Advertisement

সৌদি আরবের একাশিয়ায় কোরবানির পশুর হাটে গিয়ে যা জানলাম

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৯ জুন, ২০২৫

এখান থেকে হাজিরা খাসি কিনে কোরবানির জন্য রেখে যাচ্ছেনছবি: লেখক
এখান থেকে হাজিরা খাসি কিনে কোরবানির জন্য রেখে যাচ্ছেনছবি: লেখক

জায়গাটির নাম একাশিয়া। সৌদি আরবের মক্কায় হারাম শরিফ থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে। তিন দিকে উঁচু পাহাড়। পাদদেশে বিস্তীর্ণ এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল আকারের অনেক ছাউনি। পবিত্র ঈদুল আজহা ও হজ উপলক্ষে এখানে রাখা আছে অনেক খাসি। বিক্রির পাশাপাশি কোরবানি দেওয়ার জন্য নেওয়া ব্যাপক প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। সৌদি আরব সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্ধারিত স্থানের বাইরে কেউ কোরবানি দিতে পারেন না। নির্ধারিত জায়গার বাইরে যদি কেউ কোরবানি দেন, তার জন্য গুনতে হয় মোটা অঙ্কের জরিমানাসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। আর তাই যাঁরা কোরবানি দেন, বেশির ভাগই নিজেরা কাটাকুটির ঝামেলায় না গিয়ে সরাসরি মাংস নিয়ে আসেন। আগেই পশু পছন্দ করে কিনে রাখা হয়। এরপর কোরবানি হয়ে গেলে মাংস প্রক্রিয়াজাত শেষে নির্ধারিত সময়ে সেটা পৌঁছে যায় গ্রাহকের হাতে।

একাশিয়ায় খাসি বিক্রি ও কোরবানি দেওয়ার জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেই প্রক্রিয়া দেখতেই ১ জুন বিকেলে গিয়েছিলাম সেখানে। আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী, বাংলাদেশি তরুণ মো. রুবেল। অনেক বছর ধরে তিনি এ দেশে আছেন। তাঁর সঙ্গে পরিচয় ঢাকার ধানমন্ডির মসজিদ-উত্ তাকওয়ার খতিব মুফতি মাওলানা সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে। এই সফরে আমরা আছি একসঙ্গে। ঢুকতেই দেখা গেল ইংরেজি ‘এল’ আকারের লম্বা দুটি ছাউনি। মো. রুবেল জানান, এখানেই সব খাসি কোরবানি দেওয়ার পাশাপাশি সেসব কেটেকুটে পরিষ্কার করে রান্নার উপযোগী করা হবে। সাধারণত যেসব হাজি ১০ জিলহজ তারিখে নিজেরা খাসি কোরবানি দিতে চান, মূলত একাশিয়ার এই বাজার তাঁদের জন্য। হাজিদের মধ্যে অনেকেই কিংবা তাঁদের প্রতিনিধিরা এখানে এসে খাসি পছন্দ করে কোরবানির জন্য রেখে যাচ্ছেন। ঠিক সময়ে খাসির কাটাকুটি সম্পন্ন করার জন্যও আছে পর্যাপ্ত লোকবল।

এবার হাজিদের কাছ থেকে সরকারিভাবে কোরবানির জন্য নির্ধারিত ব্যাংকের মাধ্যমে ৭১৫ রিয়াল করে নিচ্ছে সৌদি আরব সরকার। একাশিয়ার এই বাজারে খাসির সর্বনিম্ন দাম ৫০০ রিয়াল। তাই অনেকে আলাদাভাবে এখানে এসে খাসি কোরবানি করেন। এসব তথ্য জানতে জানতেই একটু সামনে এলাম। এখানে দেখলাম, বিশাল আকারের অনেক ছাউনি। এসব ছাউনির নিচে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে নানা জাতের খাসি। মো. রুবেল জানালেন, একাশিয়ার এই পুরো এলাকা স্থানীয় প্রশাসন থেকে বর্গা নিয়েছে সৌদি আরবের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের কাছ থেকে এই জায়গা ভাড়া নিয়েছেন রুবেলরা। ঈদ উপলক্ষে ১৫ দিনের জন্য ভাড়া হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিকে দিতে হয়েছে ৪০ হাজার রিয়াল। হাজিদের পাশাপাশি এখানে স্থানীয় সৌদি নাগরিকেরাও খাসি কিনে রেখে যাচ্ছেন। ঈদের দিন নির্ধারিত সময়ে এসে মাংস নিয়ে যাবেন।
একাশিয়ায় মো. রুবেলের ব্যবসায়িক অংশীদার দরবেশের সঙ্গেও আলাপ হলো। দীর্ঘদিন বিদেশে পড়াশোনা করে আসা সৌদি তরুণ দরবেশ। তিনি জানান, এখন প্রায় প্রতি রাতে এখানে খাসি আসছে। আনা হচ্ছে সুদান থেকে। তাঁর কাছেই জানলাম, সৌদি আরবে হজ উপলক্ষে ইয়েমেন থেকেও খাসি আসে। তবে একাশিয়ার এই বাজারের বেশির ভাগ খাসি সুদান থেকে এসেছে।

রুবেল জানালেন, এবার পবিত্র ঈদুল আজহা ও হজ উপলক্ষে এখানে তাঁরা ৫ হাজার খাসি বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন। একাশিয়ার এই বাজারে রুবেল ও দরবেশের মতো আরও অনেক ব্যবসায়ী আছেন। আগামী ১০ জিলহজ এখানে কমবেশি ৮০ হাজার খাসি কোরবানি দেওয়া হবে। আর সব খাসি কেটেকুটে পরিষ্কার করতে পুরো এক দিন সময় লাগবে।
এখানে খাসির দাম ৫০০ রিয়াল থেকে শুরু করে দেড় হাজার রিয়াল পর্যন্ত। তবে ৫০০-৭৫০ রিয়াল দামের খাসির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এরই মধ্যে দেখলাম খাসি কেনার জন্য বেশ ভিড় হচ্ছে একাশিয়ায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা আসছেন। একাশিয়ার এই পশু বিক্রির উদ্যোগটি বেশ পুরোনো। তবে রুবেলরা সেখানে যুক্ত হয়েছেন তিন বছর আগে। মাংস কাটার পর কেউ হয়তো নিজেরা রান্নার জন্য কিছু অংশ নেন। তবে বেশির ভাগ মাংস দেওয়া হয় বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের। ঈদের দিন শ্রমিকেরা এসে মাংস নিয়ে যান। একটা অংশ দেওয়া হয় দরিদ্রদেরও।
আমরা যখন বেরিয়ে আসি, তখন মাগরিবের আজান শোনা যাচ্ছে। আর থাকা হলো না, বেরিয়ে পড়লাম নিজেদের গন্তব্যে।

Lading . . .