চামড়াবিহীন জুতা কারখানায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্রয়াদেশ বাড়ছে
প্রকাশ: ২১ আগস্ট, ২০২৫
পাল্টা শুল্ক কার্যকরের পর দেশের চামড়াবিহীন জুতা কারখানায় যুক্তরাষ্ট্রের স্থগিত হওয়া ক্রয়াদেশ ফিরতে শুরু করেছে। আবার বাড়তি ক্রয়াদেশ দিতে কথাবার্তাও শুরু করেছে অনেক মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি করছে, তারাই শুরুতে ক্রয়াদেশ পাচ্ছে।
দেশের অধিকাংশ চামড়াবিহীন জুতা কারখানা তাদের উৎপাদিত জুতা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশে রপ্তানি করে থাকে। তবে পাল্টা শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের হিস্যা দ্রুত বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা।
একাধিক রপ্তানিকারক বলেন, কিছু মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান গত বছর থেকে বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আবার পুরোনো ক্রেতারাও ক্রয়াদেশ বাড়াতে চাচ্ছেন।
এদিকে পাল্টা শুল্কের ডামাডোলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাসে; অর্থাৎ জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৩৩ লাখ মার্কিন ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। গত বছরের জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছিল ১০ লাখ ডলারের চামড়াবিহীন জুতা। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে ৫২ কোটি ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ১ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫১ শতাংশের বেশি।
ন্যাশনাল পলিমার (এনপলি) গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এনপলি ফুটওয়্যারের মাসে ৩ লাখ ৫০ হাজার জোড়া চামড়াবিহীন জুতা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তাদের কারখানায় কাজ করেন সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি করে। তাদের মোট রপ্তানির ৮ থেকে ৯ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
চলতি বছর কয়েকটি নতুন মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ শুরু করেছে এনপলি ফুটওয়্যার। প্রাথমিক কাজ শেষে জুতা রপ্তানি করে তারা। সেই ক্রেতারা আরও বেশি ক্রয়াদেশ দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। তবে বাড়তি শুল্ক আরোপের পর সবাই চুপচাপ হয়ে যান। ৮০ হাজার জোড়া জুতার একটি ক্রয়াদেশও স্থগিত হয়ে যায়। তবে চলতি মাসে সেই ক্রয়াদেশ আবার ফিরেছে। অন্য ক্রেতারাও আলোচনা শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে এনপলি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রিয়াদ মাহমুদ প্রথম আলো কে বলেন, পাল্টা শুল্ক চূড়ান্ত হওয়ার পর ক্রয়াদেশ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন মার্কিন ক্রেতারা। গত মাস পর্যন্ত তাঁরা প্রতিশ্রুত ক্রয়াদেশের ২০ শতাংশ দিলেও এখন শতভাগ দিচ্ছেন। এ জন্য আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরের ক্রয়াদেশ বাড়তে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি বড় অংশই ইইউর বাজারে। মার্কিন ক্রয়াদেশ পেলে সেখান থেকে আমরা কিছুটা সরে আসব। এতে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে বলে আশা করছি।’
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) তথ্যানুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলারের জুতা আমদানি করে। তার মধ্যে চামড়াবিহীন জুতা ছিল ১২ বিলিয়ন ডলারের।
এই বাজারে চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানিকারক শীর্ষ সাত দেশ হচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া চামড়াবিহীন জুতার অর্ধেক (৬ বিলিয়ন ডলার) চীন থেকে গেছে। ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ৫ বিলিয়ন ডলারে চামড়াবিহীন জুতা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনামের মতো বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক সংশোধন করে ২০ শতাংশ করেন। তার বিপরীতে চীনা পণ্যে এখন শুল্কের পরিমাণ ৩০ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার পণ্যে ১৯ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। তবে ভারতের পণ্যে শুল্কের হার ২৫ শতাংশ, যা প্রতিযোগী দেশের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। শুধু তা–ই নয়, রাশিয়ার জ্বালানি কেনার ‘অপরাধে’ ভারতের পণ্যে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। নরসিংদীর ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে ২০২১ সালে রপ্তানিমুখী চামড়াবিহীন জুতা উৎপাদনের কারখানা গড়ে তুলে আরএফএল গ্রুপ। পরবর্তী সময়ে রংপুর, রাজশাহী ও ঈশ্বরদী আরও তিনটি কারখানা চালু করে তারা। গত অর্থবছর ৫ কোটি ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি করেছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এই গ্রুপ।
আরএফএল গ্রুপ শুরু থেকেই ইইউর বাজারের জন্য জুতা উৎপাদন করছে। তবে বর্তমানে তারা মার্কিন জুতার ব্র্যান্ড স্কেয়ার্স জন্যও জুতা উৎপাদন করছে। আগামী মাস থেকে সেই জুতা রপ্তানিও শুরু হবে। আরএফএলের জন্য এটি হবে প্রথম মার্কিন কোনো ব্র্যান্ডের জন্য জুতা রপ্তানি।
গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আর এন পাল প্রথম আলো কে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানিতে শীর্ষ তিন দেশ হচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া। চীনের পাল্টা শুল্ক বেশি হওয়ায় সেখান থেকে ব্যবসা আমাদের দেশে আসছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আশা করছি যুক্তরাষ্ট্রে চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানিতে আমাদের বাজার হিস্যা বাড়বে।’