Advertisement

পিআর পদ্ধতিতে কার লাভ, ক্ষতি কার?

জনকণ্ঠ

প্রকাশ: ৬ জুলাই, ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এরই মাঝে ফের আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে আনুপাতিক বা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন পদ্ধতির প্রসঙ্গ।

বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতে, প্রচলিত "ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (FPTP)" পদ্ধতিতে প্রকৃত জনমতের প্রতিফলন ঘটে না। ফলে ছোট ও মাঝারি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব সংকুচিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে ৫ আগস্টের পর থেকে এই পদ্ধতি সংস্কারের দাবি নতুন করে জোরালো হয়ে উঠেছে।

এই পদ্ধতিতে ভোটাররা সরাসরি কোনো প্রার্থীকে নয়, বরং একটি রাজনৈতিক দলকে ভোট দেন। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সেই অনুপাতে তারা সংসদে আসন পাবে।

উদাহরণস্বরূপ, কোনো দল যদি মোট ভোটের ১০ শতাংশ পায়, তবে তারাও সংসদে ১০ শতাংশ আসন পাবে। কেউ এককভাবে ৫১ শতাংশ না পেলে জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। এক্ষেত্রে, দলগুলো আগেই নির্বাচন কমিশনে সম্ভাব্য প্রার্থীর একটি তালিকা জমা দেয়। ভোট শেষে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে সেই তালিকা থেকে সংসদ সদস্য মনোনীত হয়।

বিশ্বে কোথায় কোথায় চালু রয়েছে এই পদ্ধতি?

*শ্রীলঙ্কা: ১৯৮৯ সাল থেকে সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক পদ্ধতি চালু করেছে। ২২টি জেলা ও ১৯৬টি আসনের পাশাপাশি রয়েছে বোনাস আসন ব্যবস্থাও।
*নেপাল: ২৭৫টি আসনের মধ্যে ১১০টি নির্বাচিত হয় এই পদ্ধতিতে।
সেখানে নারী, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
*অন্যান্য দেশ: আলজেরিয়া, ব্রাজিল, চিলি, লেবানন, মরক্কো, সুইজারল্যান্ড সহ বিশ্বের ৭৩টিরও বেশি দেশে এই পদ্ধতি চালু রয়েছে।
প্রথম আনুপাতিক নির্বাচন হয় বেলজিয়ামে ১৮৮৯ সালে। পরে ফিনল্যান্ড (১৯০৭) ও সুইডেন (১৯০৯) এই পদ্ধতি গ্রহণ করে।

বর্তমানে বাংলাদেশের পদ্ধতি: সীমাবদ্ধতা কোথায়?

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত "ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট" পদ্ধতিতে যিনি সর্বাধিক ভোট পান তিনিই নির্বাচিত হন। এমনকি একজন প্রার্থী মাত্র এক ভোট বেশি পেলেও তিনি বিজয়ী বলে গণ্য হন। এই পদ্ধতির একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো—
ছোট রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় জনগণের উল্লেখযোগ্য ভোট পেয়েও সংসদে পৌঁছাতে পারেন না।

এই পদ্ধতি চালু করতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ প্রয়োজন:

*রাজনৈতিক ঐক্যমত:
নির্বাচন ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে সব দলের সম্মতিই প্রধান শর্ত।
*সাংবিধানিক ও আইনি সংশোধন: এই পদ্ধতি কার্যকর করতে *সংবিধানের সংশোধন এবং নতুন আইন প্রণয়ন অপরিহার্য।
*প্রশাসনিক প্রস্তুতি ও সচেতনতা:
ভোটারদের সচেতন করা এবং নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, "বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা আরও অংশগ্রহণমূলক ও ন্যায্য করতে হলে আনুপাতিক পদ্ধতি চালুর চিন্তা এখন সময়োচিত।" তারা বলছেন, বিশ্বের সফল উদাহরণগুলোর বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশেও এই পদ্ধতি চালু করা সম্ভব, যা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে এবং সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।

বর্তমানে নির্বাচন কমিশন ও সরকার যেখানে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেখানেই আনুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সংলাপ ও আলোচনার দাবি উঠছে।
এই পদ্ধতি চালু হলে তা হতে পারে গণতন্ত্রের পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হওয়ার একটি বড় পদক্ষেপ। এখন দেখার বিষয়, রাজনৈতিক দলগুলো এতে কতটা ঐক্যমত গড়ে তুলতে পারে।

আরও পড়ুন

Lading . . .