Advertisement

রাজশাহীতে ৯ হত্যা মামলার চার্জশিট, হাসিনা-কাদের লিটনসহ অভিযুক্ত ৫২৯

যুগান্তর

প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

24obnd

গত বছর ৫ আগস্ট রাজশাহীতে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলাসহ জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের হওয়া মোট ৯ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে আদালতে।

গত মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক ও জুলাই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল সিএমএম আদালতে দুই মামলার চার্জশিট জমা দেন। বুধবার তা আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহতদের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম এই দুটি মামলার চার্জশিট দাখিল করা হলো।

এছাড়া রাজশাহীতে জুলাই আন্দোলনে বিভিন্ন ঘটনায় দায়ের হওয়া আরও সাতটি মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে আদালতে। এই সাতটি মামলার মধ্যে হামলা লুটপাট বিস্ফোরক ও হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে। এসব মামলাও তদন্ত করেছেন ডিবি পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপকমিশনার গাজিউর রহমান জানান, দুই হত্যা মামলায় প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত আসামির সংখ্যা ২৪৪ জন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ মোট ২৪৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। হত্যা মামলা দুটি দায়ের হয়েছিল আরএমপির বোয়ালিয়া থানায়। পরে মামলাগুলো ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। বাকি সাতটি মামলাও ডিবি তদন্ত করেছে। হত্যাসহ মোট ৯ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ৫২৯ জনকে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা আলী রায়হান হত্যা মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, লিটনসহ মোট ১২৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম হত্যা মামলায় ১১৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

চার্জশিটে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনসহ মোট ২৪৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ইব্রাহিম খলিল জানান, মামলা তদন্তকালে গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিও ও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য ও জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, মামলা দুটিতে এজাহারে উল্লেখ করা আসামির বাইরেও অনেক অজ্ঞাত আসামি ছিল। তথ্য ও প্রমাণ বিশ্লেষণ করে ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চার্জশিটে আসামি করা হয়েছে।

জানা গেছে, শিবির নেতা আলী রায়হান হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত এজাহারনামীয় ৭ জন আসামিকে ছাড়াও তদন্তে প্রাপ্ত আরও ৩২ জনসহ মোট ৩৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম হত্যা মামলায় এজাহার নামীয় ৫ জন ছাড়াও তদন্তে প্রাপ্ত ২৮ জনসহ মোট ৩৩ জন গ্রেফতার হয়েছে।

রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আলী আশরাফ মাসুম জানান, জুলাই আন্দোলনে নিহত দুই শিক্ষার্থী হত্যা মামলাসহ মোট ৯টি মামলার চার্জশিট আদালতে জমা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মামলাগুলো বিচারের জন্য সরাসরি বিভিন্ন আদালতে স্থানান্তর হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ওই দিন আলুপট্টিতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আলী রায় রায়হান আহত হন। এরপর ৮ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলী রায়হান মারা যান। এ ঘটনায় গত বছর ১৯ আগস্ট নিহত আলী রায়হানের ভাই রানা ইসলাম বাদী হয়ে ৫০ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরও ১ হাজার ১৫০ জনকে আসামি করে বোয়ালিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

অন্যদিকে গত বছর ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজশাহীর আলুপট্টি এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সন্ত্রাসী নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত হন শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম। গত বছর ২৪ আগস্ট নিহত সাকিব আনজুমের বাবা মাইনুল হক বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। শিক্ষার্থী সাকিব আনজুম হত্যা মামলার প্রধান আসামি করা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে। রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ মোট ৩৪২ জনকে আসামি করা হয়। তদন্তে এ মামলার ১১৭ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

Lading . . .