বিভাগীয় শহরেও হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চের বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে: আলী রীয়াজ
প্রকাশ: ৭ জুলাই, ২০২৫

হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ ঢাকার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে এক বা একাধিক বেঞ্চ করার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বর্তমান বিধান সংশোধনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। নতুন বিধানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির অপরাধীকে ক্ষমা করার সুযোগ থাকবে।’
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের নবম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গত ১৬ বছর বা তার আগে থেকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি ব্যাপকভাবে অপব্যবহার হয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল অনুধাবন করেছে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার যে বিষয়টি আছে, তা সংশোধন করা প্রয়োজন। সে বিষয়ে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন থেকে কিছু সুপারিশ ছিল। তিনি বলেন, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও সব নির্বাহী ক্ষমতার মাধ্যমে ক্ষমার বিষয় সংবিধানে যুক্ত করার সুপারিশে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি এই বিধি (সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ) অনুসরণ করে ক্ষমা প্রয়োগ করতে পারবেন বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, এই ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রদর্শনের জন্য পাঠানোর আগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মতামত নিতে হবে। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানে নতুন আইন যুক্ত হলে বিগত সময়ে রাজনৈতিকভাবে এই আইনের যে অপব্যবহার হয়েছে তা বন্ধ হবে।
বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের জন্য ঐকমত্য হয়েছে। বলা হয়েছে, রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্টের স্থায়ী আসন থাকবে। তবে রাজধানীর বাইরে প্রতিটি বিভাগে প্রধান বিচারপতির পরামর্শক্রমে এক বা একাধিক বেঞ্চ থাকবে। অর্থাৎ হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ ঢাকার পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে থাকবে—এই বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।
আগামী সপ্তাহে নতুন নতুন আরও অনেক বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, এ ছাড়া জরুরি অবস্থা নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। কিন্তু এই বিষয়টি এনসিসির (জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল) সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এখন যেহেতু এনসিসি আলোচনার টেবিলে নেই, তাই জরুরি অবস্থার বিষয়টি নতুন করে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে তোলা হবে।
আজকের আলোচনায় বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘তিনটি বিষয়ের মধ্য দুটি বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে অন্যান্য বিষয়ে আমরা অগ্রগতিতে পৌঁছাতে পারব।’
জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে আজকের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য সফররাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার ও মো. আইয়ুব মিয়া।