বান্দরবানের রুমায় অভিযানের পর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন রুমা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলমগীর হোসেন। বান্দরবানের রুমায় জোন কার্যালয়েছবি: প্রথম আলো

রুমায় বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের একজন কেএনএর শীর্ষ নেতা হতে পারেন, ভারী অস্ত্র উদ্ধার

বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে কুকি–চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুজনের একজন কেএনএর শীর্ষ নেতা হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় সেনাবাহিনী রুমা জোন সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলমগীর হোসেন। সেনাবাহিনীর অভিযানে বন্দুকযুদ্ধের পর কেএনএর গোপন আস্তানা থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করা হয় বলে তিনি জানান। তাঁরা ওই সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য। এর মধ্যে একজন শীর্ষ নেতা হতে পারেন। তবে নিহত ব্যক্তিদের নাম–পরিচয় নিশ্চিত করেনি সেনাবাহিনী। অভিযানে কেএনএর আস্তানা থেকে সাব মেশিনগান, চায়নিজ রাইফেলসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদও উদ্ধার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলমগীর হোসেন বলেছেন, আজ ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী কেএনএ সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করে। নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে কেএনএ সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। নিরাপত্তা বাহিনীও পাল্টা গুলি চালায়। আক্রমণের মুখে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। গোপন আস্তানায় তল্লাশি চালিয়ে দুজন কেএনএ সন্ত্রাসীর লাশ পাওয়া যায়। নিহত সন্ত্রাসীদের মধ্যে একজন কেএনএর শীর্ষ নেতা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তাঁর নামসহ নিহত দুজনের নাম শনাক্ত করা যায়নি। এ ছাড়া কেএনএ সন্ত্রাসী সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আলমগীর হোসেন বলেছেন, কেএনএর আস্তানা থেকে একটি চায়নিজ এসএমজি, দুটি মিয়ানমারে তৈরি এসএমজি ও একটি চায়নিজ রাইফেল উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে ৪৫১টি গুলি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আটটি ম্যাগাজিন, দুটি ওয়্যারলেস সেট, তিন সেট ইউনিফর্ম, পাঁচ জোড়া বুট জুতা, বাংলাদেশি ১৭ হাজার ৯০০ টাকা ও ভারতীয় ৯৫১ রুপি।

স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ভোরে তাইদাংম্রং ঝিরিরি উজানে অবস্থিত নাইতং পাহাড়ের পাদদেশে গোলাগুলি হয়েছে। নাইতং পাহাড় রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে। সেখানকার একটি জুমঘরে কেএনএ সন্ত্রাসীরা কয়েক দিন ধরে আস্তানা গেড়েছিল বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। বান্দরবানে নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) দাবি করে কেএনএ তাদের সশস্ত্র শাখা।

বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি ও রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকায় ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে কেএনএফ সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে। সমতলের আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামের একটি উগ্রবাদী সংগঠনের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে কেএনএফের বিরুদ্ধে। তখন ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্মিলিত অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর সাত সদস্য নিহত হয়েছেন। কেএনএফেরও বহু সন্ত্রাসী হতাহত হয়েছে।

কেএনএফ সন্ত্রাসীরা গত বছরের ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতি করে। রুমায় সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির সময় পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়। তখন নিরাপত্তা বাহিনী কেএনএফের সন্ত্রাস দমনে জোরালো অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে কেএনএফের সন্ত্রাসীরা প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।

সংবাদ সম্মেলনে জোন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলমগীর হোসেন বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় কেএনএফের অত্যাচারে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে থাকা বম জনগোষ্ঠীর লোকজন নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। এ পর্যন্ত ১২৬টি পরিবার ফিরে এসেছে। বম জনগোষ্ঠীর যাঁরা ফিরে আসছেন, তাঁদের সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সব জনগোষ্ঠীর মানুষকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। আজ কেএনএ সন্ত্রাসী নিহতের ঘটনা বম জনগোষ্ঠীর বাড়িঘরে ফিরে আসার ব্যাপারে কোনো প্রভাব ফেলবে না জানিয়েছেন জোন অধিনায়ক।