ফ্যাসিবাদীবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সর্বদলীয় বৈঠক

আ’লীগ ও তাদের সহযোগীদের মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত

আ’লীগ ও তাদের সহযোগদের মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

রংপুরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি, এনসিপি, জামায়াতসহ ফ্যাসিবাদীবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছে। এতে যেকোনো পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের মোকাবেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বুধবার (৪ জুন) রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নগরীর নর্থ ভিউ হোটেল এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর ও জেলার উদ্যোগে আয়োজিত ওই বৈঠকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন, মহানগর জামায়াতের আমির এটিএম আজম খান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক রায়হান সিরাজী, গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য ও রংপুর বিভাগীয় প্রধান সমন্বয়ক হানিফুর রহমান সজীব, জেলা আহ্বায়ক শেরে খোদা আসাদুল্লাহ, সদস্য সচিব, আশিকুর রহমান,

মহানগর এবি পার্টির আহ্বায়ক আব্দুর রহমান, সদস্য সচিব মাহবুবার রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তৌহিদুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন মহানগর আহ্বায়ক আব্দুর রহমান কাসেমী, সদস্য সচিব আরিফুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের জেলা সভাপতি আশরাফুল আলম, এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক( উত্তরাঞ্চল) আসাদুল্লাহ আল গালিব ও সাদিয়া ফারজানা দিনা, যুগ্ম মুখ্য, সদস্য এনসিপি, মহানগর রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোললনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট রায়হানসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে শরীক ১৩টি দলের জেলা ও মহানগরের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক ইমরান আহমেদ। এসময় আরও বক্তব্য রাখেনমহানগর আহবায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি, জেলা সদস্য সচিব ড. জামিল হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ।

সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকটি খুবই গোপনীয়তার সাথে করা হয়। বৈঠকে যেকোনো সংকটময় পরিস্থিতিত কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসর জাতীয় পার্টির যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা রুখে দিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল শক্তি এক এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে জুলাই বিপ্লবের মতো মাঠে থাকবে।

বৈঠকে অংশ নেয়া রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসর জাতীয় পাটি পরিকল্পিতভাবে মাঠে উস্কানিমূলক কর্মসূচি ও বক্তব্য দিয়ে রংপুরকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে ফ্যাসিবাদবিরোধী সমমনা সকল রাজনৈতিক দল আমরা বসেছিলামম স্বল্প সময়ের নোটিশে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে রংপুর শান্ত রাখতে আমরা সহযোগিতা করবো। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের দোসররা যদি মাঠে অপতৎপরতা চালাতে চায় তাহলে জুলাই বিপ্লবের মতো মাঠে থেকে আমরা তা প্রতিহত করবো।’

অংশ নেয়া মহানগর জামায়াতের আমির এটিএম আজম খান বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ফ্যাসিস্টদের দোসর বিভিন্ন আচরণ এবং বর্তমান পরিস্থিতি ঘোলাটে করার যে ষড়যন্ত্র চলছে তার তীব্র নিন্দা জানানো হয় বৈঠকে। ফ্যাসিস্টদের যেকোনো অপকতৎপরাতর বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান ঐক্যবদ্ধ করার বিষয়ে বৈফকে আলোচনা হয়েছে। জনগনকে নিয়ে ফ্যাসিস্ট এবং তাদের দোসরদের অপতৎপরতা ও যেকোনো ষড়যন্ত্র আমরা মোকাবেলা করবো।

গণ অধিকার পরিষদের হানিফ খান সজিব বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যেহেতু আমরা সবাই ছিলাম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে আমরা যেকোনো ধরনের উন্নয়নের একসাথে মাঠে কাজ করা। সাম্প্রতিক বিষয়ে যদি কোনো ফ্যাসিবাদের দোসর হিসিবে ছিল চিহ্নিত তারা যেন পরবর্তীতে কোনো ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইলে তা একসাথে মোকোবেলা করার ব্যাপারে আমরা সবাই একমত হয়েছি।

বৈঠকে অংশ নেয়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সাদিয়া ফারজানা দিনা জানান, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদীবিরোধী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এজন্যই বসা হয়েছে। মূলত বৈঠকে জাতীয় পার্টি প্রশ্নে সবাই একমত হয়েছেন, যেকোনো মূল্যে ফ্যাসিবাদের অন্যতম দোসর এই দলটির সকল ধরনের অপতৎপরতা ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড রুখে দিতে হবে। বিশেষ করে, দলটি যেভাবে অপতৎপরতা চালিয়ে উস্কানি দিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি করতে চাইছে। তার বিরুদ্ধে কী করা যায়, কী করনীয়, কী পদক্ষেপ সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবু রায়হান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে সাথে নিয়েই বিগত তিনটি নির্বাচন করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। সে কারণে জাতীয় পার্টি সরাসরি ফ্যাসিবাদের সহযোগী। তাদের ব্যপারে কোন ধরনের ছাড় দেয়া যাবে। বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকের আয়োজক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলা আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, জাতীয় পার্টি রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করছে। পলাতক আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি মহানগর সভাপতি ও সাবেক রসিক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা রাজপথে নেমেছে এবং রাজপথে তাদের কর্মকাণ্ডগুলো খেয়াল করে দেখবেন কতটা রাজনৈতিক দেউলিয়া হলে একটি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মুখ থেকে বিপ্লবী ও অন্য দলের নেতাকে কুলাঙ্গার, কুত্তার বাচ্চাসহ অশালীন ভাষায় কটুক্তি করে বক্তৃতা করা যায়। বিষয়গুলো খুবই উদ্বেগের। বিপ্লবের টার্নিং পয়েন্ট রংপুর এবং রংপুর থেকেই জাতীয় পার্টির মাধ্যমে দেশকে পুনরায় অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চলমান। যেকোনো মূল্যে দেশকে অস্থিতিশীল করার এই অপচেষ্টাকে রাজনৈতিকভাবে রুখে দিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রংপুরের ডাকে আজকের এই সর্বদলীয় মতবিনিময় সভা সভায় রংপুরের আঞ্চলিক বৈষম্য ও বৈষম্যের নেপথ্যে থাকা জাতীয় পার্টির সকল ধরনের অপচেষ্টাকে রুখে দিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যমত্য থেকে তাদের অপতৎপরতা মোকাবেলা করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

এ ব্যপারে জাতীয় পার্টির কো- চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দল হিসেবে জাতীয় পার্টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিয়েছিল। আমার নেতৃত্বে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুরে সরাসরি অংশ নিয়েছি। আমাদের দু’জন কর্মী শহীদ হয়েছে। অসংখ্য আহত হয়েছেন। আমাদের ছয়জন কর্মী গ্রেফতার হয়েছিল। আমাকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে গ্রেফতার করার জন্য আওয়ামী লীগ দাবি তুলেছিল। আমরাই প্রথম শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করে একাত্মতা ঘোষণা করেছি আন্দোলনে। আওয়ামী লীগ আমলে তাদের সাথে থাকা মানে তাদের সহযোগিতা করা নয়। আমরা সব সময় আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করেছি। আমাদেরকে ফ্যাসিবাদের সহযোগী বা দোসর বলা অন্যায়। আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে মাঠে শাস্তিপুর্নভাবে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো।’

তবে বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবিতে সবাই একমত হয়েছে। তবে সেজন্য কী পদক্ষেপ নেয়া যায়। সে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়। তবে কাউকে জাতীয় পার্টির উস্কানিতে পা না দিয়ে মাঠে সরব থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়।