পাহাড়ি ঢলে টইটুম্বর সিলেট নগরের সুরমা নদী। পানি উপচে পড়েছে নদী তীরে। গতকাল বুধবার সকালে নগরের কদমতলী এলাকায়ছবি : প্রথম আলো

সিলেটে নদ-নদীর পানি কমছে, পানিতে ডুবে আউশের খেত ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত

সিলেটে বৃষ্টি কমে এসেছে। সীমান্তের ওপারে ভারত থেকে পাহাড়ি ঢল আসার গতিও কমেছে। ফলে ধীরে ধীরে নদ-নদীর পানি কমছে। তবে এখনো জেলার চার উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।

এর মধ্যে গত রোববার রাতে জকিগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর বাঁধ উপচে ও ভেঙে যাওয়ার ঘটনায় এখনো প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত আছে। এ কারণে দুর্ভোগে আছেন বানভাসি মানুষ।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবদুল কুদ্দুস বুলবুল বলেন, গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত সিলেটের চার উপজেলা জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ওসমানীনগর ও গোলাপগঞ্জে ১৮ হাজার ৬৬১ জন মানুষ বন্যাকবলিত ছিলেন। এর মধ্যে ২৮০ জন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেন। বন্যার্তদের মধ্যে ৩৪ মেট্রিক টন চাল ও ১৩২ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘এখন পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পাহাড়ি ঢল থাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টা জেলার নদ-নদীর পানি কিছুটা কমবে ও বাড়বে। আশা করছি, দুই দিনের মধ্যেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। এরপর পানি দ্রুত নেমে যাবে।’

স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকার বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, জেলার জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ওসমানীনগর ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও বালাগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। জেলার বেশ কিছু গ্রামীণ রাস্তাও তলিয়ে যাওয়ায় বন্যাকবলিত মানুষজন দুর্ভোগে পড়েছেন।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুর রহমান গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলায় ৪৮টি গ্রাম প্লাবিত আছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪০টি পরিবারের মোট ১১৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সকাল ৬টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৭ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

সিলেটের ১৩টি উপজেলা ও নগর এলাকায় ১ হাজার ১৮৭ দশমিক ৫৫ হেক্টর জমিতে আউশ বীজতলা ছিল। এর মধ্যে বিশ্বনাথ উপজেলা ছাড়া সব কটি উপজেলা ও নগরের বীজতলায় কমবেশি পানি উঠেছে। মোট ২৪২ দশমিক ৫ হেক্টর বীজতলা পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৯৩ হেক্টর জমির বীজতলা।

আউশের খেত ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের ১৩টি উপজেলা ও নগর এলাকায় ১ হাজার ১৮৭ দশমিক ৫৫ হেক্টর জমিতে আউশ বীজতলা ছিল। এর মধ্যে বিশ্বনাথ উপজেলা ছাড়া সব কটি উপজেলা ও নগরের বীজতলায় কমবেশি পানি উঠেছে। মোট ২৪২ দশমিক ৫ হেক্টর বীজতলা পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৯৩ হেক্টর জমির বীজতলা। আংশিকসহ মোট ক্ষতিগ্রস্ত বীজতলার পরিমাণ ২২৮ হেক্টর। এতে প্রায় ১২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হচ্ছেন ৫ হাজার ৭০০ জন।

এ ছাড়া জেলায় আউশ ধানের জমি রয়েছে ৬ হাজার ২৬৯ হেক্টর জমিতে। জেলার ১৩টি উপজেলা ও নগরে পানিতে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ১২১ হেক্টর জমির ধানগাছ। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৬৪ হেক্টর। আংশিকসহ মোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯৬৮ হেক্টর জমি। মোট ধানি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২২৩ লাখ টাকার। মোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হচ্ছেন ৭ হাজার ৭৪৪ জন। এ ছাড়া সবজিসহ অন্য ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ৩১ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত দুর্যোগে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী জেলার ১৩টি উপজেলা ও নগরে দুর্যোগে আক্রান্ত জমির পরিমাণ ২ হাজার ৫২৪ হেক্টর। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৮২ হেক্টর। আংশিকসহ ক্ষতিগ্রস্ত মোট জমির পরিমাণ ২ হাজার ৩০৯ হেক্টর। মোট ৪১ হাজার ৫৮৩ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।