দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে: রূপকথা থেকে বাস্তব রোম্যান্সের নতুন স্বরূপ
প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

১৯৯৫ সালে পরিচালক Aditya Chopraর হাত ধরে আসে DDLJ; একটি সিনেমা যা শুধু একটি ভালোবাসার গল্প ছিল না বরং রূপকথা আর বাস্তবের মাঝামাঝি এমন এক নতুন প্রেমের রূপ বুনেছিল। সেই গল্পের নায়ক-নায়িকা Shah Rukh Khan এবং Kajol-র রূপে রাজ ও সিমরান হয়ে ভারতের and প্রবাসী ভারতীয়দের ইচ্ছা, আশা, পরিবার ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণে 'ভালোবাসা' কে নতুনভাবে ভাবার রূপ দেখাল DDLJ।
DDLJ-র বিশেষত্ব হলো, এটি রূপকথা বা কল্পনার মতো হাসি-খুশি, স্বপ্নময় নয়; বরং বাস্তব জীবনের বাধা, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, পরিবার এবং ব্যক্তিগত ইচ্ছার কোথাও সংমিশ্রণ। রাজ-সিমরানের সম্পর্ক সেই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে, যেখানে তারা স্বপ্ন দেখেছিল কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের পথে ছিল পারিবারিক সম্মান, সামাজিক বাধা, কানেকশন।

অনেক বোলিউড চলচ্চিত্রেই প্রেম দেখানো হতো দুই যুবকের পালিয়ে যাওয়া, সামাজিক নিয়ম নাকচ করে বা মুখ বন্ধ করেই। কিন্তু DDLJ দেখালো যে, প্রেম মানেই পারিবারিক বন্ধন ভাঙা নয়; সঠিক সময়, ধৈর্য, সম্মান ও বোঝাপড়ার সঙ্গে ভালোবাসাও সম্ভব। রাজ-সিমরানের ধরন দেখিয়েছিল, 'বিপ্লব নয়, সম্মান ও প্রেমের মিলন' সম্ভব।
DDLJ-র আরেক বড় বিশেষতা ছিল তার দৃশ্যপট: সুইজারল্যান্ডের আলপাইন পাহাড়, সবুজ মাঠ, পাঞ্জাবি সরিষার গোলাপি–হলুদ রঙের মাঠ এগুলো শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড নয়; প্রেম, শূন্যতা, বাসনা আর প্রত্যাশার প্রতীক। এই ভিজ্যুয়াল গ্লোরি ভারতীয় সিনেমায় রূপকথার মতো খেলায় নতুন মাত্রা এনে দিয়েছিল।

একই সঙ্গে, সিনেমা দেখিয়েছিল কীভাবে ভারতীয় সংস্কৃতি, পরিবার ও মূল্যবোধের সঙ্গে আধুনিকতা মিশিয়ে দেওয়া যায়। বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয় (NRI) পরিবারগুলোর জন্য DDLJ ছিল সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন তাদের জন্য অনুভূতি, যন্ত্রণার পাশাপাশি সম্পর্কের পারিবারিক মূল্যবোধও বহন করেছিল সিনেমা।
DDLJ-র অন্যতম মেটাফোরিক উপাদান ছিল ট্রেন। শেষ পর্যন্ত যখন রাজ রেলস্টেশনে দৌড়ে যায় এবং সিমরান ছুড়ে দেয়া সেই ট্রেনে ঝাঁপ দেয় সেটি শুধু সংঘর্ষ বা নাটকীয়তা ছিল না। সেটা ছিল “বাস্তবিক কঠিন সিদ্ধান্ত, সাহস, আর এক শেষ সুযোগের নীরব আবেদন”। সেই ট্রেন দৃশ্যটি হয়ে ওঠে, ভারতীয় রোম্যান্সের শ্রেষ্ঠ ছাপ।

এমনকি সিনেমার সেটি স্মৃতি: সাবেক প্রবাসীদের জন্য পুরনো দেশ, শেকড়ে ফিরে আসার আশা, আর নতুন প্রজন্মের ভারতীয় হিসেবে আত্মপরিচয় সবকিছুই প্রতিফলিত হয় ট্রেনের হুঙ্কারে।
রোম্যান্স ও পরিবারকে সমন্বয়: DDLJ দেখিয়েছে, প্রেম মানেই শুধু ইচ্ছা নয়, দায়িত্বও। পারিবারিক সম্মান ও ভালোবাসার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকতে পারে।
অভিজাত রূপকথা নয় সাধারণ মানুষের গল্প: রাজ নায়ক ছিল অহংকারী, ছেলেমানুষ; কিন্তু সে বদলায়, দায়িত্ব নেয়। সেটা দেখিয়ে দেয়, 'সাধারণ মানুষও রূপকথার নায়ক হতে পারে।
বরাবর জনপ্রিয়তা ও সামাজিক প্রতিফলন: সিনেমাটি মাত্র এক ফিল্ম ছিল না- এটি হয়ে উঠেছে সংস্কৃতিক ঘটনা। মুম্বাইয়ের Maratha Mandir-এ অনবরত চলা, প্রজন্ম বদলের পর প্রজন্ম পর্যন্ত এটি রোম্যান্সিক রীতি হয়ে দাঁড়ায়।

নায়ক চরিত্রের পুনরসংজ্ঞা: শাহরুখ খান যা করেছিলেন, তার আগে বুলিউডে 'রোম্যান্টিক হিরো' সাধারণত ছিল না। DDLJ-র রাজ চরিত্র দেখিয়েছিল, হিরো হতে হলে macho-ই থাকতে হবে এমন নয়; কোমলতা, শ্রদ্ধা, হাস্যরস- সবই হিরোই করতে পারে।
দীর্ঘকাল ধরে DDLJ শুধু একটি সিনেমা থাকেনি এটি হয়ে উঠেছে একটি আদর্শ, রূপক এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়। সেই জন্য নতুন প্রজন্ম, NRI ভারতীয়, প্রবাসী পরিবার যারা সংস্কৃতি, ভালোবাসা, পরিবারের মধ্যে সমন্বয় খুঁজে চলেছেন DDLJ-র গল্প এখনও প্রাসঙ্গিক।
ফ্যাশন, মিউজিক, সিনেমাটিক স্টাইল সবকিছুতেই DDLJ-র ছাপ রয়েছে। রাজের লেদার জ্যাকেট থেকে শুরু করে সুইস ল্যান্ডস্কেপ, পাঞ্জাবি পল্লীর সরিষা মাঠ সবকিছুই প্রেমের এক নতুন ভাষা তৈরি করেছে।
আর সবচেয়ে বড় বিষয় DDLJ দেখিয়েছে, প্রেম এবং প্রথা, বেঁচে থাকা এবং স্বপ্ন একে অপরের পরিপূরক।
'দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে' কেবল একটা চলচ্চিত্র নয়; এটি ছিল ভারতীয় রোম্যান্সিক কল্পনাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার প্রয়াস যেখানে প্রেম, পরিবার, সংস্কৃতি, অধিকার সব মিলিয়ে।
এই সিনেমা রূপকথা আর বাস্তবের মধ্যকার ফাঁক পূরণ করেছে। রাজ ও সিমরানের প্রেম দেখিয়েছিল, ভালোবাসা মানে পালিয়ে যাওয়া নয়; পারিবারিক সম্মানপ্রাপ্তি, আত্মসম্মান ও দায়বোধের সঙ্গে প্রেম।
নতুন প্রজন্মের ভারতীয়-চাই তিনি দেশে থাকুন, প্রবাসে-যারা ভালোবাসা, সম্পর্ক, স্বপ্ন ও সংস্কৃতি-সবই একসঙ্গে চান, তাঁদের জন্য DDLJ এখনও প্রাসঙ্গিক।
এটাই DDLJ এর সত্যিকারের 'ক্লাসিক' হওয়ার কারণ: সময় বদলায়, মানুষ বদলায়, সংস্কৃতি বদলায় কিন্তু সাহস, ভালোবাসা, বোঝাপড়া আর দায়িত্ব-এসব মূল্যবোধ কখনো পুরনো হয় না।
জেএইচআর


