Advertisement
  • হোম
  • বিনোদন
  • দেব আনন্দের 'গার্লফ্রেন্ড', হলিউড সুপারস্টারের সঙ্...

দেব আনন্দের 'গার্লফ্রেন্ড', হলিউড সুপারস্টারের সঙ্গেও 'প্রেমের গল্প', কেমন ছিল সুরাইয়ার ফিল্মি জীবন?

এই সময়

প্রকাশ: ১ জুলাই, ২০২৫

দিলীপ কুমারের চেয়েও বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া সুরাইয়া মাত্র ৩৪ বছরেই নিয়েছিলেন অবসর।,ছবি: সংগৃহীত
দিলীপ কুমারের চেয়েও বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া সুরাইয়া মাত্র ৩৪ বছরেই নিয়েছিলেন অবসর।,ছবি: সংগৃহীত

এটা সেই সময়ের কথা, যখন বলিউডে অভিনেতারা অর্থাৎ মেল অ্য়াক্টররাই ছিলেন ছবির মূল চালিকা শক্তি। ছবিতে তাঁদের গুরুত্বই ছিল বেশি। নায়িকাদের সঙ্গে পারিশ্রমিকের পার্থক্যটাও ছিল অনেকটাই। কিন্তু সেই সময়ে এক সুন্দরী স্রোতের একেবারে বিপরীতে হেঁটে সকলকে বিস্মিত করে দিয়েছিলেন। শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রীদের সঙ্গে অভিনেতাদের পারিশ্রমিকের সমতা তখন আলোচনার বৃত্তে

যখন স্থানই পেত না, সেই সময়ে পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে দিলীপ কুমার, দেব আনন্দ, অশোক কুমারের মতো কিংবদন্তি তারকাকে পিছনে ফেলেছিলেন বলিউডের নামী এই অভিনেত্রী। তিনি আর কেউ নন, সুরাইয়া, যিনি রুপে ছিলেন লক্ষ্মী, গুণে সরস্বতী।

অভিনয়ের পাশাপাশি গায়িকা হিসাবেও পরিচিতি পেয়েছিলেন

হিন্দি চলচ্চিত্র জগতে সুপারস্টার সুরাইয়ার উত্থান শুধুমাত্র অভিনয়ের হাত ধরে নয়, একজন গায়িকা হিসেবেও সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন তিনি। ‘ওমর খৈয়াম’ (১৯৪৬), ‘পেয়ার কি জিৎ’ (১৯৪৮), ‘বড়ি বহেন’ (১৯৪৯), ‘দিল লাগির’ (১৯৪৯)-এর মতো ছবিতে সুরাইয়ার অভিনয় তাঁর কেরিয়ারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। তবে সুরাইয়া যখন চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন, তখন তাঁর অভিনয় করার কোনও প্ল্য়ান ছিল না। বরং ততদিনে সঙ্গীত পরিচালক নওশাদের হাত ধরে তিনি গায়িকা হিসেবে পথ চলা শুরু করে দিয়েছেন। এমনকী নওশাদের সৌজন্যে অনেক প্লেব্যাক গানেরও প্রস্তাব পেয়ে গিয়েলেন সুরাইয়া।

সুরাইয়া বয়স যখন মাত্র ১২, তখন সুরাইয়া তাঁর কাকার সঙ্গে ছবির সেটে যেতেন। একবার ‘তাজমহল’-এর সেটে গিয়েছিলেন সুরাইয়া। পরিচালক তখন তাঁকে তরুণ মুমতাজ মহলের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। অল ইন্ডিয়া রেডিয়োয় ছোটদের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান করার পর, সুরাইয়ার গানের প্রতিভা আবিষ্কার করেন নওশাদ। এই নওশাদই তাঁকে ‘শারদা’ (১৯৪২) ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেন। এর পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সুরাইয়াকে। তিনি ‘ফুল’, ‘সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত’, ‘আজ কি রাত’, ‘দর্দ’, ‘দিল লাগি’, ‘নাটক’, ‘আফসার’, ‘কাজল’, ‘দাস্তান, ‘সনম এবং ‘চার দিন’-এর মতো ছবিতে গান গেয়ে খুব দ্রুত বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।

Suraiya’s affair with Dev Anand that marked her descent in Hindi films

হলিউড স্টার গ্রেগরি পেকের সঙ্গে সুরাইয়ার সাক্ষাৎ

সুরাইয়া সেই সময়কার হলিউড হার্টথ্রব গ্রেগরি পেকের বিরাট ভক্ত ছিলেন। গ্রেগরি পেক যখন ভারত সফরে এসেছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন সুরাইয়া। ১৯৫২-য় সুরাইয়া হলিউড পরিচালক ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রাকে তাঁর স্বাক্ষরিত একটি ছবি দিয়েছিলেন— গ্রেগরি পেককে দেওয়ার জন্য। ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রা সেই সময়ে ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে এ দেশে সফর করছিলেন। গ্রেগরি পেক মারফত সুরাইয়ার দেওয়া ছবিটি হলিউড অভিনেতা সানন্দে গ্রহণ করেছিলেন। ফ্রাঙ্ক যখন ভারতে আসেন, তখন সুরাইয়ার সঙ্গে দেখাও করেন।

শুধু দেখা করাই নয়, গ্রেগরি পেক মুম্বইয়ে সুরাইয়ার বাড়িতেও গিয়েছিলেন। দু'জনে এক ঘণ্টা ধরে কথা বলেছিলেন। স্বপ্নের অভিনেতার সঙ্গে দেখা করার ঘোর সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে সুরাইয়া বলেছিলেন, ‘আমরা এক ঘণ্টা ধরে কথা বলেছিলাম। সেই রাতে আমার ঘুমই হয়নি। কেউ বিশ্বাস করেনি যে, আমি ওঁর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। দু'মাস ধরে সংবাদপত্রে আমাদের প্রেমের গল্প ছাপা হয়েছিল। আমি এটা অবশ্য উপভোগই করেছি!’

Suraiya’s affair with Dev Anand that marked her descent in Hindi films

দেব আনন্দের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কই বলিউডে সুরাইয়ার পতনের কারণ?

সুরাইয়া যখন কেরিয়ারের একেবারে শীর্ষে, সেই সময়ে তিনি দেব আনন্দের প্রেমে পড়েন। দেব আনন্দের সঙ্গে সাতটি ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি। দেব আনন্দের প্রেমে এতটাই হাবুডুবু খেয়েছিলেন সুরাইয়া যে, প্রেমিকের জন্য একটি হীরের আংটি কিনতে টাকাও ধার করেছিলেন। সেই সময় যদিও দেব আনন্দের থেকে সুরাইয়া অনেক বড় তারকা হিসাবে বলিউডে স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দেব আনন্দ যেহেতু হিন্দু ছিলেন, তাই সুরাইয়ার দিদা তাঁদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি। সুরাইয়ার দিদাই তাঁর জীবন এবং কেরিয়ার নিয়ন্ত্রণ করতেন। শোনা যায়, সুরাইয়ার দিদা দেব আনন্দের জন্য কেনা আংটি সমুদ্রে ফেলে দিয়েছিলেন এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাঁদের অন স্ক্রিন রোমান্টিক দৃশ্যগুলি ছেঁটে দিতে।

সুরাইয়াকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন দেব আনন্দ। তাঁকে পাওয়ার জন্য অভিনয়ও ছেড়ে দিতেও রাজি ছিলেন, যেটা মানতে পারেননি সুরাইয়া। তাই তাঁরা শেষমেশ আলাদা হয়ে যান। তবে এই সম্পর্ক সুরাইয়াকে এতটাই গভীর ভাবে প্রভাবিত করে যে, তিনি আর বিয়ে করেননি। এ দিকে, দেব আনন্দ ১৯৫৪ সালে কল্পনা কার্তিককে বিয়ে করেন।

সুরাইয়া বিনোদন পত্রিকা ‘স্টারডাস্ট’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘যখন আমি দেবকে বিয়ে করতে রাজি হইনি, তখন ও আমাকে ‘ভীতু’ বলেছিল। হয়তো আমিও সে রকমই ছিলাম। আমি স্বীকার করছি যে, আমার এমন কোনও পদক্ষেপ করার সাহস ছিল না, যেটা সম্পর্কে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম না। সম্ভবত এটা একটি বোকামি। সম্ভবত একটি ভুল। নাকি এটাই নিয়তি?’

Suraiya’s affair with Dev Anand that marked her descent in Hindi films

ভেঙে পড়েন সুরাইয়া এবং সরে দাঁড়ান

দেব আনন্দের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদের পর, সুরাইয়ার পেশাগত জীবনও ধাক্কা খেয়েছিল। পাঁচের দশকে তাঁর ছবিগুলি ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। তবে ১৯৫৪ সালে সোহরাব মোদী পরিচালিত ‘মির্জ়া গালিব’-এর সৌজন্য়ে ফের লাইমলাইটে আসেন সুরাইয়া। ছবিটি সুপারহিট হয়েছিল। এমনকী এই ছবিটির জন্য জওহরলাল নেহরুর কাছ থেকে সুরাইয়া প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন, যিনি তাঁকে বলেছিলেন, ‘তুমনে মির্জ়া গালিব কি রুহ কো জ়িন্দা কর দিয়া (তুমি মির্জ়া গালিবের আত্মাকে জীবিত করে তুলেছ)।’ কামব্য়াকের ১০ বছরের মাথায়, ১৯৬৪-তে পৃথ্বীরাজ কাপুরের সঙ্গে তাঁর অভিনীত ‘রুস্তম সোহরাব’ ছবিটি মুখ থুবড়ে পড়ে।

এই ব্য়র্থতার পরে সুরাইয়া স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন এবং লাইমলাইট থেকে দূরে সরে যান। তাঁকে আর কখনও বড় পর্দায় দেখা যায়নি। এমনকী তিনি এর পর আর কখনও কোনও প্লেব্যাকও করেননি। শারীরিক সমস্যার কারণে ২০০৪ সালে প্রয়াত হন সুরাইয়া।

Lading . . .