Advertisement

সেফটিপিনে এই লুপ বা ছিদ্র কেন থাকে, জানেন?

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১১ আগস্ট, ২০২৫

এই লুপেই লুকিয়ে আছে সেফটিপিনের আসল ক্ষমতার রহস্যছবি: ফ্রিপিক
এই লুপেই লুকিয়ে আছে সেফটিপিনের আসল ক্ষমতার রহস্যছবি: ফ্রিপিক

পোশাক আটকানোর প্রাচীন এক যন্ত্রের নাম টগল পিন। ধারণা করা হয়, এটি ফিলিস্তিনে নিয়ে গিয়েছিল প্রাচীন মিসরের শাসক যাযাবর গোষ্ঠী হিকসসেরা। টগল পিনের একপ্রান্তে থাকত একটি ছোট লুপ। লুপের মধ্যে দড়ি বা সুতা ঢুকিয়ে পিনের এক প্রান্ত পোশাকে বাঁধা হতো, আর অন্য প্রান্ত আটকে দেওয়া হতো পোশাকের আরেক অংশ ভেদ করে।

আরেক ধরনের প্রাচীন যন্ত্র হলো ফিবুলা, যা দেখতে অনেকটা ব্রোচের মতো। গ্রিসের পেলোপনেশাস অঞ্চলে মাইসেনীয়রা (খ্রিষ্টপূর্ব যুগের প্রভাবশালী গ্রিক সভ্যতা) খ্রিষ্টপূর্ব ১৪–১৩ শতকের মধ্যে এটি তৈরি করেছিল। ব্যবহারে অনেকটা সেফটিপিনের মতো হওয়ায় ফিবুলাকে সেফটিপিনের প্রাচীন পূর্বসূরি বলা হয়। তখন গ্রিক নারী-পুরুষ উভয়েই টিউনিক (ঢিলেঢালা পোশাকবিশেষ) আটকাতে ফিবুলা ব্যবহার করত।

আধুনিক সেফটিপিনের উদ্ভাবক মার্কিন যন্ত্রপ্রকৌশলী ওয়াল্টার হান্ট। ১৮৪৯ সালে তাঁর তৈরি করা সেফটিপিনে এমন একটি কীলক (ওপরের লুপ) ছিল, যা সুচালো মাথা ঢেকে রাখত এবং পিন খুলে যাওয়ার ঝুঁকি কমাত। হান্টের নকশা করা সেফটিপিনের নিচের দিকে বাঁকানো অংশে ছিল একটি লুপ, যা স্প্রিংয়ের মতো কাজ করে পিনটিকে জায়গায় ধরে রাখে।

ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের চার্লস রাউলিও ১৮৪৯ সালের অক্টোবরে আলাদাভাবে প্রায় একই ধরনের একটি সেফটিপিনের পেটেন্ট করিয়েছিলেন, তবে ওই পিন এখন আর তৈরি হয় না।

হান্ট এই উদ্ভাবন করেছিলেন তাঁর এক বন্ধুর কাছে ১৫ ডলারের ঋণ শোধ করার জন্য। প্রায় ৮ ইঞ্চি লম্বা পিতলের তার ব্যবহার করে মাঝখানে একটি লুপ বানান হান্ট, যাতে পিন ছেড়ে দিলে আবার খুলে যেতে পারে। আর ওপরে কীলকটি তৈরি করেছিলেন, যাতে ব্যবহারকারীরা পিনের খোঁচা না খায়।

হান্ট সেফটিপিনের পেটেন্ট (পেটেন্ট নম্বর #৬,২৮১) পান ১৮৪৯ সালের ১০ এপ্রিল। পেটেন্ট পাওয়ার পর হান্ট সেটি বিক্রি করে দেন ডব্লিউ আর গ্রেস অ্যান্ড কোম্পানির কাছে। কত দামে, জানেন? মাত্র ৪০০ ডলারে (এখনকার হিসাবে প্রায় ১৫ হাজার ডলার)।

ওই টাকা থেকে ১৫ ডলার ঋণ শোধ করে বাকি ৩৮৫ ডলার নিজের কাছে রাখেন তিনি। পরবর্তী বছরগুলোতে ডব্লিউ আর গ্রেস অ্যান্ড কোম্পানি ওই উদ্ভাবন থেকে মুনাফা তোলে লাখ লাখ ডলার।

আগেই বলেছি, সেফটিপিনে লুপ দুটি—একটা ওপরে, যেখানে পিন আটকে যায়; আরেকটা নিচের দিকে, কয়েলের ভেতরে। আর হ্যাঁ, দুটিরই কাজ আছে, শুধু নকশার খাতিরে তৈরি করা হয়নি লুপ দুটি।

ওপরে যে লুপটি থাকে, সেটির কারণে খোলা ও আটকানোর সময় পিনটা সহজে বাঁকানো যায়। এই লুপ দিয়েই পিনের ধারালো মাথাটা ওপরের ধাতব কভার বা শিল্ডের ভেতরে আটকানো এবং খোলা হয়। আর নিচের লুপটি স্প্রিং মেকানিজমের চমৎকার উদাহরণ।

দেখতে মামুলি মনে হলেও ওই ছোট্ট ধাতব প্যাঁচটিতেই আছে অনেক বুদ্ধিদীপ্ত কারুকাজ। নিচের লুপটি সেই জায়গা, যেখানে সেফটিপিন তৈরির সময় তারের মাথা আটকে রাখা হয়, পরে যেটা শক্ত করে পেঁচিয়ে বানানো হয় কয়েল।

কয়েল তৈরি হয়ে গেলেও সেই লুপের কাজ এখানেই কিন্তু শেষ নয়; এটা স্প্রিংয়ের টানটান ভাব ধরে রাখে। এই টানই সেফটিপিনকে খোলা ও আটকে রাখার ক্ষমতা দেয়। নাহলে সেটা হয়ে যেত কেবলই একটা ধারালো তার। আর এই বুদ্ধিদীপ্ত নকশার কারণেই সেফটিপিন আজও অপরিহার্য।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

বিশ্বের কোন দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ উড়োজাহাজে যাতায়াত করে বান্দরবানের গহিনে একটি কুকুর যেভাবে গাইড হয়ে আমাকে পথ দেখাল

Lading . . .