পাইকারি বাজারে গত বছরের তুলনায় কম পেঁয়াজ-রসুন-আদার দাম
পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর কয়েক দিন। এর মধ্যেই মসলা ও মসলাজাতীয় পণ্যের কেনাকাটা শুরু করেছেন ক্রেতারা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনো বাজার জমে ওঠেনি। চাহিদার চেয়ে বেশি মালামাল আছে বাজারে। যার কারণে দাম তুলনামূলক কম।
দেশে কোরবানির সময় মসলাজাতীয় যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, তার মধ্যে অন্যতম পেঁয়াজ, রসুন ও আদা। মূলত মাংস রান্নায় মসলাজাতীয় এসব পণ্য ব্যবহার করা হয় বেশি। প্রতিবছর কোরবানির এক মাস আগে থেকে দেশে ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তর বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে এসব পণ্যের বেচাবিক্রি বেড়ে যায়। তবে এবার মসলাজাতীয় এসব পণ্যের দোকানে ক্রেতা কম। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় গত বছরের তুলনায় এ তিন পণ্যের দাম তুলনামূলক কম আছে।
চট্টগ্রামের চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান খালেদ বলেন, দাম নির্ভর করে বাজারের ওপর। এ বছর সরবরাহ বেশি, আবার বেচাকেনা নেই। তাই দামও কমেছে। কোরবানি ঘিরে ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি আছে। তবে আশা অনুযায়ী এখনো কেউ ব্যবসা করতে পারেননি এ বছর।
পেঁয়াজের বাজারে দেশি আধিপত্য
দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ হয় সাধারণত মেহেরপুর, তাহেরপুরসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে। মৌসুমের শুরুতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ থাকে বেশি। বাজারে চাহিদার একটি অংশ আমদানি করা পেঁয়াজ দিয়ে পূরণ করা হয়। বিশেষ করে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়। এ ছাড়া চীন, পাকিস্তান, মিসর থেকেও পেঁয়াজ আসে।
চট্টগ্রামের বাজারে বেশির ভাগ সময় বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের আধিপত্য থাকে বেশি। তবে এ বছর বাজারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের সরবরাহ প্রায় নেই বললেই চলে। গুটিকয় দোকানে ভারতীয় পেঁয়াজের দেখা পাওয়া গেছে। বাকি সব দোকানে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। প্রায় এক মাস ধরে বাজারের এই চিত্র। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো থাকায় আমদানি কম করেছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রামে পেঁয়াজের বড় আড়তগুলো রয়েছে খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেটে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানকার আড়তগুলোয় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫২ টাকা দরে। গত বছর এ সময় দাম ৬০ টাকার বেশি ছিল। চাহিদা কম থাকায় দাম কমেছে। চাহিদা বাড়লে দাম দু-এক টাকা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে চাহিদা কম। তবে সরবরাহ প্রচুর। চাহিদা না থাকায় দাম কমে গেছে। চাহিদা বাড়লে দাম দু-এক টাকা এদিক-সেদিক হতে পারে।
আদা-রসুনের দামও কমেছে
পেঁয়াজের মতো বাজারে আদা-রসুনের দামও কমেছে। গত বছরের তুলনায় রসুনের দাম অন্তত ৩০ টাকা কমেছে। অন্যদিকে আদার দাম কমেছে ৭০ টাকার মতো। গত বছর কোরবানির আগে প্রতি কেজি আদার দাম ছিল ১৮০ টাকার বেশি। এ বছর আদা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ১১৫ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা দরে।
আড়তে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ টাকার আশপাশে। অন্যদিকে চীন থেকে আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে। বাজারে বিক্রি হওয়া আদা মূলত চীন ও ভারত থেকে আমদানি করা। এর বাইরে দেশি আদাও বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় আদা ৮৫ থেকে ৯০ ও চীন থেকে আমদানি করা আদা ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দেশি আদার দাম ৯০ টাকার আশপাশে। পেঁয়াজের মতো আদা-রসুনের বাজারেও ক্রেতা কম। নগরের বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে জানা গেছে, বাজারে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম পাইকারি দর থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা বেশি।
বহদ্দারহাট বাজারের মুদিদোকানি মোহাম্মদ ফরিদুল হক বলেন, বাজারে ক্রেতা এখনো কম। মাসের শুরু হয়েছে কেবল, তাই হয়তো অনেকে বাজারে আসছেন না। তবে কোরবানি ঘিরে আগামী দু-তিন দিনে ব্যবসা বাড়তে পারে। খুচরা বিক্রেতাদের বিক্রি বাড়লে পাইকারিতেও বাড়বে।