Advertisement

রাজশাহীতে শিক্ষকের অপসারণ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট, ২০২৫

রাজশাহীতে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন নর্থবেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার রাতে ঢাকা-রাজশাহী সড়কের নগরের চৌদ্দপায় এলাকায়ছবি: প্রথম আলো
রাজশাহীতে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন নর্থবেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার রাতে ঢাকা-রাজশাহী সড়কের নগরের চৌদ্দপায় এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে নর্থবেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির এক শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহীর নর্থবেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী সড়কের নগরের চৌদ্দপায় এলাকায় অবরোধ করেন। পরে রাত সোয়া ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আশ্বাসে তাঁরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।

ওই শিক্ষকের নাম এ জে এম নূর আলম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও প্রক্টর। বিভিন্ন ফেসবুক আইডিতে গতকাল বিকেলে তাঁর সঙ্গে এক শিক্ষার্থীর কথোপকথন প্রকাশ হয়, যেখানে তিনি আন্দোলনে অংশ নিলে ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি দেন। তবে ওই অডিও এডিট করা বলে দাবি করেছেন ওই শিক্ষক।

এক মিনিটের বেশি সময়ব্যাপী ওই ফোনালাপে এক শিক্ষার্থীকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি যাকে নিয়ে চিন্তা করতেছেন বা আমিও চিন্তা করতেছি, মিঠুনটাও ছিল স্যার। তো স্যার এখন দেখা যাচ্ছে, এ রকম যদি চলতে থাকে তাহলে তো আপনি যেভাবে বা আমি যেভাবে আছি, একটু সমস্যা স্যার। এখন এখানে কী করা যায়?’ এর জবাবে শিক্ষক বলতে থাকেন, ‘ছাত্রদের ক্ষমতা বেশি, না প্রশাসনের ক্ষমতা বেশি, সেটা দেখা যাবে। ছাত্রদের ক্ষমতা না প্রশাসনের ক্ষমতা দেখি। আন্দোলন করুক না ওরা, আমরাও তো চাই যে আন্দোলন করুক।’ এর জবাবে ওই শিক্ষার্থী ‘জি স্যার, জি স্যার’ বলে সায় দেন।

পরে ওই শিক্ষক বলতে থাকেন, ‘আন্দোলন করুক। আমরা শক্ত প্রতিপক্ষ পজিশন, একদম স্ট্রিক্ট পজিশনে যাব। ওই যে ফরেন ইউনিভার্সিটি, অন্যান্য ইউনিভার্সিটির ন্যায়। তো এখানে যারা আন্দোলনের সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে, প্রত্যেকের ছাত্রত্ব বাতিল করব। তারপরে তারা আন্দোলন করে, রিট করে, মামলা করে কীভাবে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে নিয়ে আসে, আমরা সেটা দেখব। আমাদের এখন, আমরা খুব স্ট্রিক্ট। এটা স্ট্রিক্ট কেন হচ্ছি? যে আমাদের ৫০-৬০টা স্টুডেন্ট গেলে আমাদের কোনো যায় আসে না। ঠিক আছে? বরং ৫০-৬০টা স্টুডেন্ট গেলে আমাদের কোনো যায় আসে না।’

এই অডিও ফাঁসের পর গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে শিক্ষার্থীরা নগরের চৌদ্দপায় এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁরা রাস্তা অবরোধ করেন। এ সময় তাঁরা রাস্তায় টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেন। দুই পাশে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে রাত সাড়ে ৯টার পর সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনসার আলী উপস্থিত হন। রাত সোয়া ১০টার দিকে তাঁর আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন। তাঁরা মঙ্গলবার দুপুর ১২টার মধ্যে ওই শিক্ষকের অপসারণের আলটিমেটাম দিয়ে চলে যান।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন ইসলাম বলেন, ওই অডিওতে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আন্দোলনে অংশ নিলে ছাত্রত্ব বাতিল করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই শিক্ষক আওয়ামী লীগের দোসর। তিনি কীভাবে প্রক্টর হলেন?

অভিযোগের বিষয়ে এ জে এম নূর আলম বলেন, এই অডিওটা এডিট করা। তিনি প্রক্টর হয়েছেন এ বছর ফেব্রুয়ারিতে। বরং তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরু থেকে সক্রিয় ছিলেন ছাত্রদের পক্ষে। সে হিসেবে তিনিও জুলাই যোদ্ধা। এ কারণে তাঁকে প্রক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এই দায়িত্ব পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা আনেন। এতে কিছু শিক্ষার্থী সংক্ষুব্ধ হন। সেখান থেকেই তাঁরা এই আন্দোলন করছেন।
নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক গতকাল রাতে বলেন, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা বিষয়গুলো নিয়ে আগামীকাল (আজ) বিশ্ববিদ্যালয়ে বসবেন। সেখানে বিষয়গুলোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এমন আশ্বাসে সড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

Lading . . .