বাবার সঙ্গে ঝামেলায় ক্যারিয়ার শেষ, দাম্পত্যজীবনও অশান্তি ছিল এ নায়কের
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট, ২০২৫

কাপুরদের রক্তে সিনেমা মিশে আছে। সেই পরিবারেই জন্ম হয়েছিল এক স্বপ্নবাজ তরুণের—রাজীব কাপুর। ১৯৬২ সালের ২৫ আগস্ট মুম্বাইয়ে জন্ম নেওয়া রাজীব ছিলেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার রাজ কাপুরের ছোট ছেলে। আদুরে ডাকনাম ছিল ‘চিম্পু’। বড় ভাই ঋষি ও রণধীরের সাফল্যের ঝলমলে ছায়ায় বড় হয়েছিলেন তিনি।
নায়ক হতে চেয়েছিলেন, বাবার ইচ্ছা ছিল অন্য
ছোটবেলা থেকেই নায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন রাজীব। কিন্তু বাবা রাজ কাপুর চাইতেন ছেলে যেন পরিচালনায় মনোযোগ দেয়। দ্বিধার মধ্যেই রাজীব বেছে নেন অভিনয়। ১৯৮৩ সালে ‘এক জান হ্যায় হাম’ ছবিতে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ, কিন্তু সাড়া মেলেনি। এরপর ‘আসমান’, ‘লাভার বয়’, ‘জবরদস্ত’—কোনো ছবিই চলেনি। অবশেষে ১৯৮৫ সালে বাবার পরিচালনায় ‘রাম তেরি গঙ্গা মৈলি’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি পান পরিচিতি। ছবিটি ব্লকবাস্টার হলেও তাঁর আলো দ্রুতই নিভে যায়।
বাবার সঙ্গে সম্পর্কের ভাঙন
সমালোচক জয়প্রকাশ চৌকসির মতে, রাজ কাপুর বারবার পরামর্শ দিয়েছিলেন ছেলে যেন অভিনয় ছেড়ে পরিচালনায় মন দেন। কিন্তু জেদি রাজীব দ্রুতই কয়েকটি ব্যর্থ ছবিতে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে বাবা-ছেলের সম্পর্কে তৈরি হয় তিক্ততা। এমনকি শোনা যায়, রাজ কাপুরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও যাননি রাজীব।
অভিনয়ে সফল না হয়ে তিনি পা রাখেন প্রযোজনা ও পরিচালনায়। ১৯৯১ সালে প্রযোজনা করেন ‘হেনা’, রাজ কাপুরের স্বপ্নের প্রকল্প। ১৯৯৬ সালে পরিচালনা করেন ‘প্রেম গ্রন্থ’, অভিনয়ে ঋষি কাপুর ও মাধুরী দীক্ষিত। কিন্তু ছবিটি মুখ থুবড়ে পড়ে। পরে ১৯৯৯ সালে ঋষির পরিচালনায় ‘আ আব লটে চলে’-এ অভিনয় করলেও ভাগ্য বদলায়নি।
ব্যক্তিগত জীবনে ব্যর্থতা
২০০১ সালে স্থপতি আরতি সাবরওয়ালকে বিয়ে করেছিলেন রাজীব। কিন্তু দুই বছরের মধ্যেই বিয়ে ভেঙে যায়।
এরপর তিনি একা জীবন কাটাতে থাকেন, সুরার আসক্তি বাড়তে থাকে। কিছুদিন পুনেতে বসবাস করলেও শেষমেশ ফিরে আসেন ভাই রণধীর কাপুরের সঙ্গে চেম্বুরে।
শেষ কামব্যাক
অভিনয়জীবনের দীর্ঘ ব্যর্থতার পরও রাজীব চূড়ান্ত কামব্যাক করেছিলেন। মৃত্যুর পর মুক্তি পায় তাঁর শেষ ছবি ‘টুলসিদাস জুনিয়র’ (২০২২)। ছবিটি দর্শকের মন জয় করে, রাজীবকেও ফিরিয়ে দেয় অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা।
মৃত্যু
২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি চিম্বুরে রণধীর কাপুরের বাড়িতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন রাজীব। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৮ বছর।
অপূর্ণ স্বপ্নের গল্প
রাজীব কাপুরের জীবন ছিল স্বপ্ন, সংগ্রাম, ভাঙন আর অপূর্ণতার মিশ্রণ। কাপুর পরিবারের উত্তরাধিকারী হয়েও তিনি কখনোই খুঁজে পাননি সেই সাফল্যের আলো, যেটা তাঁর রক্তের পরিচয়ে স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। তবু ‘রাম তেরি গঙ্গা মৈলি’তে তাঁর অভিনয় এবং মৃত্যুর পরের কামব্যাক হয়তো বলিউডে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়াডটকম