বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যের কি সমাধান হলো
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট, ২০২৫

কয়েক দশক ধরে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে বিশ্বে অমীমাংসিত রহস্যের একটি ভাবা হচ্ছে। আটলান্টিক মহাসাগরে মায়ামি, বারমুডা ও পুয়ের্তো রিকোবেষ্টিত সমুদ্রের বিস্তৃত অঞ্চল বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে রহস্য হিসেবে ভাবা হয়। ভয় আর নানা জল্পনার বিষয়বস্তুর কেন্দ্রবিন্দুতে আছে এই ট্রায়াঙ্গল। এখানে কোনো বিমান বা জাহাজ প্রবেশ করলে নাকি হারিয়ে যায়। এ অঞ্চলে অতিপ্রাকৃত শক্তির কারণে সেখানে সব হারিয়ে যায়। ভিনগ্রহবাসীদের উপস্থিতিসহ নানা ষড়যন্ত্রের প্রসার আছে এ এলাকাকে ঘিরে।
সেই সব গালগপ্পকে বৈজ্ঞানিকভাবে উড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছেন একদল বিজ্ঞানী। অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানী কার্ল ক্রুসজেলনিকির মতে, মার্কিন জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসন এনওএএ আর লয়েডস অব লন্ডনের গবেষণার মাধ্যমে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের পৌরাণিক কাহিনি ধোপে টিকছে না। অভিশপ্ত অঞ্চল হওয়া তো দূরের কথা, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের তথাকথিত রহস্য প্রাকৃতিক পরিবেশগত পরিস্থিতির মাধ্যমে বোঝা যায়। এ ছাড়া মানুষের ভুল ও পরিসংখ্যানগত সম্ভাব্যতার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। বিজ্ঞানী ক্রুসজেলনিকি জোর দিয়ে বলেন, সত্য অনেক কম কাল্পনিক। প্রকৃতি আর নৌ চলাচলের বাস্তবতায় অনেক বেশি ঘটনা দেখা যাচ্ছে।
বিজ্ঞানী ক্রুসজেলনিকি দীর্ঘদিন বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ওপর নজর রাখছেন। এ এলাকা অন্য কোনো মহাসাগরীয় অঞ্চলের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক নয়। পৃথিবীর অন্যান্য জলসীমার মতোই প্রায় একই আনুপাতিক হারে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে এলাকা। এখানে ঘটনার সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ এই ট্রায়াঙ্গল বিশ্বের ব্যস্ততম জাহাজ ও বিমান করিডরের মধ্যে একটি। ব্যস্ততার কারণে ভারী যানবাহনের স্বাভাবিকভাবেই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। পরিসংখ্যানগত তথ্য নিশ্চিত করছে, যখন জাহাজ ও বিমানের পরিমাণ বিবেচনা করা হয়, তখন এ এলাকার দুর্ঘটনার হার সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। পরিসংখ্যান এ এলাকার পৌরাণিক খ্যাতির ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জ করে।
বিজ্ঞানী ক্রুজেলনিকির মতে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ভূগোল ও আবহাওয়ার ধরন এমন পরিস্থিতি তৈরি করে, যা অভিজ্ঞ নাবিকদের সামনে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। উপসাগরীয় প্রবাহের মতো একটি শক্তিশালী সমুদ্রস্রোত আর আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তন এখানে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। হিংস্র আর বড় ঝড় তৈরি হয় বলে এখানে দুর্ঘটনা ঘটতে বেশি সময় লাগে না। কয়েক মিনিটের মধ্যে বড় বড় জাহাজ পথ থেকে সরে যায়। অঞ্চলটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়, হারিকেন, জলপ্রপাত আর শক্তিশালী তরঙ্গের মধ্যে অবস্থিত। সেখানকার সামুদ্রিক পরিবেশের কারণে ঝুঁকি তৈরি হয়। এতে কোনো সতর্কতা ছাড়াই জাহাজ ও বিমান ডুবে যাচ্ছে। এ ছাড়া অসংখ্য দ্বীপ ও বিপজ্জনক প্রবালপ্রাচীর পুরো পরিস্থিতিকে খারাপ করে দেয়। অগভীর নৌ চলাচলের কারণে সেখানে সংঘর্ষের ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া কিছু অঞ্চলে চৌম্বকীয় অসংগতি দেখা যায়। এ কারণে কম্পাসে চৌম্বকীয় উত্তরের পরিবর্তে প্রকৃত উত্তর দিকে নির্দেশ করতে পারে। তখনো নেভিগেশন ত্রুটি দেখা যায়।
বিজ্ঞানী ক্রুজেলনিকি বলেন, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দুর্ঘটনা পাইলট বা ক্যাপ্টেনের ভুলসহ ত্রুটিপূর্ণ সরঞ্জাম বা পুরোনো পূর্বাভাস পদ্ধতির কারণে ঘটে। মানবিক ও প্রযুক্তিগত ত্রুটি প্রায়ই এ অঞ্চলের পরিস্থিতিকে কঠিন করে দেয়। সাহিত্যের দুনিয়ায় ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ শব্দটি প্রথম ১৯৬৩ সালে দেখা যায়। লেখক ভিনসেন্ট গ্যাডিস এ শব্দ প্রবর্তন করেন। ১৯৭৪ সালে লেখক চার্লস বার্লিটজ এ বিষয়ে আরেকটি বই প্রকাশ করলে সর্বাধিক বিক্রীত বই হিসেবে আলোচিত হয়। তখন থেকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মিথ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭০ সালে বিমানচালক ব্রুস গারনন বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মধ্য দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় একটি অদ্ভুত সুড়ঙ্গের মতো মেঘের মুখোমুখি হওয়ার কথা জানালে মিথ আরও শক্তিশালী হয়। বিজ্ঞানী ক্রুজেলনিকিসহ অনেক বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন, অস্বাভাবিক মেঘ গঠন বা দৃষ্টি ভ্রমের মতো আবহাওয়া–সংক্রান্ত ঘটনা ছিল সেটি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া