গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে বামপন্থীরা, জাবিতে এখনও গঠন হয়নি প্যানেল
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট, ২০২৫

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জাকসু) নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমাদানের সময়সীমা শেষ হয়েছে।
ইতোমধ্যে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ও ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের প্যানেল ঘোষণা করেছে। শাখা ছাত্রদলও প্যানেল চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্যানেল ঘোষণা করতে পারেনি বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো।
ক্যাম্পাসে গুঞ্জন উঠেছে, দিনে দিনে গ্রহণযোগ্যতা হারানো এবং কর্মী সংকটের কারণেই বামপন্থীরা প্যানেল ঘোষণা করতে পারছে না।
তবে সূত্র বলছে, প্যানেল গঠনের জন্য এই সংগঠনগুলোর নেতারা টিএসসির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর শিক্ষার্থীদের কাছে সহযোগিতা চাইছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে ক্যাম্পাসে তিনটি বামপন্থী রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন সক্রিয়—বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী। এর মধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্ট বিভক্ত হয়ে দুটি করে কমিটি করেছে। তবে ছাত্র ফ্রন্ট ও ছাত্র মৈত্রীর কোনো কার্যকর কমিটি নেই। নিজেদের ‘সংগঠক’ পরিচয় দিয়েই চলছেন নেতাকর্মীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, হাতেগোনা কয়েকজন কর্মীর ওপর ভর করেই চলছে এসব সংগঠন। ছাত্র ইউনিয়নের কিছু কর্মী থাকলেও ছাত্র ফ্রন্ট ও মৈত্রীর অবস্থা বেশ দুর্বল। সংগঠনগুলোর নিজস্ব ব্যানারে তেমন কোনো কার্যক্রমও চোখে পড়ে না। মাঝে মধ্যে কোনো মিছিল বা মানববন্ধনে সাত থেকে ২৫ জনের বেশি দেখা যায় না। এমনকি অনেক সময় তিন সংগঠনের সদস্যদের একত্রিত হয়ে কর্মসূচি পালন করতে হয়।
জাকসু নির্বাচনকে ঘিরে যখন অন্যান্য সংগঠন একে একে প্যানেল ঘোষণা করছে, তখন বাম সংগঠনগুলোর নীরবতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। শিক্ষার্থীদের অনেকে মনে করেন, নেতাকর্মীদের নৈতিক স্খলন, মাদকাসক্তি ও রাজনৈতিক দ্বিচারিতার কারণে সংগঠনগুলো জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে একত্রিত হয়েও তারা কার্যকর কোনো প্যানেল ঘোষণা করতে পারছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউর রহমান রবি বলেন, “বামপন্থীরা নিজেদের আদর্শবাদী দাবি করলেও বাস্তবে তারা সেই আদর্শ থেকে বিচ্যুত। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, নেতৃত্ব সংকট আর আচরণগত সমস্যার কারণে তাদের কর্মকাণ্ড অনেক সময় ‘আদর্শের আড়ালে ক্ষমতার লড়াই’ হিসেবেই প্রতীয়মান হয়। বক্তৃতা ও মিছিলে সীমাবদ্ধ থেকে তারা ডিজিটাল যুগের সাথে নিজেদের সংযোগ স্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “চরমপন্থী মনোভাব ও একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সংলাপের পরিবেশ নষ্ট হয়। অনেক নেতাকর্মীর মাদকাসক্তি, ধর্ম বিষয়ে অসচেতনতা এবং শিক্ষার্থীদের অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল না হওয়ায় তাদের থেকে শিক্ষার্থীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কখনো কখনো তারা ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্যও দেয়, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। রাজনৈতিক বাস্তবতা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে তারা ফ্যাসিবাদ বিরোধিতার নামে উল্টো তার সহযোগী হয়ে উঠেছে।”
তবে বাম সংগঠনগুলোর নেতারা ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সংগঠক ও নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগি সামিয়া বলেন, “আমরা দ্রুতই প্যানেল ঘোষণা করবো। কয়েকটি সংগঠনের সাথে মিলে একটি প্যানেল করার চেষ্টা চলছে।”
ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক ফাইজান আহমেদ অর্ক জানান, “আমরা রোববার প্যানেল প্রকাশ করব। কর্মী সংকটের কারণে নয়, বরং অনেক বেশি অপশন থাকায় সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগছে।”
ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, “আমরা একটি ইনক্লুসিভ প্যানেল তৈরির চেষ্টা করছি। আমাদের নেতাকর্মীর সংকট নেই।”
ইএইচ