প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব তাদের আয় (মনিটাইজেশন) নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা চলছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর প্রভাব অনেকের ধারণার মতো তেমন ভয়াবহ হবে না। দ্য নিউজকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন জিও নিউজ।
ইউটিউবের মতে, তারা ‘রিইউজড কনটেন্ট’ নীতি হালনাগাদ করেছে। তাতে বোঝানো হয় ঠিক কোন ধরনের পুনঃব্যবহৃত বা ‘অতিরিক্ত সম্পাদনা’ করা কনটেন্ট গ্রহণযোগ্য নয়। নীতিটির নামও বদলেছে। আগে একে বলা হতো ‘রিইউজড কনটেন্ট’। এখন থেকে একে বলা হবে ‘ইনঅথেন্টিক কনটেন্ট’। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এজেন্সি পরিচালনাকারী ও একাধিক ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনাকারী তালহা লাবিব জানান, এই খবর অযথা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, যে ধরনের কনটেন্ট ইউটিউব নিরুৎসাহিত করতে চায়, সেগুলো আগেও আয় করার যোগ্য ছিল না। প্ল্যাটফর্ম সবসময় মৌলিক ও আসল কনটেন্ট নির্মাতাদেরকেই অগ্রাধিকার দেয়।
তিনি আরও বলেন, অনেক নির্মাতা উদ্বিগ্ন যে এই আপডেট তাদের আয়ের সুযোগ সীমিত করে দেবে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। যারা ভুয়া বা অনুপযুক্ত কনটেন্ট ছড়ায়, তাদের বিরুদ্ধে ইউটিউব আগেও ব্যবস্থা নিয়েছে, ভবিষ্যতেও নেবে। ফলে সবাই কনটেন্ট আপলোড করার সময় আরও সতর্ক হবে।
ইউটিউব তাদের হেল্প পেজে জানিয়েছে, ১৫ জুলাই ২০২৫ থেকে পার্টনার প্রোগ্রামের নীতিতে আপডেট এসেছে, যাতে স্পষ্টভাবে ‘ইনঅথেন্টিক কনটেন্ট’-এর সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। মূলত ব্যাপকভাবে উৎপাদিত বা বারবার কপি হওয়া কনটেন্ট যাতে আয়যোগ্য না হয়, সেটিই লক্ষ্য।
ডিজিটাল মার্কেটার ও কনটেন্ট বিশেষজ্ঞ আনুশা আসিফ বলেন, অনেক চ্যানেল অন্য ইউটিউবারদের ক্লিপ ব্যবহার করে ভিডিও বা শর্টস বানায়। এখন এসব অ্যাকাউন্ট আর আয় করতে পারবে না। তিনি যোগ করেন, মূল কনটেন্ট নির্মাতারাও চাপের মুখে পড়তে পারেন। তাদের কনটেন্ট যদি অতিরিক্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে, ইউটিউব সেই চ্যানেলকেও সতর্ক করবে বা শাস্তি দিতে পারে।
তালহা লাবিব মনে করেন, এই ধরনের স্ট্রাইক প্রত্যাহারযোগ্য এবং মূল চ্যানেলগুলো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। তবে আনুশার মতে, চ্যানেল ফিরে পেলেও র্যাঙ্কিং আগের অবস্থায় যেতে সময় লাগবে।
প্রথমদিকে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে ইউটিউব সব ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভিডিও- যা বারবার একই রকম কনটেন্ট তৈরি করে- আয় থেকে বাদ দেবে। তবে লাবিব বলেন, নতুন নিয়মে এআই ভিডিও এখনো অনুমোদিত। মূলত ডিপফেইক বা বিভ্রান্তিকর এআই কনটেন্টের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে প্রকাশ করা জরুরি।
টেক বিশেষজ্ঞ শাহরুখ মালিক বলেন, ভোক্তা হিসেবে আমি মনে করি, এআই কনটেন্ট সীমিত করা ভালো। আগে এগুলো মজার ছিল। কিন্তু এখন অতিরিক্ত হয়ে গেছে। তবে কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য তিনি বলেন, এটি আমাদের বিকল্প সীমিত করছে। অনেকের উপার্জন এসব ভিডিওর ওপর নির্ভর করত। এখন তাদের আরও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এখন কনটেন্ট নির্মাতা ও ইউটিউবের মধ্যে একধরনের বুদ্ধির লড়াই শুরু হবে। নির্মাতারা আয় করার জন্য নতুন পথ বের করবেন, আর ইউটিউব সেগুলো ঠেকানোর উপায় খুঁজবে।
আরও পড়ুন