বুসানের পর্দায় আসামের গল্প, আছে বাংলাদেশি সংযোগ
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট, ২০২৫

আগামী ১৭ থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় শুরু হচ্ছে ৩০তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (BIFF)। গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসবের ভিশন এশিয়া বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে অসমীয় ভাষার চলচ্চিত্র ‘কক কক ককক’।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সিনেমাটির প্রযোজক হিসেবে যুক্ত আছেন বাংলাদেশের তরুণ চলচ্চিত্রকর্মী এস এম নাজমুল হক।
নির্মাতা মহার্শি তুহিন কাশ্যপ পরিচালিত ছবিটি মূলত কলকাতার সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (SRFTI)-এর ফাইনাল ডিসার্টেশন ফিল্ম হিসেবে নির্মিত। নাজমুল ও কাশ্যপ—দুজনেই এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। শেষ বর্ষের প্রকল্প হিসেবে সহপাঠীদের সমন্বয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে।
এসআরএফটিআই মাঝারি দৈর্ঘ্যের ফিল্ম হিসেবে অর্থায়ন করলেও, তারা এটিকে পূর্ণদৈর্ঘ্যে রূপ দেন। নাজমুলের ভাষায়, “এসআরএফটিআইয়ের কোনো ফাইনাল ডিসার্টেশন ফিল্ম এর আগে পূর্ণদৈর্ঘ্যে কেউ রূপ দেয়নি, কিংবা আন্তর্জাতিক উৎসবে নির্বাচিত হওয়ার কথা শুনেনি। তবে এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৪০ মিনিটের প্রডাকশন মর্যাপূর্ণ কান চলচ্চিত্র উৎসবেও গিয়েছে।”
‘কক কক ককক’ একটি ম্যাজিক রিয়ালিস্ট হরর ড্রামা। ছবির প্রেক্ষাপট নির্মাতার নিজ শহর গুয়াহাটি, আসাম। এখানে দেখানো হয়েছে অভিবাসীদের পরিচয় সংকট, বেঁচে থাকার লড়াই আর নগরজীবনের রূক্ষ অথচ সৌন্দর্যমণ্ডিত চিত্র।
চলচ্চিত্রটিতে অংশ নিয়েছেন অভিনেতা রাজু রায়, এসথার জামা পাউলিনো কেনি, রূপজ্যোতি দাস, মানিক রায়, মনোজ গগৈ, সিদ্ধার্থ মুখার্জীসহ আরও অনেকে। সম্পাদনায় ছিলেন সাদাং আরাঙহাম এবং সাউন্ড ডিজাইন ও মিক্সিংয়ে কাজ করেছেন অর্ণব বরা।
চলচ্চিত্রটির প্রযোজক হিসেবে যুক্ত আছেন বাংলাদেশের এস এম নাজমুল হক। এছাড়াও টিমে ছিলেন বাংলাদেশের তরুণ চিত্রগ্রাহক শিংখানু মারমা। নাজমুল বলেন, “এই চলচ্চিত্র জন্ম হয়েছে স্মৃতি আর ভয় থেকে, আশা আর প্রতিবাদ থেকে। এটি উৎসর্গ করা হয়েছে সেইসব মানুষদের, যারা একসময় বৈচিত্র্যকে জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। আজ পরিচয়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ ও স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই এই সিনেমা একসাথে দলিল ও প্রতিরোধ হয়ে উঠুক।”
বাংলাদেশি প্রযোজক হিসেবে নিজের অবস্থান নিয়ে তিনি আরও বলেন, “এই গল্পগুলো আমার কাছে অচেনা নয়। সীমান্ত পেরিয়ে এগুলো প্রতিধ্বনিত হয় অভিবাসন, পরিচয় আর স্থানচ্যুতির ইতিহাসের সাথে। আমি বিশ্বাস করি, সিনেমা ভঙ্গুরতাকে সংরক্ষণ করতে পারে এবং ভুলে যাওয়া সত্যগুলোকে মনে করিয়ে দিতে পারে।”
বুসান উৎসব থেকে ইতিমধ্যেই আমন্ত্রণপত্র পেয়েছে টিম। ভিসা সংক্রান্ত কোনো জটিলতা না হলে নাজমুল হকও ৩০তম বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেবেন।
বুসানের ভিশন এশিয়া বিভাগ মূলত কোরিয়া ও এশিয়ার নবীন নির্মাতাদের সাহসী ও পরীক্ষাধর্মী কাজগুলোকে সামনে আনে। ভবিষ্যতের এশিয়ান সিনেমার দিকনির্দেশনা নির্ধারণে এই প্ল্যাটফর্মকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।