প্রকাশ: ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নদীর স্রোত কেটে নৌকা এগোচ্ছে, চারপাশে ছমছমে সবুজ! পানির ধারে দাঁড়িয়ে আছে ম্যানগ্রোভ গাছের জটিল শেকড়। হঠাৎ কোথাও বানরের হুল্লোড়, কোথাও হরিণের নীরব পদচারণা। কোথাও লোনা পানির কুমিরের ধীরগতির সাঁতার। হঠাৎ দূর থেকে ভেসে আসে গভীর গর্জন! হ্যাঁ, সেটা বাঘের। ঠিক ধরেছেন। স্বাগতম, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবনে।
প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবনের প্রায় ৬,৫১৭ বর্গকিলোমিটার পড়েছে আমাদের দেশে। যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলাকে আচ্ছাদিত করেছে। বনটি ইউনেস্কো ১৯৮৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শুধু গাছপালা নয়, এখানকার প্রাণী, মানুষ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের অনন্য সমন্বয় সুন্দরবনকে করে তুলেছে আমাদের দেশের অমূল্য সম্পদ।
সুন্দরবনে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের গাছ। যেমন সুন্দরী, গরান, কেওড়া ও গোলপাতা অন্যতম। গাছগুলো লবণাক্ত মাটিকে ধরে রাখে এবং জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাব থেকে উপকূলবর্তী মানুষকে রক্ষা করে। এ বন কেবল সৌন্দর্যের জন্য নয়; প্রাকৃতিক সুরক্ষার জন্যও ঢাল হয়ে কাজ করে।
সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বন বিভাগের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাঘের সংখ্যা বাংলাদেশ অংশে ১২৫টি। এ ছাড়া রয়েছে স্পটেড ডিয়ার, বন্যশূকর, ম্যানগ্রোভ ওটার, লোনা পানির কুমির, ফিশিং ক্যাট, অজগর এবং আরও অসংখ্য প্রাণীর সমাহার। প্রতিটি ভ্রমণকারীর আশা থাকে এই প্রাণীর প্রকৃত পরিবেশে দেখা পাওয়ার।
সুন্দরবনের সৌন্দর্য পুরোপুরি উপলব্ধি করতে হলে নৌকা ভ্রমণ অপরিহার্য। সরু খাল ও বিস্তৃত নদীর মধ্যে ভেসে চলা নৌকা যেন এক জীবন্ত চিত্রকর্ম। অনেক সময় খালের ভেতরে ঢুকে গেলে প্রকৃতির সবুজের মাঝে চলে আসা যায় একেবারে কাছাকাছি। ছোট ছোট ডিঙি নৌকা বা ট্রলার ব্যবহার করে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ ডুবলার চর। প্রতি বছর কার্তিক মাসে অনুষ্ঠিত হয় রাস মেলা। মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও ভক্তরা এখানে মিলিত হয়ে উৎসব পালন করেন। অন্যদিকে পুটনী দ্বীপ নতুন করে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখানকার লাল কাঁকড়ার পদচারণা ও সমুদ্রবালির বিস্তৃতি পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
ঢাকা থেকে সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে জনপ্রিয় পথ হলো খুলনা বা মংলা হয়ে প্রবেশ। ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা লঞ্চে খুলনা যাওয়া যায়। এরপর ট্রলার বা লঞ্চে করে সুন্দরবনের বিভিন্ন স্পটে প্রবেশ করা যায়। চাইলে সাতক্ষীরার শ্যামনগর দিয়েও নৌপথে সুন্দরবনে যাওয়া সম্ভব। অনেক ট্যুর অপারেটর ঢাকা থেকে প্যাকেজ ট্যুর আয়োজন করে। যেখানে ৩ দিন ২ রাতের খরচ পড়ে প্রায় ৭-৯ হাজার টাকা।
বাংলাদেশের সুন্দরবন শুধু পর্যটনের কেন্দ্র নয় বরং উপকূলীয় মানুষের জন্য প্রাকৃতিক সুরক্ষার ঢাল। ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের সময় বন উপকূলের জীবন বাঁচায়। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও অবৈধ কার্যক্রম সুন্দরবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। পরিবেশবিদদের মতে, স্থানীয়দের বিকল্প জীবিকা নিশ্চিত না করলে বন সংরক্ষণ কঠিন হয়ে যাবে।