প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৫

জুলাই সনদের টেকসই বাস্তবায়নের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
শনিবার (২৩ আগস্ট) দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জুলাই খসড়া সম্পর্কে এনসিপির পর্যবেক্ষণ জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এ কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। আমরা ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সংবিধানের মূলনীতি, সংবিধান সংশোধন, সংশোধনের কাঠামো, নারী আসন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও তার ক্ষমতা, ক্ষমাপ্রদর্শনের বিধান, জরুরি অবস্থা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, একাধিক পদে থাকা, সংসদীয় কমিটিতে বিরোধীদলের সংসদের সভাপতি করা, বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ ও নিয়োগ এবং অন্য কিছু সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ বিষয়ে আলোচনা করেছি। এগুলো সরাসরি সংবিধানের সাথে সম্পর্কিত।
সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের অঙ্গীকারের মধ্যে যেভাবে বলা হয়েছে, (তাতে দেখা যাচ্ছে) প্রত্যেক বিষয় পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা খেয়াল করা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা যেসব সংস্কার প্রস্তাবনার ব্যাপারে একমত হয়েছি, সেগুলো টেকসই বাস্তবায়ন সম্ভব না। টেকসই বাস্তবায়নের জন্য গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের বিকল্প নেই।
সদস্য সচিব বলেন, এবারের সংস্কারে হাইকোর্টের শাখা বিভাগীয় শহরে স্থানান্তর করা হবে বলে প্রস্তাবনা গৃহীত হয়েছে। একই পরিবর্তন বাংলাদেশে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে হয়েহিল। পরে তা চ্যালেঞ্জ হলো এবং উচ্চ আদালত সেই সিদ্ধান্ত এবং সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এই শঙ্কার জায়গা এখানেও রয়েছে।
এনসিপি ওই নেতা বলেন, সংবিধানের ভেতরগত শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর আমূল পরিবর্তন হবে। সেটি করতে হলে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে। যে সংবিধানকে তার ভিত্তিমূল নিয়ে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ হবে না।
তিনি বলেন, জুলাই সনদের খসড়ায় যে সংশোধনী ও প্রস্তাবনার কথা বলা হয়েছে, তা সংবিধানের ওপর প্রাধান্য পাবে। তবে বাস্তবতা হলো, যেটা মূল সংবিধান, তার ওপর পোট্রে কোশ্চেন করা যায় না। জুরিসডিকশন বিধান তাই। অন্যদিকে মূল সংবিধানকে যত সংশোধনী আনাই হোক, সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা যায়। সুপ্রিম কোর্টর সেটার ব্যাপারে ব্যাখ্যা চাওয়া যায়। এই সম্ভাবনা এখানে রয়ে গেছে। ফলে এটার কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হলে এলএফও করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে গণপরিষদ নির্বাচন করতে হবে এবং জুলাই সনদের আমরা যেসব বিষয়ে একমত হয়েছি, সেগুলোকে গাইটেন প্রিন্সিপাল হিসেবে মনে করে, নতুন সংবিধানে যুক্ত করতে হবে।
জুলাই সনদের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাইয়ের প্রেক্ষাপটে মানুষের বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষাকে ধারন করার জন্য রাষ্ট্র কাঠামো পরিচালনার জায়গায় আমরা যেসব জায়গায় একমত হলাম, সেগুলো যে ডকুমেন্টেড দলিলের মধ্য দিয়ে গ্রহণ করা ছিল, তা শুরু থেকেই জুলাই সনদ নামে নামকরণ করা ছিল।
কিন্তু আমরা হঠাৎ খেয়াল করলাম, কমিশন খসড়ায় জুলাই সনদকে জুলাই জাতীয় সনদ নামে তারা চিহ্নিত করেছেন। অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে মানুষ নতুন রাষ্ট্র কাঠামোর কথা ভেবেছে। ফলে এটিকে জুলাই সনদ নামকরণ করা প্রয়োজন। ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ কথার মধ্য দিয়ে জুলাইয়ের যে আন্দোলনে মানুষের অবদান, তা দুর্বলভাবে উপস্থাপনের একটি বিষয় জড়িত আছে।
আখতার আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশনে নীতিগত বিষয়ে একমত হয়েছি। সেগুলোর টেক্স কীভাবে তৈরি হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। গণপরিষদের মাধ্যমে যারা প্রতিনিধি আসবেন, তারা এটি করবেন।
তিনি বলেন, যতগুলো জায়গায় পরিবর্তন করতে হবে, তাতে বর্তমান সংবিধানের ৬০-৭০ শতাংশের বেশি পরিবর্তন করতে হবে। এত বৃহৎ পরিবর্তন, সেটাও সংবিধান পুনর্লিখন করার সমান। যখন আমাদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লিখতেই হচ্ছে, সেখানে নতুন সংবিধানের প্রবর্তন করা, সেখানে অনেকে কেন বাধা দেখেন, তা ধোয়াশার জায়গা তৈরি করে।
এফএইচ/এএটি