Advertisement

ভিটামিন বি৬-এর ঘাটতি কী করে বুঝবেন এবং মেটাবেন যেভাবে

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৭ জুলাই, ২০২৫

ডায়াবেটিস রোগীদেরও ভিটামিন বি৬ কমে যেতে পারেছবি: পেক্সেলস
ডায়াবেটিস রোগীদেরও ভিটামিন বি৬ কমে যেতে পারেছবি: পেক্সেলস

ভিটামিন বি৬ বা পাইরিডক্সিন, পানিতে দ্রবণীয় এমন একটি ভিটামিন, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের বিপাকক্রিয়া, স্নায়ুর কাজ, হরমোনের তারতম্য ঠিক রাখা, রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে এই ভিটামিন প্রয়োজন হয়। ভিটামিন বি৬ অনেক কমে যাওয়া কিছুটা দুর্লভ, কিন্তু সামান্য কমে গেলেই বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।

ভিটামিন বি৬ কমে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ কিছু ওষুধ। এর মধ্যে আছে আসসোনিয়াজাইড, যা যক্ষ্মারোগের চিকিত্সায় দেওয়া হয়, পেনিসিলামিন, হাইড্রালাজিন, লেভোডোপা-কারবিডোপা–জাতীয় ওষুধ।

কিছু অসুখেও বি৬–এর সিনথেসিস কমে যায়। যেমন অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, গর্ভাবস্থা, হার্টের অসুখ, ব্রেস্ট ক্যানসার, রক্তের ক্যানসার, শিকল সেল ডিজিজ, গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত বমি।

অতিরিক্ত মদ্যপানেও ভিটামিন বি৬ কমে যায়।

ভিটামিন বি৬ অল্প কমে গেলেই বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। এর মধ্যে আছে—
চামড়ায় র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি: নাক ও মুখের চারদিকে চামড়া ফেটে যায় বা ফুসকুড়ি ওঠে, খুব চুলকায়। বেশি হলে একে সেবোরোইক ডার্মাটাইটিস বলে।

ক্র্যাক লিপ: ঠোঁটের চারপাশ ফেটে যায় ও জিভ লাল হয়ে ফুলে যায়। বি৬–এর সঙ্গে যদি বি১২ ও ফলেট কমে যায়, তাহলে এটি মারাত্মক রূপ নিতে পারে।

মুড চেঞ্জ: ভিটামিন বি৬ সেরোটোনিন ও ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার তৈরিতে সাহায্য করে। তাই বি৬ কমে গেলে এই হ্যাপি হরমোনগুলোও কমে যায়। ফলে অবসাদ, বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা, মেজাজ খারাপসহ বিভিন্ন রকম মানসিক উপসর্গ দেখা দেয়।

নিউরোপ্যাথি: বি৬–এর অভাবে সবচেয়ে বেশি যেটা দেখা দেয়, সেটা হলো হাত-পা ঝিমঝিম করা, অবশ লাগা, জ্বালাপোড়া। অনেকের হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা হয়, যাকে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি বলে।

রক্তশূন্যতা: বি৬ হিমোগ্লোবিন তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই এই ভিটামিনের অভাব হলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। ফলে দুর্বল লাগা, কাজে মনোযোগ দিতে না পারা, মাথা ঘুরানোসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।

অনিদ্রা: বি৬ মেলাটোনিন তৈরিতে সাহায্য করে, যা ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে। তাই বি৬–এর অভাবে রোগী অনিদ্রায় ভোগে।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা: ভিটামিন বি৬–এর অভাবে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। কারণ, বি৬ অ্যান্টিবডি তৈরি করে।

শিশুর খিচুনি: নবজাতকের বি৬–এর অভাব হলে খিচুনি হয়, যা অত্যন্ত মারাত্মক।
এ ছাড়া এই ভিটামিনের অভাবে রক্তনালি ও নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

শিশুদের জন্য প্রতিদিন ০.৫-১ মিলিগ্রাম আর বড়দের জন্য ১.৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬ দরকার হয়। ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের জন্য ১.৭ মিলিগ্রাম ও নারীদের জন্য ১.৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬ প্রয়োজন।
অনেক খাবারেই ভিটামিন বি৬ রয়েছে, সেগুলো খেয়ে অভাব পূরণ করা যাবে। দুধ, ডিম, মুরগির মাংস, মাছ, কলা, লাল চাল, ছোলা, গোটা শস্য, মটরশুঁটি, পালং শাক, সয়াবিন ইত্যাদি খাবার নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত তাপে বেশিক্ষণ রান্না করলে ভিটামিন বি৬ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ভিটামিন বি৬ শরীরে বেশি হয়ে গেলে টক্সিসিটি হয়। তখন বমি, বমিবমি ভাব, রোদে যেতে না পারা, দুর্বল লাগাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন শাকসবজি, মাছ-মাংস ও ডাল–জাতীয় খাবার খেলে সাধারণত বি৬–এর অভাব হয় না। তবে যে ওষুধগুলো বি৬–এর পরিমাণ কমায়, সেগুলো খেলে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।

Lading . . .