Advertisement

গ্লুকোমা যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট, ২০২৫

গ্লুকোমা চোখের এক জটিল সমস্যা। গ্লুকোমা হলে চোখের প্রেশার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। চোখে দৃষ্টি পরিবাহী স্নায়ু বা অপটিক নার্ভ স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে পড়ে। দ্রুত শনাক্ত ও চিকিৎসা না করালে এতে স্থায়ী অন্ধত্বের ঝুঁকি থাকে।

গ্লুকোমা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে একেবারে নিরাময় সম্ভব নয়। এ রোগের চিকিৎসা সারা জীবন করে যেতে হয়। এতে দৃষ্টিশক্তি যতটুকু কমে গেছে, তা আর হয়তো ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে দৃষ্টি যাতে আরও বেশি কমে না যায়, এর জন্য চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

করণীয় ও চিকিৎসা

চিকিৎসক রোগীর চোখ পরীক্ষা করে চোখের চাপের মাত্রা নির্ণয় করে গ্লুকোমা শনাক্ত করেন। চোখের প্রেশারের নিরাপদ মাত্রা হলো ২১ মিলিমিটার অব মার্কারি। স্বাভাবিক মাত্রা কারও ক্ষেত্রে কম-বেশি হতে পারে। তাই শুধু চোখের প্রেশারের ওপর নির্ভর করা হয় না। পাশাপাশি স্নায়ু ক্ষয় হয়েছে কি না, তা ওসিটি পরীক্ষা করে দেখা হয়। চোখের প্রেশারের সঙ্গে স্নায়ু ক্ষয়—এ দুটিকে একসঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে তবেই গ্লুকোমার চিকিৎসা করা হয়।

চিকিৎসক রোগীর চোখ পরীক্ষা করে চোখের চাপের মাত্রা নির্ণয় করে গ্লুকোমা শনাক্ত করেন।

এই চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, তা নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। দীর্ঘদিন একটি ওষুধ ব্যবহারে কার্যকারিতা কমে যেতে পারে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। তাই নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অর্থাৎ ফলোআপ করাটা জরুরি। চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখতে হবে গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কি না। পরিবারের সবার চোখ পরীক্ষা করে গ্লুকোমা রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া উচিত।

গ্লুকোমার প্রচলিত তিন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। ওষুধ, লেজার চিকিৎসা ও শল্যচিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার। এর মধ্যে একটি প্রাইমারি ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা। এ ক্ষেত্রে প্রথম দিকে অ্যান্টি গ্লুকোমা ড্রপ দিতে হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যর্থ হলে বা স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে করতে হয় অস্ত্রোপচার। সেকেন্ডারি গ্লুকোমার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কারণ নির্ণয় করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

প্রাইমারি ওপেন অ্যাঙ্গেল বা ন্যারো অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমার চূড়ান্ত চিকিৎসা হলো অপারেশন বা অস্ত্রোপচার। জন্মগত গ্লুকোমার একমাত্র চিকিৎসাও অস্ত্রোপচার। সেকেন্ডারি গ্লুকোমার ক্ষেত্রেও অনেক সময় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। চোখের প্রেশার বা আইওপি নিয়ন্ত্রণ করার প্রচলিত অস্ত্রোপচারকে বলা হয় ট্রেবিকুলেক্টমি।

শেষ পদ্ধতি হলো লেজার চিকিৎসা। ন্যারো অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা লেজার। ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমায়ও অনেক ক্ষেত্রে লেজার চিকিৎসাই ভরসা।

মনে রাখবেন গ্লুকোমা একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার করে ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে একজন গ্লুকোমা রোগী স্বাভাবিক দৃষ্টি নিয়ে বাকি জীবনটা সুন্দরভাবে কাটিয়ে দিতে পারেন। গ্লুকোমা অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। বয়স ৪০ পেরিয়ে গেলে চোখ পরীক্ষা করে চোখের প্রেশার জেনে নিন।

অধ্যাপক ডা. ইফতেখার মো. মুনির , গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞ পরিচালক, বাংলাদেশ আই হসপিটাল, মালিবাগ, ঢাকা

Lading . . .