Advertisement

আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে করণীয়

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করেন, যাঁদের বড় অংশ তরুণছবি: পেক্সেলস
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করেন, যাঁদের বড় অংশ তরুণছবি: পেক্সেলস

‘আমি যদি না থাকি, তাহলে কারও সমস্যা থাকবে না’—এমন অভিমানী ভাবনা অনেক কিশোর–কিশোরীর ডায়েরি বা মনে লুকিয়ে থাকে। কিন্তু এই লুকানো যন্ত্রণাই একদিন জীবন শেষ করার চিন্তায় রূপ নেয়। হারিয়ে যায় একটি সম্ভাবনাময় জীবন। কেন তারা এমন পথ বেছে নেয়?

আজ ১০ সেপ্টেম্বর, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিনটি আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়। এদিন আমাদের ভাবতে হবে, সচেতন হতে হবে এটা নিয়ে—কেন অল্প বয়সের একজন মানুষ, যার সামনে পড়ে রয়েছে একটা গোটা জীবন ও ভবিষ্যৎ, সে–ও আত্মহননের কথা ভাবে?

ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, বাইপোলার ডিজঅর্ডারের মতো মানসিক ব্যাধি আত্মহননের প্রবণতার পেছনে বড় কারণ হিসেবে কাজ করে। বাবা–মায়ের বিচ্ছেদ, পারিবারিক সহিংসতা ও ঘরে অনিরাপদ পরিবেশের মতো পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও ভাঙনের ঘটনা আরেকটি কারণ।

এ ছাড়া পরীক্ষায় ব্যর্থতা, অতিরিক্ত প্রত্যাশা, প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতার মতো শিক্ষাজনিত চাপে পড়েও অনেকে আত্মহত্যার কথা চিন্তা করে। সামাজিক চাপ ও বুলিং, অপমান, অবহেলা, একাকিত্ব, নেশা ও ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা ইত্যাদি কারণেও এমন চিন্তা মাথায় আসে।

এসব কারণ তরুণদের মনকে অস্থির করে তোলে। তবে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো, বিষয়টি নিয়ে আমরা খোলাখুলি কথা বলি না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, সারা বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করেন, যাঁদের বড় অংশ তরুণ। অথচ আমাদের সমাজে আত্মহত্যা নিয়ে এখনো নীরবতা, কুসংস্কার ও অপরাধবোধ কাজ করে। নীরবতা ভাঙা ও সচেতন হওয়া ছাড়া এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়।

আত্মহত্যার প্রবণতা প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে পরিবার ও অভিভাবকেরা। সন্তানের সঙ্গে প্রতিদিন কিছু সময় কাটান। শুধু পড়াশোনা নয়—সন্তানের অনুভূতি ও মানসিক অবস্থার খবর নিন।

চুপ হয়ে যাওয়া, বন্ধুবান্ধব এড়িয়ে চলা, ঘুম বা খাওয়ার পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিন। প্রয়োজন হলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।

শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রয়োজন। বুলিং বা হেনস্তা বন্ধে কঠোর হতে হবে। হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কাউন্সেলিং সেবা চালু করুন।

সমাজ ও নীতিনির্ধারকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। আত্মহত্যার খবর প্রচারে দায়িত্বশীল থাকতে হবে গণমাধ্যমগুলোকে। সামাজিক সচেতনতা কার্যক্রম বাড়ানো দরকার। শিশু–কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

কথা বলুন, মনে কোনো কিছু লুকিয়ে রাখবেন না। যেকোনো সংকটে পরিবার, বন্ধু বা শিক্ষকের কাছে যান। ব্যর্থতা মানেই জীবন শেষ নয়। প্রতিটি সংকট সাময়িক এটি মনে রাখুন।

মানসিক কষ্টে সাহায্য নেওয়া দুর্বলতা নয় বরং সাহসের পরিচয়। বন্ধু যদি আত্মহত্যার ইঙ্গিত দেয়, অবহেলা করবেন না। তাকে গুরুত্ব দিন ও সাহায্যের পথে নিয়ে যান।

আত্মহত্যাকে লজ্জা, অপরাধ বা দুর্বলতা না ভেবে প্রতিরোধযোগ্য জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখতে হবে। পরিবার, শিক্ষক, সমাজ ও নীতিনির্ধারক সবাই মিলে যদি দায়িত্ব নেয়, তবে অসংখ্য তরুণ জীবন বাঁচানো সম্ভব।

ডা. টুম্পা ইন্দ্রাণী ঘোষ , শিশু–কিশোর মনোরোগবিশেষজ্ঞ

Lading . . .