প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

ইমারজেন্সি পিলের দুটি ধরন। দুই ধরনের পিল দুইভাবে কাজ করে। এই দুটির ব্যবহারবিধিতেও কিছুটা পার্থক্য আছে। তবে এসব পিলের কোনোটিই শতভাগ কার্যকর নয়। প্রায়ই ব্যবহার করাও নিরাপদ নয়। ইমারজেন্সি পিলের নানা দিক সম্পর্কে বলছিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. আনিকা তাবাসসুম ।
১২–২৪ ঘণ্টার মধ্যে খেলে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ইমারজেন্সি পিল কার্যকর হতে পারে। তবে কিছু গবেষণার ফলাফল বলছে, ইমারজেন্সি পিল ৫০–৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর। এর কারণ হলো, যদি এমন সময় শারীরিক সম্পর্ক হয়ে থাকে, যখন ওই নারীর ওভুলেশন হয়ে গেছে, অর্থাৎ ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণ হয়ে গেছে, তাহলে এসব পিল কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। সাধারণত পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়ার ১৪ দিন আগে ওভুলেশন হয়ে যায়।
ইমারজেন্সি পিলে হরমোনের মাত্রা বেশি। তাই একটি ওষুধ সেবন করলেই একজন নারীর দেহে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে।
বমিভাব, বমি, মাথা ঘোরানো, মাথা ভার হয়ে থাকা, ঝিমুনি ভাব হতে পারে।
স্তনে বেশ ব্যথা হতে পারে।
মাসিকের চক্রে আসতে পারে পরিবর্তন।
কারও মাসিক হয়ে যেতে পারে সময়ের আগেই, কারও আবার তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার বেশ কিছুদিন পর মাসিক হয়।
মাসিকের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কিংবা কম রক্তক্ষরণ হতে পারে, মাসিক ছাড়াও অন্য সময় অল্প অল্প রক্ত আসতে পারে।
আরও মারাত্মক ব্যাপার হলো, ইমারজেন্সি পিল গ্রহণ সত্ত্বেও যদি গর্ভধারণ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে এই পিলের প্রভাবে জরায়ুর বাইরে অন্য কোথাও প্রোথিত হতে পারে ভ্রুণ। জরায়ুর নালি, ডিম্বাশয় বা পেটের অন্যস্থানে ভ্রুণ প্রোথিত হলে তা ওই নারীর জন্য মারাত্মক বিপদ বয়ে আনতে পারে।
যত বেশি ইমারজেন্সি পিল সেবন করা হবে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি তত বাড়বে। তাই কেবল জরুরি পরিস্থিতিতে তা সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। ইমারজেন্সি পিলের একটি ধরনে থাকে লেভোনরজেস্ট্রেল। অন্যটিতে থাকে ইউলিপ্রিস্টাল অ্যাসিটেট। যেকোনো একটি বেছে নেওয়া যেতে পারে।
লেভোনরজেস্ট্রেল মাসে দুইবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়। আর ইউলিপ্রিস্টাল অ্যাসিটেট মাসে একবারের বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়। যাঁর সপ্তাহে দুইবারের বেশি ইমারজেন্সি পিল সেবনের প্রয়োজন দেখা দেয়, তাঁর অবশ্যই এর পরিবর্তে একটি নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি বেছে নেওয়া উচিত।
সন্তানধারণে অনিচ্ছুক নারী ও পুরুষ যদি কোনো জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি ছাড়াই শারীরিক সম্পর্কে জড়ান, তখন ইমারজেন্সি পিলের প্রয়োজন হয়।
এ ছাড়া অন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করলেও যদি সেই পদ্ধতিতে কোনো সমস্যা হয়ে থাকে, তখন এই পিলের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন কনডম ছিঁড়ে গেলে ইমারজেন্সি পিল কাজে আসতে পারে। এ ধরনের নির্দিষ্ট পরিস্থিতি ছাড়া ইমারজেন্সি পিল সেবন করতে নেই।
ইমারজেন্সি পিলকে মর্নিং আফটার পিল বলা হয়ে থাকে। তবে পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে দ্রুততম সময়েই তা সেবন করা উচিত।
যত দ্রুত সেবন করা হয়, পিল কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়ে। লেভোনরজেস্ট্রেল সেবন করতে হয় সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। ইউলিপ্রিস্টাল অ্যাসিটেট সেবন করতে হয় সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যে।
কিছু লেভোনরজেস্ট্রেল পিলের একবারের ডোজ সম্পন্ন করতে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে তা দুইবার সেবন করতে হয়।
যেকোনো ইমারজেন্সি পিল সেবনের দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে বমি হয়ে গেলে ওই ডোজ পুনরায় গ্রহণ করতে হবে।
যাঁদের ওজন অতিরিক্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে ইমারজেন্সি পিলের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
খিঁচুনি এবং যক্ষ্মার জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধ সেবন করা হলে ইমারজেন্সি পিলের কার্যকারিতা কমে যায়।
ইমারজেন্সি পিল খাওয়ার পর মাসিকের সম্ভাব্য তারিখের সাত দিন পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও মাসিক না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল রোজ সেবন করা হয় (কম্বাইনড ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল), ইমারজেন্সি পিলের পরিবর্তে সেই পিলের চারটি বা পাঁচটি একসঙ্গে সেবন করে নিলে তা ইমারজেন্সি পিল হিসেবে কাজ করতে পারে।
এ ছাড়া পাঁচ দিনের মধ্যে জরায়ুতে কপার টি ডিভাইস স্থাপনেরও সুযোগ আছে, যা পরবর্তী ৫–১০ বছর পর্যন্ত জন্মনিয়ন্ত্রণের কাজে আসবে।