ছোট্ট ফাইয়াজের বড় স্বপ্ন: কারাতে চ্যাম্পিয়ন হতে চায় বিশ্ব মঞ্চে
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

শিশুদের খেলাধুলা নিয়ে আজকাল অভিভাবকদের আগ্রহ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু খেলাধুলা মানেই শুধু ক্রিকেট-ফুটবল নয়। নতুন প্রজন্ম এখন পছন্দ করে ব্যতিক্রমী খেলাধুলা। তারই একটি উজ্বল উদাহরণ রাজধানীর একটি কারাতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সি সিটি ক্লাবের ছোট্ট ছাত্র ফাইয়াজ।
বয়স মাত্র আট বছর পেরিয়েছে, অথচ তার চোখে মুখে একটাই স্বপ্ন—একদিন বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে দেশের পতাকা উড়িয়ে আনা।
শুরুটা ছোট্ট স্বপ্ন থেকে
ফাইয়াজের বাবা-মা জানান, মাত্র পাঁচ বছর বয়সে খেলাধুলার প্রতি তার ঝোঁক তৈরি হয়। বাড়ির আশেপাশের খেলাধুলায় সবসময় সবচেয়ে সক্রিয় থাকত ফাইয়াজ। একদিন টেলিভিশনে একটি আন্তর্জাতিক কারাতে প্রতিযোগিতা দেখে সে মুগ্ধ হয়ে যায়। তখনই সিদ্ধান্ত নেয় যে সে কারাতে শিখবে। বাবা-মাও তার আগ্রহকে উৎসাহ দিয়ে ভর্তি করিয়ে দেন ‘সি সিটি ক্লাবে’র জুনিয়র ব্যাচে।
ক্লাবের কোচ মাস্টার হাবিবুর রহমান বলেন, “ফাইয়াজ খুব মনোযোগী। অন্য শিশুদের মতো সে শুধু খেলতে আসে না, প্রতিটি মুভমেন্ট মন দিয়ে শিখে। আমি দেখেছি সে নিজে নিজে বাড়িতেও অনুশীলন করে। তার মধ্যে একজন প্রকৃত স্পোর্টসম্যানের মনোভাব রয়েছে।”
সাফল্যের সিঁড়িতে প্রথম ধাপ
মাত্র তিন বছরের মধ্যে ফাইয়াজ ইতিমধ্যেই কয়েকটি স্থানীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্য পেয়েছে। গত আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত ঢাকা জেলা কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে সে নিজের ওজন শ্রেণিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ছোট্ট বয়সে এই অর্জন তার আত্মবিশ্বাস কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
ম্যাচ শেষে ফাইয়াজ উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলে, “আমি যখন ট্রফিটা হাতে পেলাম, মনে হলো আমি সত্যি পারি! এখন আমি দেশের বাইরে খেলতে চাই, বাংলাদেশকে সবার কাছে পরিচিত করতে চাই।”
স্বপ্ন আরও বড়–বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা
ফাইয়াজের স্বপ্ন এখন আর শুধু স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়। সে চায় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিতে। বিশেষ করে এশিয়ান কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপ ও জুনিয়র ওয়ার্ল্ড কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে। এর জন্য নিয়মিত অনুশীলন, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও ফিটনেস ট্রেনিং করছে।
ফাইয়াজের কোচ জানান, তার পারফরম্যান্স দেখে যদি সঠিক সহযোগিতা পাওয়া যায়, তবে দুই-তিন বছরের মধ্যেই সে জাতীয় দলের জুনিয়র স্কোয়াডে সুযোগ পেতে পারে।
ফাইয়াজের মা বলেন, “আমরা চাই ফাইয়াজ তার স্বপ্ন পূরণ করুক। বাংলাদেশে ফাইয়াজের খুব জনপ্রিয় না হলেও এখন অনেক বাচ্চা এতে আগ্রহী হচ্ছে। যদি ফাইয়াজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাফল্য পায়, তাহলে আরও অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানকে এই খেলায় যুক্ত করতে উৎসাহ পাবেন।”
ফাইয়াজের বাবা যোগ করেন, খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশোনার দিকেও সমান মনোযোগ রাখছে সে। স্কুলের শিক্ষকরাও তাকে সমর্থন করেন এবং প্রতিযোগিতার সময় অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করে দেন।
কারাতের সামাজিক গুরুত্ব
কারাতে শুধুমাত্র একটি খেলা নয়, এটি শৃঙ্খলা, আত্মরক্ষা ও মানসিক দৃঢ়তার শিক্ষা দেয়। শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য এবং পরিশ্রমের অভ্যাস তৈরি করে। ফাইয়াজের মতো শিশুদের গল্প তাই অনুপ্রেরণা হতে পারে সমবয়সী অন্যদের জন্য।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ফাইয়াজ এখন সপ্তাহে পাঁচদিন নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। কোচ ও ক্লাব কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা আছে তাকে আগামী বছরের জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার। যদি সেখানে ভালো ফল করে, তবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ আসবে।
ফাইয়াজ বলে, “আমি চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। আমি চাই বাংলাদেশের পতাকা সবার উপরে উড়ুক।”
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের মধ্যে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। কিন্তু এখনও পরিকাঠামো, আন্তর্জাতিক সুযোগ ও আর্থিক সহায়তা সীমিত। ফাইয়াজের মতো মেধাবী খেলোয়াড়দের জন্য সঠিক সুযোগ তৈরি হলে ভবিষ্যতে তারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের নাম উজ্বল করতে পারবে।
ফাইয়াজের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বড় স্বপ্ন বয়সে নয়— মনোবল আর পরিশ্রমেই পূরণ হয়। হয়তো কয়েক বছর পর আমরা টিভির পর্দায় দেখতে পাবো, বাংলাদেশের হয়ে বিশ্ব কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপে পদক জিতে ফাইয়াজ দেশের গৌরব বাড়াচ্ছে।
ইএইচ
আরও পড়ুন