জাতীয় পার্টি ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির প্রকাশ্য এজেন্ট : চরমোনাই পীর
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জাতীয় পার্টি ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির প্রকাশ্য এজেন্ট বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর চরমোনাই।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচার ও জাপা নিষিদ্ধের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসরদের অপতৎপরতায় জাতি বিষিয়ে ছিল বিগত ১৫ বছর। এই লজ্জাহীনেরা ফ্যাসিবাদের সব অপকর্মের পক্ষ নিয়েছে ও ফ্যাসিবাদকে বেপরোয়া হতে সহায়তা করেছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির ব্যাপারে সবাই অবগত। তারা ফ্যাসিবাদের মন্ত্রিসভায় ছিল। জালিয়াতিপূর্ণ প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে তারা অংশ নিয়ে অবৈধ নির্বাচনগুলোকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই জাতীয় পার্টি অভ্যুত্থানের পরে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এখন তারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার পাঁয়তারা করছে। দেশের একটি রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়েছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, জাতীয় পার্টিসহ ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ, তারা কোনো স্বাধীন রাজনৈতিক দল নয়, বরং তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির প্রকাশ্য এজেন্ট।
সরকারের পক্ষপাতমূলক আচরণে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হয়েছে দাবি করে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া নির্বাচন করা যায় না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জনপ্রশাসনের আচরণ ও সন্ত্রাসের যে ভয়াবহতা আমরা লক্ষ করছি তাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না। এখানে মনে রাখা লাগবে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড একটা মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও বটে। লন্ডন বৈঠক, এককভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা ইত্যাদি বিষয়ে বর্তমান সরকার একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি যে পক্ষপাত দেখাচ্ছেন তাতে মাঠপ্রশাসন তাদের দিকে ঝুঁকে পড়াই স্বাভাবিক। আমরা বলব, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। জনপ্রশাসনকে সক্রিয় ও নিরপেক্ষ করতে হবে এবং সরকারকে কোনো দলের প্রতি পক্ষপাত দেখানো থেকে সরে আসতে হবে।
আরও পড়ুন
যুগপৎ আন্দোলনের দাবিগুলো উপস্থাপন করে তিনি বলেন, আমাদের দাবি সুস্পষ্ট। আমরা জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চাই, এর আইনি ভিত্তি চাই। জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতেই আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচন চাই। দ্রুততার সঙ্গে ফ্যাসিবাদের বিচার নিশ্চিত দেখতে চাই। ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন বন্ধ করতে চাই। জাতীয় পার্টিসহ ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিষিদ্ধ চাই। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। আমাদের অবস্থান কোনো দলের বিরুদ্ধে নয়। বরং জুলাই অভ্যুত্থানের রক্ত ও জীবনের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের এ অবস্থান।
যুগপৎ আন্দোলন কোনো দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নয় জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, এই পরিস্থিতিতে দেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিনিধিত্বশীল কিছু রাজনৈতিক সংগঠন একত্রিত হয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। আমরা সবদিক চিন্তা করে এবং জুলাইয়ের রক্তের প্রতি দায়বোধ থেকে সুনির্দিষ্ট এই দাবিগুলো নিয়ে রাজনৈতিকভাবে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা একই দাবি নিয়ে জোটবদ্ধ কর্মসূচি পালন করব। যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলব।
যুগপৎ আন্দোলনের দাবি ও কর্মসূচি সম্পর্কে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করব এবং ক্রমান্বয়ে কর্মসূচি কঠোর থেকে কঠোরতর হবে।
তাদের দাবিগুলো–
১. জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে।
২. নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে।
৩. সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৪. গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে।
৫. বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ভারতীয় তাবেদার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের বিচার করতে হবে এবং বিচার চলাকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
এই দাবি আদায়ে কর্মসূচি–
১. ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল।
২. ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ।
৩. ২৬ সেপ্টেম্বর সারা দেশে জেলা/উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল।
এমএম/এসএসএইচ