞান বিভাগে মাত্র ৪ জন, ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে ৫ জন, পরিসংখ্যান ও ইতিহাস বিভাগে ৩ জন করে শিক্ষক কর্মরত। ব্যবস্থাপনা ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগে কার্যত দুইজন শিক্ষক দিয়েই পুরো বিভাগের পাঠদান চলছে।

অথচ ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী আউটকাম বেইজড এডুকেশন (ওবিই) বাস্তবায়নে প্রতিটি বিভাগে অন্তত ১৫ থেকে ১৬ জন শিক্ষক প্রয়োজন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন,“বেশকিছু বিভাগে শিক্ষক সংকটের বিষয়ে আমরা অবগত। বারবার ইউজিসিকে অবহিত করেছি, আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিও দিয়েছি। তবে আশ্বাস ছাড়া এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া নতুন শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব নয়।”

এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, মাত্র তিন-চারজন শিক্ষক দিয়ে একাধিক কোর্স পড়ানো সম্ভব হয় না। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অতিথি শিক্ষক এনে ক্লাস নেওয়ায় অনেক সময় সিলেবাস অসম্পূর্ণ থাকে, পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশে দেরি হয়।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইউসুফ বলেন,“দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। এতে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছি। বিভাগে অভিযোগ জানালে শিক্ষক সংকটের কথা বলা হয়।”

মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাতুল রহমান বলেন,“শিক্ষক সংকটের কারণে একজন শিক্ষককে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হয়। এতে পাঠদানের মান কমে যায়, আর গবেষণার কাজও বাধাগ্রস্ত হয়।”

শিক্ষকরাও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুল মোমেন বলেন,“প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত একজন পূর্ণকালীন শিক্ষক দরকার। অথচ একেক বিভাগে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র দুই থেকে চারজন শিক্ষক রয়েছেন। আমাদের মার্কেটিং বিভাগে মাত্র চারজন শিক্ষক নিয়ে ৫টি ব্যাচের ২৫টি কোর্স নিতে হয়। এতে অতিরিক্ত একাডেমিক কার্যক্রম বা গবেষণা কার্যত সম্ভব হয় না।”

ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন,“শিক্ষক সংকটের কারণে একজন শিক্ষককে একইসাথে ক্লাস, খাতা মূল্যায়ন, গবেষণা, প্রশ্নপত্র তৈরি ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে মানসম্মত শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। ইউজিসি নির্দেশিত ওবিই বাস্তবায়নও কঠিন হয়ে পড়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের কারণে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা সময়মতো কোর্স শেষ করতে পারছেন না। এতে শুধু সেশনজট নয়, মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণামূলক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ইএইচ

Lading . . .