Advertisement

ছাত্রদলের প্যানেলে বৈচিত্র্য, আছে অনভিজ্ঞতার চ্যালেঞ্জ

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ভবনছবি: প্রথম আলো
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) ভবনছবি: প্রথম আলো

সংগঠন গোছাতে সময় চেয়ে ‘অনুরোধ’, নবীন শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকারসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনের কারণে আলোচনা ছিল, ছাত্রদল শেষ পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে অংশ নেবে কি না। তবে সবার আগে ছাত্রদলই প্যানেল ঘোষণা করেছে। এতে নারী ও কৃতী শিক্ষার্থী যেমন আছেন, তেমনি রয়েছেন খেলোয়াড়, গায়কসহ সংগঠনের বাইরের শিক্ষার্থীরাও। তবে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের অনেকের প্যানেলে না থাকাটা নির্বাচনে তাঁদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ছাত্রদল ৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করে রাকসুর ২৩টি পদের জন্য প্যানেল ঘোষণা করে। এতে ছাত্রদলের ‘নির্যাতিত’ ও ‘ক্লিন ইমেজের’ নেতা-কর্মীদের সামনে রাখা হয়েছে। সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাইরেও জাতীয় দলের ফুটবলার, ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা, ডিনস পুরস্কারজয়ী শিক্ষার্থীরা প্যানেলে জায়গা পেয়েছেন। শীর্ষ তিন পদের একটিতেসহ চার নারী শিক্ষার্থীও আছেন প্যানেলে।

প্যানেল ঘোষণার পর থেকেই এই প্যানেলকে ‘বৈচিত্র্যময়’ বলে দাবি করে আসছে ছাত্রদল। এর পেছনে যুক্তি দেখিয়ে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, তাঁদের ঘোষিত প্যানেলে নারীরা যেমন প্রাধান্য পেয়েছেন, তেমনি ছাত্রদলের রাজনীতির বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখা শিক্ষার্থীদেরও রাখা হয়েছে।

প্যানেলে যতটা পারা যায় বৈচিত্র্য রাখার চেষ্টা করেছেন বলে জানালেন ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুলতান আহমেদ (রাহী)। তিনি প্রথম আলো কে বলেন, প্যানেলে ‘অরাজনৈতিক’, অর্থাৎ সংগঠনের বাইরেরই রয়েছেন ছয়জন।

রাকসু নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৯টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যান্য প্যানেলের চেয়ে ছাত্রদল নারী নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিয়েছে। পদাধিকার হিসাব করলে ভিপি, জিএসের পরের পদটিই এজিএস। এই পদে ছাত্রদল সংগঠনটির একজন নারীনেত্রীকে প্রার্থী করেছে। এ পদে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিন বিশ্বাস (এষা) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। শীর্ষ পদের ক্রম অনুযায়ী, চতুর্থ স্থানে থাকা ক্রীড়া ও খেলাধুলাবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রার্থী করা হয়েছে নার্গিস খাতুনকে। তিনি জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়। এর আগে তিনি অনূর্ধ্ব-১৮ ও ১৯ দলেও খেলেছেন। এ ছাড়া মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে লড়বেন স্বপ্না আক্তার। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের কারণে ২০২৪ সালে ‘ডিনস অ্যাওয়ার্ড’ পান শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের এই কৃতী শিক্ষার্থী। এ ছাড়া সহ-মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নুসরাত ঈশিতা।

■ প্যানেলে গায়ক আর খেলোয়াড়ও রাখা হয়েছে। এজিএসসহ চার পদে প্রার্থী করা হয়েছে নারীদের। ■ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ ২০ নেতার ছাত্রত্ব নেই। তাই তাঁরা প্রার্থী হতে পারেননি।

ছাত্রদল প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন (আবির) বর্তমান কমিটির সহসভাপতি। ২০২৩ সালে ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) হাতে মারধরের শিকার হন তিনি। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী নাফিউল ইসলাম (জীবন) বর্তমান কমিটির দপ্তর সম্পাদক। তিনিও ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

সহক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক প্রার্থী মাহফুজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের গোলরক্ষক। সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে লড়বেন আবদুল্লাহ আল কাফী। সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহরিয়ার আলম ‘অমরত্ব’ নামে ক্যাম্পাসভিত্তিক একটি ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সহতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রেদোয়ানুল ইসলাম চলতি বছর চায়না সাউথ এশিয়া ইয়ুথ এনভয়েজ প্রোগ্রামে প্রতিনিধিত্ব করছেন। সহমিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী করা হয়েছে নূর নবীকে, যিনি একটি জাতীয় দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য ও দৌরাত্ম্যে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন করতে পারেননি। সক্রিয় হতে গেলেও ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে তাঁদের। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে কিছুটা সক্রিয় হতে শুরু করেন। তবে এখনো সংগঠন গুছিয়ে উঠতে পারেনি।

বছরের পর বছর আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চলার পর গত ১৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। নবগঠিত এই কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দলের শীর্ষ অন্তত ২০ নেতার ছাত্রত্ব নেই। তাই তাঁরা প্রার্থী হতে পারেননি। বাকি যাঁদের ছাত্রত্ব আছে, তাঁদের ক্যাম্পাসে পরিচিতি যেমন কম, তেমনি অভিজ্ঞতার দিক থেকেও তাঁরা বেশ পিছিয়ে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্রদলের প্যানেলে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত ও ‘অনভিজ্ঞ’ যাঁদের প্রার্থী করা হয়েছে, তাঁরা শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে কতটুকু জায়গা নিতে পারবেন!

Lading . . .