Advertisement
  • হোম
  • বিনোদন
  • ১২-তে বার ডান্সার, তার পরে দেহব্যবসাও— ‘আশিকি ২’-এ...

১২-তে বার ডান্সার, তার পরে দেহব্যবসাও— ‘আশিকি ২’-এর লেখিকার জীবন কেমন?

এই সময়

প্রকাশ: ১৮ আগস্ট, ২০২৫

‘আশিকি ২’-এর লেখিকার জীবনের একটা অধ্যায় ছিল অন্ধকারে ভরা।
‘আশিকি ২’-এর লেখিকার জীবনের একটা অধ্যায় ছিল অন্ধকারে ভরা।

সিনেমা আমাদের এমন এক মায়াবী জগতে নিয়ে যায়, যেখানে বাস্তবের যন্ত্রণা কিছু সময়ের জন্য হলেও মিলিয়ে যায় পর্দার আলো-আঁধারিতে। কিন্তু খুব কম মানুষই জানেন, এই ইন্ডাস্ট্রির ঝলমলে গ্ল্যামারের আড়ালে এমন কিছু গল্প লুকিয়ে থাকে, যা এক রাতেই বদলে দিতে পারে জীবনের গতিপথ। শাগুফতা রফিকের জীবন ঠিক তেমনই এক চিত্রনাট্য, যেখানে দুঃখ, সাহস, প্রেম আর মুক্তির সুর একসঙ্গে বেজে ওঠে।

শৈশবের রহস্য এবং পরিচয়ের অন্বেষণ

শাগুফতা কখনও নিজের বাইলোজিক্যাল মাকে চিনতেন না। তাঁকে বড় করেছিলেন অভিনেত্রী আনওয়ারি বেগম, এক সময়ের পরিচিত মুখ, যাঁর নাম আজ বিস্মৃতির ধুলোয় ঢাকা। অনেকেই ভাবতেন, তিনি আনওয়ারির নাতনি, কারণ আনওয়ারির মেয়ের বিয়ের আগে একটি সম্পর্ক ছিল। আবার কেউ বলতেন, তাঁকে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিল। তাঁর জন্মপরিচয় আজও রহস্যে ঘেরা।

Aashiqui 2 Writer Shagufta Rafique’s Inspiring Journey

১২ থেকে ১৭: অন্ধকারের পথে প্রথম পদক্ষেপ

মাত্র ১২ বছর বয়সে, পারিবারিক সঙ্কটে পড়ে শাগুফতা পার্টিতে নাচতে শুরু করেন। তাঁর মা, একাই তাঁকে বড় করছিলেন, কিন্তু সংসার চালাতে গয়না ও বাসন বিক্রি করতে বাধ্য হন। শাগুফতা জানতেন না, এই পার্টিগুলি আসলে দেহব্যবসার আখড়া। তিনি বলেন, ‘আমি মেঝে থেকে টাকা কুড়িয়ে নিতাম।’ এই অন্ধকার জগতে তাঁর যাত্রা চলেছিল ১৭ বছর পর্যন্ত।

১৭ বছর বয়সে তিনি পেশাগত ভাবেই যৌনকর্মে যুক্ত হন। তাঁর মা জানতেন, কিন্তু সমর্থন করতেন না। তবু অর্থের অভাবে শাগুফতা এই কাজ চালিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আমি মায়ের জন্য সোনার বালা কিনেছিলাম। নিজেকে তখন বাড়ির পুরুষ বলে মনে হতো।’ শাগুফতা আরও জানিয়েছেন, প্রতি রাতে ৩০০০ টাকা রোজগার করতেন। এই জীবন তিনি টেনে নিয়ে যান এক দশক, যতক্ষণ না দুবাইয়ের বার-ডান্সের প্রস্তাব আসে।

দুবাই: প্রেমের ছায়ায় মুক্তির সন্ধান

দুবাইয়ে তিনি গান এবং নাচের মাধ্যমে পুরুষদের মনোরঞ্জন করতেন। প্রথমে ভয় পেলেও, ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হন। একদিন তাঁর জীবনে প্রবেশ করেন এক ৪৫ বছর বয়সী পুরুষ, যিনি শুধু ভালোবাসেননি, তাঁকে আশ্রয়ও দিয়েছেন। প্রেমের আবেশে ভেসে যান তাঁরা, আসে বিয়ের প্রস্তাবও। যদিও সেই বিয়ে বাস্তব হয়নি, তবে শাগুফতা তাঁকে আজও ‘guardian angel’ বলে মনে করেন। ১৯৯৯-এ তাঁর মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে, তিনি সব ছেড়ে ভারতে ফিরে আসেন।

Aashiqui 2 Writer Shagufta Rafique’s Inspiring Journey

কলমে যন্ত্রণা, পর্দায় বাস্তবতা

২০০২ সালে মহেশ ভাটের সঙ্গে প্রথম বার দেখা করেন শাগুফতা, এই সাক্ষাৎ তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি নিজের জীবনের কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরে ফিল্মফেয়ার-কে বলেন, ‘আমি চালের বস্তায়, নোংরা বালিশে, নোংরা গদিতে ঘুমিয়েছি, যেখানে আমার আগে বহু নারী ঘুমিয়েছিল, কোটিপতিদের বিনোদনের অংশ হয়ে। আমি সেই সব অভিজ্ঞতা লিখে রাখতে চেয়েছিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল, বলিউডে আমার জন্যও একটি জায়গা আছে।’

২০০৬ সালে মোহিত সুরির ‘কলিযুগ’-এর কয়েকটি দৃশ্য লেখার মধ্য দিয়ে লেখকজীবনের প্রথম অধ্যায় শুরু করেন শাগুফতা রফিক। সেই দৃশ্যগুলো ছিল তাঁর নিজের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি— ব্যথা, প্রেম, আর বাস্তবতার নির্মম ছায়া। এর পর তিনি একে একে লিখেছেন ‘ওহ লামহে’, ‘আওয়ারাপন’, ‘রাজ ২’, ‘মার্ডার ২’ এবং ‘আশিকি ২’। প্রতিটি ছবিতে ফুটে উঠেছে যন্ত্রণার সৌন্দর্য, প্রেমের জটিলতা, আর জীবনের কঠিন সত্য।

শাগুফতার জীবন নিজেই যেন এক সিনেমার চিত্রনাট্য, যেখানে প্রতিটি অধ্যায়ে আছে বেদনার ছায়া, প্রেমের আলো, সংগ্রামের গতি, আর মুক্তির সম্ভাবনা। তাঁর কলমে যন্ত্রণা পেয়েছে ভাষা, আর বলিউড পেয়েছে এক অনন্য চিত্রনাট্যকার। তাঁর গল্প আমাদের শেখায়, অন্ধকার যত গভীরই হোক, আলো খুঁজে পাওয়া যায়, যদি কেউ নিজের গল্প বলার সাহস দেখায়।

Lading . . .