প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিশ্বকাপ ইতিহাসে জার্মানি সবসময়ই ছিল মহীরূহ এক শক্তি। তবে ২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই যেন পথ হারিয়েছে দলটি। আর ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তাদের শুরুটা যেন অন্ধকারে হাঁটার মতো। স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলের পরাজয়ের পর শুধু সমর্থকরাই নয়, দেশের ভেতরে-বাইরে বিশ্লেষকরাও প্রশ্ন তুলছেন, কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে জার্মান ফুটবলের আধিপত্য?
আর ঠিক এমন এক সময়ে রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক মিডফিল্ডার টনি ক্রুস তার মন্তব্যে পুরো বিষয়টিকে দিয়েছেন নতুন এক মাত্রা। তার ভাষায়, জার্মানি এখন 'আলোকবর্ষ পিছিয়ে'। অথচ চারবার বিশ্বকাপই জিতেছে এই জার্মানি। ব্রাজিলের মতো দলকে তাদেরই মাঠে সাত গোলের মালা পরিয়েছিল দলটি।
স্লোভাকিয়ার বিপক্ষে হারের পর দলের মানসিকতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন জার্মান কোচ জুলিয়ান নাগেলসম্যান। তার মতে, 'আমাদের মধ্যে কোনো আবেগ ছিল না। আমরা হারিয়েছি যা কিছু হারানোর ছিল।' নাগেলসম্যান এতটাই হতাশ ছিলেন যে ইঙ্গিত দেন ভবিষ্যতে প্রতিভার চেয়ে প্রতিশ্রুতিকে অগ্রাধিকার দেবেন।
কিন্তু ক্রুস ভিন্ন সুরে কথা বলেন। তার মতে, আসল সমস্যা মানসিকতার নয়, বরং গুণগত মান, আত্মবিশ্বাস আর মাঠে প্রকৃত নেতার অনুপস্থিতি। 'এখানে দৃঢ়তার অভাব আছে, আত্ম-উপলব্ধির ঘাটতি আছে। নেই সেই দুই-তিনজন খেলোয়াড়, যাদের ওপর বাকিরা চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারে, যারা মাঠে নামলেই বলে দেবে, আমরা এই পরিস্থিতি সামলে নেব।'
মাঠে স্বয়ংক্রিয় সমন্বয় আর দলগত সংহতির অভাব জার্মানির পারফরম্যান্সকে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে মনে করে ক্রুস, 'আমি কোনোদিন বলব না যে কেউ খেলতে চায় না। কিন্তু আত্মবিশ্বাস ও খেলার যান্ত্রিক সমঝোতার ঘাটতিই আমাদের সীমাবদ্ধ করছে।'
সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল ক্রুসের খোলামেলা স্বীকারোক্তি, 'এই মুহূর্তে আমরা বিশ্বকাপ নিয়ে আলোচনার উপযুক্ত দল নই। আমরা এখন আলোকবর্ষ পিছিয়ে আছি, আর সোজা কথায় আমরা ভালো নই।'
তবে হতাশার মধ্যেও আশার আলো দেখালেন ক্রুস। রিয়াল মাদ্রিদে নিজের অভিজ্ঞতার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, 'অনেক সময় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শুনেছি আমরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার ফেভারিট নই। কিন্তু মে মাসে পরিস্থিতি ছিল একেবারেই ভিন্ন।' তার এই মন্তব্যে বোঝা গেল, জার্মানি এখন খারাপ অবস্থায় থাকলেও সময় ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
২০২৬ সালের বিশ্বকাপ বসবে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায়। জার্মানি যদি সেখানে নিজেদের হারানো জৌলুশ ফিরে পেতে চায়, তবে তাদেরকে এখন থেকেই নতুন নেতৃত্ব, আত্মবিশ্বাস ও দলীয় সমন্বয়ের খোঁজে নামতে হবে। নাহলে চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েও ক্রুসের সেই 'আলোকবর্ষ পিছিয়ে' থাকার আক্ষেপই থেকে যাবে ফুটবল বিশ্বের আলোচনায়।
আরও পড়ুন