দিলজিতের ‘পাঞ্জাব ৯৫’ সিনেমাটি কেন আটকে রেখেছে ভারত সরকার?
প্রকাশ: ১৫ জুন, ২০২৫
-684126d26482f.jpg)
গত দু’বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে ভারতীয় পপতারকা দিলজিৎ দোসাঞ্জ অভিনীত ‘পাঞ্জাব ৯৫’ সিনেমাটি। সেন্সর বোর্ড সিনেমাটিতে ১২৭টি পরিবর্তন চায়। অর্থাৎ যাদের অনুমতি ছাড়া ভারতে কোনো সিনেমা রিলিজ করে না, সেই সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন বলছে, পরিচালক হানি ত্রেহান ‘পাঞ্জাব ৯৫’-এর যে ভার্সনটি নিয়ে তাদের কাছে এসেছেন, তার ১২৭টি জায়গায় পরিবর্তন প্রয়োজন।
এই তালিকায় রয়েছে: মূল চরিত্র যশবন্ত সিং খালরার নাম পাল্টাতে হবে, ভারতীয় পতাকা দেখানো যাবে না, ‘পাঞ্জাব পুলিশ’-এর নাম নেওয়া যাবে না। ছবির নামও পাল্টাতে হবে বলে জানিয়েছে সেন্সর বোর্ড। ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর একটি প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে পরিচালক হানি প্রশ্ন রেখেছেন, ‘তাহলে আর কী বাকি থাকল?’
কী এমন রয়েছে ‘পাঞ্জাব ৯৫’-এ?
‘পাঞ্জাব ৯৫’-এ দিলজিৎ যশবন্ত সিং খালরার ভূমিকায় রয়েছেন। নাইন্টিজে যশবন্ত পাঞ্জাবের একটি ব্যাংকের অধিকর্তা ছিলেন। সমাজকর্মীও ছিলেন তিনি। নিজের এক পরিচিতের পরিবারের সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা নিয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে যশবন্ত বড় একটা ষড়যন্ত্র খুঁজে পান। তার অভিযোগ ছিল, ৮-এর দশক ধরে পাঞ্জাব পুলিশ সন্ত্রাসবাদী নিধনের নামে প্রায় ২৫,০০০ নির্দোষ শিখ যুবককে মেরে গায়েব করে দেয়।
ওই সময় পাঞ্জাবে একটি আন্দোলন শুরু হয়, যার মতাদর্শীরা পাঞ্জাবের স্বাধিকারের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেন। এই আন্দোলনের মূল দাবি ছিল, পাঞ্জাবকে একটি পৃথক রাষ্ট্র ‘খালিস্তান’ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে শিখরা একটি সার্বভৌম জাতি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারবে।
১৯৮৪-র অপারেশন ব্লুস্টারে ভারতীয় সেনা অমৃতসরের গোল্ডেন টেম্পল চত্বরে প্রচুর খালিস্তানিকে হত্যা করে। এই ঘটনার কিছু মাস পর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে তার শিখ নিরাপত্তারক্ষীরা গুলি করে হত্যা করে। দেশ জুড়ে শুরু হয় যায় শিখ নিধন। পাঞ্জাব পুলিশ খালিস্তানি আন্দোলন শেষ করার উদ্যোগ নেয়।
এই সময় পাঞ্জাবে পুলিশ বেআইনিভাবে যে সব অত্যাচার আর খুন করে, তা নিয়েই যশবন্ত শোরগোল করতে শুরু করেন। তদন্ত করে যশবন্ত জানতে পেরেছিলেন, পাঞ্জাব পুলিশ সাধারণ মানুষ ছাড়াও নিজেদেরই ২,০০০ কর্মীকে হত্যা করে। এই মৃতদের পরিবার আজ পর্যন্ত জানতে পারেনি তাদের মেরে ফেলে কোথায় পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ছবিতে সুভিন্দর ভিকি এক অত্যাচারী পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় রয়েছেন। অর্জুন রামপাল এক উকিলের চরিত্রে রয়েছেন।
১৯৯৫-এ অমৃতসরে শেষ দেখা যায় যশবন্তকে। সাক্ষী অনুযায়ী, যশবন্ত তার গাড়ি পরিস্কার করছিলেন। সেই সময় পুলিশ এসে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তার ওপর পাঞ্জাব পুলিশ ভয়াবহ নিপীড়ন চালায়। ২০০৫-এ যশবন্তকে কিডন্যাপ করে মারার জন্য ৬ জন পুলিশকর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করে পাটিয়ালার আদালত। তাদের সকলকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
‘পাঞ্জাব ৯৫’-এর আনুষ্ঠানিক স্ক্রিনিংয়ের কথা ছিল ২০২৩-এর টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভারত সরকার হানি এবং তার প্রযোজক আরএসভিপি-কে সিনেমাটি দেখাতে বারণ করে। তখন হানি সিনেমাটির মুক্তির জন্য মুম্বাই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সরকারের তরফে তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাদেরকে এই মামলা তুলে নিতে হবে।
এ দিকে দু’বছর আগে সেন্সর বোর্ড প্রথমে ২১টি কাট চেয়েছিল, এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ১২৭। দিলজিৎ আগেই ইনস্টাগ্রামে জানিয়েছেন, তিনি কোনো রকম কেটেছেঁটে ‘পাঞ্জাব ৯৫’ দর্শকের সামনে আনতে চান না। হানিও সহমত। যশবন্তের পরিবারও সেন্সর বোর্ডের বিরোধিতা করেছে। শিরোমনি গুরদ্বারা পরবন্ধক কমিটির মতো পাঞ্জাবি সংগঠনগুলোও ছবির পাশে দাঁড়িয়েছে, তাও ছবিটির ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে হানি বলেছেন, ‘আমি খুবই হতাশ… যিনি এত মানুষের জন্য নির্ভীকভাবে লড়াই করেছিলেন, তার পাশে যদি আমি ঠিকভাবে দাঁড়াতে না পারি, তাহলে তার ওপর আমার সিনেমা বানানোর যোগ্যতা নেই… ৩০ বছর পর, মনে হচ্ছে যশবন্ত সিং খালরাকে আবার অপহরণ করা হয়েছে।’