প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বলিউডে স্বজনপ্রীতি বা পারিবারিক প্রভাব নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। কঙ্গনা রৌনতের ‘নেপোটিজম রকস’—এই শব্দবন্ধ একসময় পুরো বলিউডকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সাইফ আলী খানকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল, করণ জোহরকে দীর্ঘদিন ‘নেপোটিজমের পতাকাবাহক’ আখ্যাও শুনতে হয়েছে। তারপরও বিতর্ক থামেনি; বরং সময়ের সঙ্গে আরও তীব্র হয়েছে। বিশেষ করে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর এই আলোচনায় আগুন লাগে।
এর মধ্যেই কাজলের ছোট বোন, অভিনেত্রী তানিশা মুখার্জি মুখ খুললেন একেবারে উল্টো সুরে। তিনি সাফ জানালেন. তিনি নেপোটিজমকে সমর্থন করেন, এমনকি ‘নেপো বেবিদের’ ভালোবাসেন। তাঁর মতে, বাইরের লোকেরা শুধু ইন্ডাস্ট্রি থেকে নেন, কিন্তু কোনো দায়বদ্ধতা দেখান না।
‘আমি বলিউড বেবি’
পিঙ্কভিলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তানিশা বলেন, ‘বলিউড তো ভারতীয় অভিনেতা, ভারতীয় গল্প নিয়েই তৈরি। অথচ আমাদের কেন বারবার টার্গেট করা হচ্ছে? কেন বারবার বলিউড কেন সমালোচিত হচ্ছে? এটা আমাকে কষ্ট দেয়। কারণ, আমি বলিউড বেবি। আমি আমার ইন্ডাস্ট্রিকে ভালোবাসি, এই হিন্দি সিনেমার দুনিয়ার সবাইকে ভালোবাসি, আমি নেপো বেবিদের ভালোবাসি। তাহলে আমাদের কেন বারবার আক্রমণ করা হচ্ছে?’
‘বাইরের লোকেরা শুধু নেন’
তানিশা আরও যোগ করেন, ‘সিনেমা–পরিবার থেকে যাঁরা আসেন, তাঁরা ইন্ডাস্ট্রির কথা আগে ভাবেন। তাঁরা শুধু নেওয়ার জন্য আসেন না, বরং ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা থাকে। কিন্তু যাঁরা বাইরে থেকে আসেন, তাঁরা ইন্ডাস্ট্রির প্রতি অনুগত নন। তাঁরা শুধু নিতে আসেন। হয়তো একদিন তাঁদের সন্তানেরা এ ইন্ডাস্ট্রির অংশ হলে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ভাববেন। কিন্তু আমাদের পরিবারগুলো সব সময় ইন্ডাস্ট্রিকে লালন করার জন্য সিনেমা বানায়।’
উদাহরণ টেনে তানিশা বলেন, ‘যেমন রোহিত শেঠি বা আমার দুলাভাই (অজয় দেবগন)—তাঁরা অ্যাকশন টিম, স্টান্টম্যানদের দেখাশোনা করেন। এটাই তো ইন্ডাস্ট্রিকে পাল্টা দেওয়ার মতো কাজ।’
সুশান্ত-পরবর্তী বিতর্ক
২০২০ সালে সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর নেপোটিজম বিতর্ক নতুন মাত্রা পায়। গুঞ্জন ওঠে, তিনি নাকি ইন্ডাস্ট্রির বাইরের মানুষ বলে একঘরে হয়েছিলেন। কঙ্গনা রনৌত তখন আরও তীব্রভাবে নেপোটিজম-বিরোধী অবস্থান নেন। অপর দিকে তাপসী পান্নু প্রতিষ্ঠা করেন নিজের প্রযোজনা সংস্থা আউটসাইডার ফিল্মস প্রোডাকশনস। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি জীবনকে যেমন আছে তেমন দেখেছি, বিলাসবহুল গাড়ির ভেতর দিয়ে নয়। তাই আমি গর্ব করে বলি—আমি আউটসাইডার।’
সাইফের ‘রেস হর্স’ তত্ত্ব
‘নেপোটিজম রকস’ বিতর্কের পর নিজের খোলাচিঠিতে সাইফ আলী খান নেপো বেবিদের তুলনা করেছিলেন রেসের ঘোড়ার সঙ্গে। তাঁর ভাষায়, ‘যেমন ঘোড়া বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রজনন করা হয়, তেমনি সিনেমায় জিনগত প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মেন্দ্রর ছেলে, অমিতাভ বচ্চনের ছেলে বা শর্মিলা ঠাকুরের ছেলের রক্তের জিনও কিন্তু অভিনয়ে ভূমিকা রাখে।’
প্রসঙ্গ বিচ্ছেদ
এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তানিশা মুখার্জি খোলাখুলিভাবে বললেন উদয় চোপড়ার সঙ্গে বিচ্ছদে নিয়ে। বিশেষ করে, উদয় চোপড়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের শেষ মুহূর্তগুলো তাঁকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছিল।
পিঙ্কভিলাকে তানিশা বলেন, ‘আরমান কোলির সঙ্গে ব্রেকআপটা এতটা হৃদয়বিদারক ছিল না। আমি বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম, যখন উদয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক শেষ হয়েছিল। আমরা বন্ধু ছিলাম, খুব কাছের ছিলাম এবং একে অপরকে অনেক দিন ধরে চিনি।’
তানিশা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন প্রায়ই সবার নজরের মধ্যে কাটলেও, তিনি সব সময় ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এমন একজন মানুষ যে সব সময় ভালো দিকগুলোই দেখতে চাই। ভাবি, যা ঘটে, তা ভালোর জন্যই ঘটে। ভালোবাসার অনুভূতি আমাকে আনন্দ দেয় এবং আমি এই অভিজ্ঞতাগুলো সযত্নে ধারণ করি।’
মায়ের সমর্থন
তানিশা জানান, তাঁর জীবনে নানা উত্থান-পতনে মা তনুজা সব সময় পাশে ছিলেন। তাঁর ভাষ্যে, ‘মায়ের উপস্থিতি সব সময় শক্তির উৎস।’ তিনি আরও জানান, পেশাগত পরামর্শের জন্য তিনি খুব কমই বন্ধুদের কাছে যান। কারণ, খুব কম মানুষই সিনেমাজগতের জটিলতা বুঝতে পারেন।
তানিশার ক্যারিয়ার
তনিশা ২০০৩ সালে ‘শশশ...’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন। এরপর তিনি ‘সরকার’, ‘নীল এন নিক্কি’ ও তামিল সিনেমা ‘উনালে উনালে’তে অভিনয় করেন। ‘উনালে উনালে’ ছাড়া তানিশার কোনো সিনেমাই সেভাবে আলোচনায় ছিল না। ২০১৩ সালে তিনি ‘বিগ বস ৭’-এ প্রথম রানারআপ হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান, যেখানে আরমান কোলির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক আলোচনা সরগরম হয়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে তিনি একটি কমেডি শোর বিচারক হিসেবেও কাজ করেন। তবে ক্রমাগত ব্যর্থতায় হিন্দি সিনেমায় তাঁর ক্যারিয়ার আর আগায়নি।