Advertisement

চিকুনগুনিয়ার অসহ্য ব্যথা কমাতে যা করবেন

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের একটি বিশেষ লক্ষণ হচ্ছে, শরীর অনেক ব্যথা করেছবি: পেক্সেলস
চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের একটি বিশেষ লক্ষণ হচ্ছে, শরীর অনেক ব্যথা করেছবি: পেক্সেলস

দেশে এ বছর ডেঙ্গু জ্বরের পাশাপাশি চিকুনগুনিয়ার প্রকোপও গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশি। চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ। ডেঙ্গুর মতো চিকুনগুনিয়াও এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়।

এই রোগের প্রধান লক্ষণ জ্বর এবং গিঁটে ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা। অনেক সময় জ্বরের চেয়েও এই ব্যথা রোগীকে বেশি কাবু করে ফেলে। হাঁটু, গোড়ালি, কবজি ও অন্যান্য অস্থিসন্ধিতে এ ব্যথা এতটাই তীব্র হতে পারে যে রোগী হাঁটাচলা করতেও অক্ষম হয়ে পড়েন।

যাঁদের আগে থেকে বাত (আর্থ্রাইটিস), কোমর বা ঘাড়ের ব্যথার মতো সমস্যা আছে, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে তাঁদের সেই ব্যথা অনেক গুণ বেড়ে যেতে পারে, যা বিভ্রান্ত করতে পারে চিকিৎসক ও রোগী উভয়কেই।

বিভ্রান্তি এড়াতে চিকুনগুনিয়া শনাক্তের ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন, আইজিএম ও আইজিজি অ্যান্টিবডির রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

চিকুনগুনিয়ার নির্দিষ্ট কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। এর চিকিৎসা মূলত লক্ষণ অর্থাৎ উপসর্গভিত্তিক। তবে এই রোগের ফলে যে ব্যথা হয়, তা সাধারণ ব্যথার ওষুধে কমে না।

এ বিষয়ে বিশদ কোনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পাওয়া না গেলেও প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ, প্রদাহবিরোধী ওষুধ যেমন ন্যাপ্রোক্সেন বা ডাইক্লোফেনাকের মতোই বা তার চেয়েও ভালো কাজ করে।

পাশাপাশি মেথোকার্বামল বেশ কার্যকর। প্রচুর পরিমাণ তরল—যেমন খাওয়ার স্যালাইন, ডাবের পানি, সাধারণ পানি ও অন্যান্য ফলের জুস মাংসপেশির সংকোচন কমাতে দারুণ ভূমিকা রাখে।

চিকুনগুনিয়ার ব্যথার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি খুবই ধীর গতিতে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে ইলেকট্রোথেরাপির মাধ্যমে ব্যথা নিরাময় করা যেতে পারে।

তবে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ সক্রিয় থাকা অবস্থায় ম্যানিপুলেশন ও হাই ইনটেনসিটি এক্সারসাইজ করা উচিত নয়।

চিকুনগুনিয়ায় যেহেতু শরীরে উচ্চমাত্রার প্রদাহ থাকে, সেহেতু ম্যানিপুলেশন ও এক্সারসাইজ ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে।

এ ক্ষেত্রে বরফের সেঁক দারুণ কাজ করে। রোগীর সংবেদনশীলতা অনুযায়ী বরফের সেঁক দিতে হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে হালকা গরম সেঁকও কাজ করে।

এটিও নির্ভর করে রোগীর সংবেদনশীলতা ও ঠান্ডা-গরম গ্রহণের মাত্রার ওপর। প্রদাহের মাত্রা অনুযায়ী ঠান্ডা বা গরম প্রয়োগ করা উচিত।

অ্যাকটিভ ইনফ্লামেশন কমে যাওয়ার পর রোগীর অবস্থা মূল্যায়ন বা পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ী রিহ্যাবিলিটেশন অর্থাৎ স্বাভাবিক জীবনযাপন ও সক্ষমতায় ফিরে আসার প্রক্রিয়া কেমন হবে, সেই পরিকল্পনা সাজাতে হবে।

চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু উভয় রোগের বাহক এডিস মশা হওয়ায় সরকারের পাশাপাশি আমাদেরও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। মশার কামড় থেকে যেমন নিজেকে রক্ষা করতে হবে, ঠিক তেমনি মশা নিধন করে মশার বংশবিস্তার রোধ করতে হবে।

ডা. মোহাম্মদ আলী , বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

Lading . . .