কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বদলে দিচ্ছে মহাজাগতিক ঘটনা আবিষ্কারের ধরন
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট, ২০২৫

বহুকাল ধরে বিজ্ঞানীরা টেলিস্কোপে চোখ রেখে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করেছেন। গত শতাব্দীতে বিভিন্ন টেলিস্কোপ মহাকাশে স্থাপন করা হলে মহাজাগতিক অনুসন্ধানে নতুন চমক তৈরি হয়। নতুন নতুন চমক আসলে আবিষ্কারের গতি ছিল বেশ ধীর। কয়েক বছর ধরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিভিন্ন টুলস ব্যবহারের কারণে মহাজাগতিক ঘটনা ও বস্তু আবিষ্কারে নানা ধরনের চমক দেখা যাচ্ছে। দ্রুতগতিতে অনেক তথ্য বিশ্লেষণ করার সুযোগ বাড়ছে। অস্বাভাবিক সব মহাজাগতিক ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করার জন্য তৈরি বিশেষ ধরনের এআই টুল ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে নক্ষত্রের বিস্ফোরণের মতো অনেক দূরের ঘটনা শনাক্ত করা যাচ্ছে সহজেই। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি কৃষ্ণগহ্বরের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করার সময় একটি বিশাল নক্ষত্রের বিস্ফোরণের প্রথম পরিচিত ঘটনা রেকর্ড করেছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সম্ভাব্যভাবে সম্পূর্ণ নতুন শ্রেণির নক্ষত্র বিস্ফোরণ আবিষ্কারের তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এসএন ২০২৩ জেকেডি নামের নক্ষত্রটি প্রথম ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ক্যালিফোর্নিয়ায় জুইকি ট্রানজিয়েন্টে পর্যবেক্ষণ করা হয়। প্রায় ৭৩ কোটি আলোকবর্ষ দূরে ন্যূনতম নক্ষত্র গঠনের কার্যকলাপসহ একটি ছায়াপথে এই নক্ষত্রের অস্বাভাবিক মহাজাগতিক ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। বিশেষভাবে ডিজাইন করা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুলস ব্যবহার করে একে শনাক্ত করা হয়।
বিজ্ঞানীরা জানান, প্রাথমিক একটি তথ্যের মাধ্যমে মহাকাশ ও বিশ্বজুড়ে রাখা বিভিন্ন টেলিস্কোপ বিস্ফোরণ পর্যবেক্ষণ শুরু করে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঘটনাটি ধারণ করে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক অ্যাশলে ভিলার বলেন, বিস্ফোরণের আগে একটি বিশাল নক্ষত্রের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার কিছু স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায়। আমরা মনে করি এটি লুকানো বিস্ফোরণের একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন শ্রেণির অংশ হতে পারে। এআই আমাদের এই বিশেষ বিস্ফোরণ আবিষ্কার করতে সাহায্য করছে।
প্রাথমিকভাবে নক্ষত্রটি একটি সাধারণ সুপারনোভা বলে মনে হয়েছিল। একটি উজ্জ্বল শিখা, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে বলে বিশাল নক্ষত্রের মৃত্যুর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেখানে আবার কয়েক মাস পরে আবার উজ্জ্বলতা দেখেন। ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায়, বিস্ফোরণের আগে প্রায় চার বছর বা দেড় হাজার দিন ধরে সিস্টেমের উজ্জ্বলতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। বিস্ফোরণের আগের পর্যায় অস্বাভাবিক এমন আচরণ ইঙ্গিত দেয় নক্ষত্রটি যথেষ্ট মহাকর্ষীয় চাপের মধ্যে ছিল। নক্ষত্রটি কোনো একটি কৃষ্ণগহ্বরের কক্ষপথে হয়তো আটকে ছিল। আলোক বক্ররেখা ও বর্ণালি থেকে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে নক্ষত্রটি তার শেষের আগের বছরগুলোতে দুটি উল্লেখযোগ্য বিস্ফোরণের সম্মুখীন হয়েছিল। এতে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস নির্গত হয়। বিস্ফোরণের প্রাথমিক আলোর শিখরটি বিস্ফোরণ তরঙ্গের কারণে ঘটেছিল। দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষের ফলে কয়েক মাস পরে দ্বিতীয় শিখর তৈরি হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষীয় টান তারাটিকে ভেঙে ফেলে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, তারাটিকে প্রাকৃতিকভাবে বিস্ফোরিত হওয়ার আগেই কৃষ্ণগহ্বর গ্রাস করে নেয়। পুরো গবেষণার তথ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ইনস্টিটিউট ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ফান্ডামেন্টাল ইন্টারঅ্যাকশনের গবেষক আলেকজান্ডার গ্যাগলিয়ানো বলেন, এই ধরনের ঘনিষ্ঠ মিথস্ক্রিয়া একটি তারাকে বিস্ফোরিত করতে পারে। বেশির ভাগ বৃহৎ তারা বাইনারি আকারে থাকে, কিন্তু বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে ভর বিনিময়ের মাধ্যমে একটির তথ্য জানা অবিশ্বাস্যভাবে বিরল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিস্তারিতভাবে এমন বিরল মহাজাগতিক ঘটনা শনাক্ত করা যাচ্ছে। ভবিষ্যতের ভেরা সি রুবিন অবজারভেটরির মতো টেলিস্কোপ থেকে এমন তথ্য আরও জানার সুযোগ বাড়বে। রিয়েল-টাইম এআই শনাক্তকরণের কারণে রুবিন অবজারভেটরির মতো বড় বড় মানমন্দির জ্যোতির্বিদদের বিভিন্ন অস্বাভাবিক ও জটিল ঘটনা আবিষ্কার ও বিশ্লেষণ করে বাইনারি সিস্টেমে বিশাল তারার জীবন চক্র আরও ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস