Advertisement

স্লোভেনিয়ায় গিয়ে স্কাই ডাইভিং করলেন বাংলাদেশি তিন তরুণী, কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৫

24obnd

নেপালে বাঞ্জি জাম্প দিয়েছিলাম ২০১৯ সালে। তখনই মনে মনে ঠিক করেছিলাম, জীবনে একবার হলেও স্কাই ডাইভিং করব। তবে সেটা দুবাইয়ের মতো এলাকায় নয়, যেখানে ভেসে ভেসে পর্বতের দৃশ্য দেখা যাবে এমন জায়গায়।

আমার এই স্বপ্নের কথা অবনী রায় জানত। এ বছরের শুরুতে তার সঙ্গেই ঠিক করি আমার আসছে জন্মদিনে দীর্ঘদিনের স্বপ্নটা পূরণ করব। ১২ আগস্ট আমার জন্মদিন, তার আগেই খোঁজখবর করি—কোথায় স্কাই ডাইভিং করা যায়, সেটা আমার মনের মতো জায়গা কি না, খরচ কেমন ইত্যাদি। খোঁজ নিয়ে দুটি জায়গা পছন্দ হলো। বেছে নিলাম জুলিয়ান আল্পস (আল্পস পর্বতমালার অংশ) ঘেরা স্লোভেনিয়ার বোভেক। কারণ, সুইজারল্যান্ডে যেখানে ৯০০ ইউরো (প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা) লাগে, স্লোভেনিয়া সেটা পেলাম ৩৯০ ইউরোতে (প্রায় ৬০ হাজার টাকা)। এই প্যাকেজের মধ্যেই আবার ছবি ও ভিডিও করে দেবে তারা। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অবনী আর চুক্তিভিত্তিক চাকরিজীবী আমার কাছে এ তো বিরাট সুযোগ। সঙ্গে সঙ্গেই স্কাই ডাইভিং সেন্টারে ই-মেইল করে স্লট নিয়ে নিলাম।

স্কাই ডাইভিংয়ের সময় যখন ঘনিয়ে এল, তখনই মনে হলো, যাবই যখন, আশপাশের কয়েকটা দেশও তো ঘুরে দেখতে পারি। পরে সেটাই ঠিক হলো। প্রথমে ফ্রান্স থেকে চলে গেলাম ক্রোয়েশিয়া। অবনী থাকে ফিনল্যান্ডে, আমাদের আরেক বন্ধু নিশি চৌধুরীকে সঙ্গে করে সেও চলে এল আমার জন্মদিনে। দেশটির সমুদ্রপাড়ে তিন দিন কাটিয়ে ঢুকে পড়লাম স্লোভেনিয়ায়।

১৬ আগস্ট সকাল সকাল হাজির হলাম বোভেকের স্কাই ডাইভিং সেন্টারে। সঙ্গে অবনী ও নিশি। অভ্যর্থনাকক্ষেই নামধামসহ বিস্তারিত জেনে নিল। তারপর একটা ফরম ধরিয়ে দিল। আমাদের প্রথমবার স্কাই ডাইভিং কি না, কোনো গুরুতর পুরোনো ইনজুরি আছে কি না, শেষে বন্ড সইয়ের মতো সই করতে হলো স্কাই ডাইভিংয়ের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় একান্তই আমাদের! ফরম জমা দিয়ে অর্থ পরিশোধ করতেই আনন্দের মাত্রা বেড়ে গেল দ্বিগুণ।

প্রশিক্ষক এসে আমাদের কিছু নির্দেশনা দিলেন—কীভাবে প্রস্তুত হব, মানসিকভাবে কীভাবে শক্ত থাকব, ঝাঁপ দেওয়ার পর কী কী করতে হবে, এসব বিষয়ে বললেন। এরপর আমরা জাম্পস্যুট পরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিলাম। প্লেনে ওঠার আগে আগে ফটোগ্রাফাররা তিনজনের ছোট ছোট ভিডিও নিলেন। আমাদের উচ্ছ্বাস কেমন, কাদের সঙ্গে জাম্প করছি—এসব নিয়ে প্রশ্ন করলেন তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমরা প্লেন পর্যন্ত গেলাম।

রানওয়ে ছেড়ে ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে থাকল ছোট প্লেনটা। জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখি জুলিয়ান আল্পস, এক দিকে দেখা গেল সোচা নদী। আরও ওপরে উঠতেই প্লেনটাকে সাদা মেঘ এসে ঢেকে নিল। আমরা তিনজন যার যার প্রশিক্ষকের সঙ্গে। আমাদের ছবি তোলা ও ভিডিও করার জন্যও একজন করে আছেন। প্লেন থেকে ঝাঁপ দেওয়াসহ মাটিতে নামা পর্যন্ত প্রশিক্ষকের নির্দেশেই আমাদের সব করতে হবে। প্রথমে অবনি ঝাঁপ দেবে। তাকে নিয়ে প্রশিক্ষক এগিয়ে গেছেন দরজার দিকে। প্লেন উঠতে উঠতে প্রায় ৪ হাজার মিটার উচ্চতায় তখন। অবনী ভয় আর উচ্চতাভীতির কারণে কুঁকড়ে গেল। নানা প্রশ্ন তার—প্যারাস্যুট খুলবে তো? নষ্ট হয়ে যাবে না তো?

আমি বারবার বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। ওদিকে নিশি ভয় পেলেও সে বেশ উচ্ছ্বসিত। আর আমি তো আমিই! আমার একদম ভয় লাগছে না। বারবার মনে হচ্ছে দীর্ঘদিন পুষে রাখা একটা স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।

এসব ভাবতে ভাবতেই অবনীকে নিয়ে ঝাঁপ দিলেন প্রশিক্ষক। তাঁদের সঙ্গে একজন ফটোগ্রাফারও ঝাঁপ দিলেন। এক কি দেড় মিনিট যেতেই আমার দেওয়ার পালা। আমার মন আনন্দে ভরে গেল। প্লেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, ‘আহা, এই মুহূর্তের জন্য কত বছরের অপেক্ষা!’ আমার পর ঝাঁপ দেওয়ার পালা নিশির।

ঝাঁপ দেওয়ার পর আকাশে ভেসে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিল আমি যেন এক পাখি। শুরুতে উত্তেজনায় হাত খুলতে ভুলে গিয়েছিলাম, প্রশিক্ষক সেটা ইশারায় মনে করিয়ে দিলেন। এরপর পুরোটা সময় আমি হাসছিলাম, মুগ্ধ হচ্ছিলাম।

মিনিটখানেক ফ্রিফলের পর প্যারাস্যুট খুললেন প্রশিক্ষক। প্যারাস্যুট খোলার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আবার কিছুটা ওপরের দিকে উঠলাম। তারপর ধীরে ধীরে নামতে থাকলাম। এ মধ্যেই প্রশিক্ষক আমাকে নিয়ে আকাশে কয়েকটা রাউন্ড দিলেন। ফটোগ্রাফার ঘুরে ঘুরে ভিডিও করলেন।

এভাবে ৮ কি ১০ মিনিট থাকার পর অবতরণ। নিরাপদে মাটিতে নামতেই আনন্দে চিৎকার করে উঠলাম। জাম্পস্যুট পরেই তিনজন তিনজনকে জড়িয়ে ধরে সে কী উল্লাস। মনে হচ্ছিল—আজ আমরা সত্যিই স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেলেছি।

Lading . . .