কালাইয়ের স্কুল–কলেজে পাস নম্বর ৪০ থেকে ৫০ পর্যন্ত করার নির্দেশনা ইউএনওর
প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজে নতুন পাস নম্বর নির্ধারণসহ আট দফা নির্দেশনা দিয়ে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান। ‘শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ভালো ফল নিশ্চিত করার লক্ষ্যে’ গতকাল বৃহস্পতিবার জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়।
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত বিশেষ বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামে ওই বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষায় ভালো ফল নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানের অর্ধবার্ষিক/বার্ষিক এবং প্রাক্–নির্বাচনী পরীক্ষায় প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ন্যূনতম পাস নম্বর ৫০, নবম-দশম শ্রেণিতে ৪৫ এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪০ নম্বর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ৩৩ নম্বর পেলেই পাস ধরা হয়। বিষয়টিকে মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও ‘বাস্তবতাবিবর্জিত’ বলে মনে করছেন অনেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালাইয়ের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩৩ নম্বরের পরিবর্তে ৫০ নম্বর পাস মার্ক বেঁধে দেওয়া সরাসরি শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ। স্থানীয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
এ বিষয়ে ইউএনও শামিমা আক্তার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ভালো ফল ও শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি কালাইবাসীর চাওয়া ছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া অন্য নির্দেশনাগুলো হলো কোনো শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবে না। কোনো শিক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় এক বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হলে কোনো অবস্থাতেই এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। যৌক্তিক কারণ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী তিন দিনের বেশি প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানপ্রধান প্রশাসনকে এবং শিক্ষার্থীর অভিভাবককে লিখিতভাবে জানাবেন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য কর্মচারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধূমপান থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকবেন। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, ব্যঙ্গাত্মক ও কুরুচিপূর্ণ ছবি এবং ভিডিও ধারণ ও প্রচার করা যাবে না। ইভ টিজিং, যৌন হয়রানি, কিশোর গ্যাং ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করবেন। কমিটি এসব বিষয়ে প্রশাসনকে জানাবে। কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। ক্লাসের পড়া ক্লাসেই সমাধান করার জন্য যথাসাধ্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
মুঠোফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করে একজন অভিভাবক বলেন, ‘যেখানে সরকার ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলছে। সেখানে ইউএনও কীভাবে মোবাইল নিষিদ্ধ করেন। এটা আমাদের সন্তানদের আধুনিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার শামিল। আমার মেয়েকে বাটন ফোন দিয়েছি। স্কুল ছুটি হলে আমাকে সে জানায়। আমি স্কুলে গিয়ে নিয়ে আসি।’
জয়পুরহাটের একজন শিক্ষা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি বিজ্ঞপ্তিটি দেখেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের শিক্ষানীতির মৌলিক নিয়ম পরিবর্তনের কোনো এখতিয়ার নেই। তাঁরা কেবল বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক বিষয় তদারকি করতে পারেন। বিজ্ঞপ্তির কিছু নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার সঙ্গে মেলে না।’
যোগাযোগ করলে জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফরোজা আকতার চৌধুরী পাশ নম্বর পরিবর্তনের নির্দেশনার বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাদকের চেয়ে মুঠোফোন আসক্তি প্রকট আকার ধারণ করেছে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে মুঠোফোনে গেম খেলে। মুঠোফোনে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ুক সেটি আমরা কেউই চাই না। শিক্ষার্থীদের ভালো-মন্দ সেটিও তো আমাদের দেখার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।’