ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়, শোকজের জবাবে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
প্রকাশ: ৭ আগস্ট, ২০২৫

গত ৫ আগস্ট জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ৫ জন কেন্দ্রীয় নেতার কক্সবাজার ভ্রমণ কেন্দ্র করে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এরই প্রেক্ষিতে তাদেরকে দলের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের জবাব দিয়েছেন মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দলের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের কাছে লিখিত জবাব পাঠান তিনি। সেই জবাব তিনি নিজেই ফেসবুক পোস্টে শেয়ার করেছেন।
জবাবে তিনি লিখেছেন, ৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখে আমার কোনো পূর্বনির্ধারিত রাষ্ট্রীয় বা সাংগঠনিক কর্মসূচি ছিল না। দল থেকেও আমাকে এ সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব বা কর্মপরিকল্পনা জানানো হয়নি।
৪ আগস্ট রাতে দলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার কোচিং অফিসের সহকর্মীর ফোন ব্যবহার করে আমাকে জানায় যে, সে তার স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের জন্য ঘুরতে যাবে। আমি তাকে আহ্বায়ককে অবহিত করতে বলি এবং সে জানায় যে বিষয়টি জানাবে, এবং আমাকেও জানাতে বলে যেহেতু তার নিজস্ব ফোন পদযাত্রায় চুরি হয়ে গিয়েছিল।
তিনি লেখেন, ৪ আগস্ট রাতে পার্টি অফিসে আমি আহ্বায়কের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানাই। একই রাতে আমি সদস্যসচিবের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করি এবং জানতে পারি যে রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামে দল থেকে তিনজন প্রতিনিধি যাচ্ছেন এবং সেখানে আমার কোনো কাজ নেই। আমি কোনো দায়িত্বে না থাকায় এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও মানসিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সঙ্গী হিসেবে সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।
তিনি লেখেন, আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম তবে এই ঘোরার লক্ষ্য ছিল রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্তে চিন্তা-ভাবনা করা। সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি গণঅভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।
কক্সবাজার পৌঁছানোর পর হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে আমরা নাকি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। আমি তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমকে জানাই যে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে জানায় সেখানে পিটার হাস নামে কেউ নেই। পরবর্তীতে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি তখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন।
এই গুজব একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা। অতীতেও আমি এই হোটেলে থেকেছি এবং কখনো কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। অতীতেও আমি বেশ কয়েকবার ঘুরতে গিয়েছি কিন্তু ঘুরতে আসলে দলের বিধিমালা লঙ্ঘন হয়, এমন কোন বার্তা আমাকে কখনো দল থেকে দেওয়া হয় নি। পরিস্থিতির আলোকে, আমি মনে করি শোকজ নোটিশটি বাস্তবভিত্তিক নয়। আমার সফর ছিল স্বচ্ছ, সাংগঠনিক নীতিমালাবিরোধী নয় এবং একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনার সুযোগ মাত্র।
তবুও দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে আমি এই লিখিত জবাব দিয়েছি। অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদের্শন হিসেবে।
জবাবে তিনি লেখেন, আমার বক্তব্য স্পষ্ট, ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়। কারণ ইতিহাস কেবল মিটিংয়ে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।