Advertisement

‘ম্যাডাম, হাসপাতাল যাবেন?’ আশার গান শুনে ড্রাইভার

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আশা ভোসলে। শিল্পীর ফেসবুক থেকে
আশা ভোসলে। শিল্পীর ফেসবুক থেকে

ভারতীয় সংগীতজগতের কিংবদন্তি আশা ভোসলের জন্মদিন আজ। ৯২-তে পা দিলেন আশা ভোসলে। অর্ধশতকের বেশি সময়জুড়ে অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি। তবে আর ডি বর্মনের সঙ্গে তাঁর যুগলবন্দী যেন আলাদা এক অধ্যায়। অনেক শ্রোতৃপ্রিয় গানের জন্ম দিয়েছে এই জুটি। কিন্তু ‘তিসরি মঞ্জিল’ ছবির ‘আজা আজা ম্যায় হুঁ পেয়ার তেরা’ গানটির পেছনের গল্পের সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা হয় না। আশা ভোসলের জন্মদিন উপলক্ষে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে জেনে নেওয়া যাক গানটির পেছনের কথা।

পঞ্চমের অডিশন, শাম্মির আপত্তি
১৯৮৪ সালে ফিল্মফেয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আর ডি বর্মন বলেছিলেন, নাসির হুসেনের প্রযোজনায় ‘তিসরি মঞ্জিল-এর সুরকার হিসেবে তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন গীতিকার মজরুহ সুলতানপুরী। মূলত দেব আনন্দকে নায়ক করে ছবিটি শুরু হলেও মতবিরোধের কারণে পরে আসেন শাম্মি কাপুর। তখনই বিপাকে পড়েন আর ডি। কারণ, শাম্মির পছন্দের সুরকার ছিলেন শংকর-জয়কিশন।

‘শাম্মি তখন ছিলেন রাজাদের মতো। নিজস্ব একটা গ্রুপ ছিল। তাই আমার সুযোগ শেষ ভেবেছিলাম। একদিন শাম্মি এসে বললেন, “এই পঞ্চম, গান শোনাও।” আমি প্রথমে “দেওয়ানা মুঝসা নাহি” বাজালাম। শাম্মি উঠে বললেন, “এ কেমন গান!” নাসির সাব ভেবেছিলেন, ছবিই শেষ। কিন্তু এরপর যখন আমি বাজালাম “আজা আজা ম্যায় হুঁ পেয়ার তেরা”, শাম্মি উঠে নাচতে শুরু করলেন। এভাবেই মিলল ছবির সুর করার অনুমতি।’

আশার দীর্ঘ রিহার্সাল, ড্রাইভারের দুশ্চিন্তা
ছবির জন্য প্রথমেই আর ডি গানটি শোনান আশা ভোসলেকে। গান শুনে তিনি অবাক—বিশেষ করে ‘আহ আহ আজা, আহ আহ আজা’ অংশটির জন্য শ্বাসপ্রশ্বাসে অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ দরকার। গানটিকে নিখুঁত করতে টানা আট দিন অনুশীলন করতে হয়েছিল তাঁকে।

মজার বিষয় হলো, এই রিহার্সালের মধ্যেই একদিন তাঁর ড্রাইভার ভেবেছিলেন, আশা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘ম্যাডাম, হাসপাতাল যাবেন?’ কারণ, গান অনুশীলনের সময় আশার শ্বাস এতটাই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল যে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে অবশ্যই জানা যায়, সেটিই ছিল বিখ্যাত ‘আজা আজা’র মূল সুরের রিহার্সাল।

লতার উৎসাহ
গান নিয়ে এতটাই চিন্তিত ছিলেন আশা যে একদিন গিয়ে হাজির হন বোন লতা মঙ্গেশকরের কাছে। লতার কথা আজও মনে রেখেছেন তিনি, ‘তুমি ভুলে যাচ্ছ যে তুমি প্রথমে মঙ্গেশকর, পরে ভোসলে। গান গাও, ভালোই হবে।’

‘তুমি না গাইলে আমি থামব’
আশা-আর ডির যুগলবন্দী বলতেই ভেসে আসে ‘পিয়া তু আব তো আজা’, ‘আও না গলে লাগাও না’, ‘ও হাসিনা জুলফোঁওয়ালি’র মতো গান। আশার গলায় তাঁর সুর যেন পূর্ণতা পেত। এক সাক্ষাৎকারে আশা বলেছিলেন, ‘পঞ্চম নিজেই বলতেন, “তুমি যদি আমার গান না গাও, আমি এসব গান বানানো বন্ধ করে দেব। তখন গিয়ে করব ভজন কীর্তন।” কারণ, অন্য কারও গলায় তিনি এই জাদু পেতেন না।’

ব্যক্তিগত জীবনে জুটি
দীর্ঘদিনের গানের এই জুটি ১৯৮০ সালে বিয়ে করেন। ১৯৯৪ সালে পঞ্চমের মৃত্যু পর্যন্ত তাঁরা ছিলেন পরস্পরের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী।

Lading . . .