Advertisement

মোবাইলে চার্জ দ্রুত শেষ হলে সতর্ক হোন, এটি হ্যাকিংয়ের লক্ষণ হতে পারে!

জনকণ্ঠ

প্রকাশ: ১৬ জুলাই, ২০২৫

ছ‌বি: প্রতীকী
ছ‌বি: প্রতীকী

বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্মার্টফোন একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। অফিসের কাজ, পারিবারিক যোগাযোগ, অনলাইনে কেনাকাটা, বিনোদন—সব কিছুতেই এখন মোবাইল ফোনের ব্যবহার অপরিহার্য। তবে অনেক সময় দেখা যায়, মোবাইলের ব্যাটারি অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। আগে যেটা একবার ফুল চার্জে সারাদিন চলে যেত, এখন তা অল্প সময়েই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। সাধারণভাবে আমরা ধরে নিই, হয়তো ব্যাটারির আয়ু কমে গেছে অথবা ফোনটি পুরোনো হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যাটারির এই অস্বাভাবিক খরচের পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে আরও ভয়ংকর কোনো কারণ—যেমন হ্যাকিং।

অনেক সময় হ্যাকাররা আপনার অজান্তেই আপনার ফোনে ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে ফেলে। এই ধরনের সফটওয়্যার সবসময় ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে এবং আপনার ফোনের তথ্য সংগ্রহ করে হ্যাকারদের কাছে পাঠাতে থাকে। এতে মোবাইলের প্রসেসর এবং ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়ে, ফলে ব্যাটারির ওপর চাপ পড়ে এবং তা দ্রুত শেষ হয়ে যায়। আপনি হয়তো খেয়াল করছেন না, কিন্তু আপনার ফোন সবসময় ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু না কিছু কাজ করছে।

অনেক সময় সন্দেহজনক কোনো অ্যাপ বা লিংকে ক্লিক করার মাধ্যমে এই হ্যাকিং ঘটতে পারে। আপনি হয়তো ভেবেছেন এটি একটি সাধারণ বিজ্ঞাপন বা অফার, কিন্তু সেটার মধ্যেই লুকানো ছিল ভাইরাস বা স্পাইওয়্যার। একবার ইনস্টল হয়ে গেলে এই সফটওয়্যারগুলো নিজে নিজেই বিভিন্ন অনুমতি নিয়ে নেয়, যেমন ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, লোকেশন, কনট্যাক্ট লিস্ট এবং এসএমএস-এ প্রবেশাধিকার। এরপর তা নিয়মিত আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে এবং গোপনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। ফলে আপনার মোবাইলের ডেটা খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি ব্যাটারিও দ্রুত ফুরিয়ে যায়।

অনেক ক্ষেত্রে আপনি দেখতে পারেন যে আপনার ফোনে কিছু অজানা অ্যাপ ইনস্টল হয়েছে, যেগুলো আপনি নিজে কখনো ডাউনলোড করেননি। এগুলোর বেশিরভাগই ম্যালওয়্যার বা স্পাইওয়্যার হতে পারে। আবার এমনও হয়, ফোনের স্ক্রিন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, নিজে নিজে চালু হচ্ছে, বা হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। এসব লক্ষণও হ্যাকিংয়ের ইঙ্গিত হতে পারে।

মোবাইল হ্যাক হয়ে গেলে শুধু ব্যাটারি নয়, আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে পড়ে। আপনার ব্যাংকিং অ্যাপ, পাসওয়ার্ড, মেসেজ, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার কথোপকথন হ্যাকারদের হাতে চলে যেতে পারে। ফলে আপনি নানা ধরনের জালিয়াতির শিকার হতে পারেন।

এই ধরনের ঝুঁকি এড়াতে হলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। অজানা বা সন্দেহজনক কোনো লিংকে কখনোই ক্লিক করা উচিত নয়। গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর ছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করা ঝুঁকিপূর্ণ। এমনকি প্লে স্টোরের অ্যাপের ক্ষেত্রেও রেটিং, রিভিউ এবং ডেভেলপারের তথ্য ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। ফোনে কোনো অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ থাকলে তা ডিলিট করে দেওয়া ভালো।

প্রায় সময় দেখা যায়, হ্যাকাররা এমন কিছু অ্যাপ বানায় যেগুলো দেখতে একদম সাধারণ অ্যাপের মতো, যেমন ফটো এডিটর, স্ক্যানার, কিংবা গেম। কিন্তু এগুলোর ভিতরে লুকানো থাকে ম্যালওয়্যার। তাই কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার আগে তার প্রয়োজনীয়তা যাচাই করুন।

সিকিউরিটি বাড়াতে মোবাইলে সবসময় আপডেটেড অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা উচিত। অনেক অ্যান্টিভাইরাস এখন মোবাইলের ব্যাটারি ব্যবহারের ধরন বিশ্লেষণ করে জানাতে পারে, কোন অ্যাপ অস্বাভাবিকভাবে বেশি ব্যাটারি খরচ করছে বা সন্দেহজনক আচরণ করছে।

তাছাড়া মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের নিয়মিত আপডেট গ্রহণ করাও অত্যন্ত জরুরি। নতুন আপডেটগুলোতে সাধারণত সিকিউরিটি প্যাচ দেওয়া হয়, যা হ্যাকারদের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যদি আপনি দেখেন যে আপনার মোবাইল ফোনের ব্যাটারি হঠাৎ করেই খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, এবং আপনি কোনো নতুন অ্যাপ ইনস্টল করেননি বা ফোনের ব্যবহার আগের মতোই আছে, তাহলে অবশ্যই সাবধান হতে হবে। দ্রুত ফোনটি কোনো দক্ষ টেকনিশিয়ানের কাছে নিয়ে গিয়ে স্ক্যান করান। প্রয়োজনে ফোনটি রিসেট করে ফেলুন, তবে আগে অবশ্যই দরকারি ডেটা ব্যাকআপ নিয়ে রাখুন।

স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় একটু সচেতন থাকলেই অনেক বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। মনে রাখবেন, মোবাইলের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হওয়াকে হালকাভাবে নিলে তা হতে পারে বড় বিপদের কারণ। সচেতন থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

আরও পড়ুন

Lading . . .