‌সিলেটের জ‌কিগঞ্জের বি‌ভিন্ন এলাকায় কু‌শিয়ারা নদীর বাঁধ উপচে পা‌নি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। আজ সোমবার সকালে উপজেলার রারই গ্রামছবি : প্রথম আলো

জকিগঞ্জে কুশিয়ারার তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে পা‌নি ঢুকছে লোকালয়ে

সিলেটের জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। গতকাল রোববার রাত আড়াইটার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রাম ও আজ সোমবার ভোরের দিকে বাখরশাল গ্রাম ও সকাল আটটার দিকে খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল গ্রামের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে।

পৌর শহরের কাছে কেছরী গ্রামের বাঁধের ওপর দিয়ে কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকছে। এ ছাড়া সদর ইউনিয়নের ছবড়িয়া, সেনাপতিরচক, সুলতানপুর ইউপির ইছাপুর, খলাছড়া ইউপির একাধিক স্থান, বারঠাকুরী ইউপির পিল্লাকান্দীসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক জায়গায় বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। স্থানীয় লোকজন বালুভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষায় চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামে কুশিয়ারা নদীর প্রায় ১০০ ফুট ও বাখরশাল গ্রামে প্রায় ৪০ ফুট বাঁধ, খলাছড়া ইউপির লোহারমহল এলাকায় প্রায় ৩০ ফুট বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ওই সব এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদসহ বাড়িঘর তলিয়ে যাচ্ছে। এলাকার লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছেন।

এদিকে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তীরবর্তী এলাকার লোকজনের বসতঘরে ইতিমধ্যে পানি ঢুকে গেছে। গতকাল রাত থেকে তীরবর্তী এলাকার লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে বেরিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু করেছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, উপজেলায় ৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া নৌকাসহ উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে কতটি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত নন। বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড ভালো বলতে পারবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার দেড় থেকে মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় পানি ‘আউট অব কন্ট্রোল’। এ কারণে বাঁধ ভেঙেই হোক বা উপচেই হোক, পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে।

মনু নদ ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

মৌলভীবাজারের মনু নদ ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জুড়ী উপজেলার জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের বিভিন্ন স্থান তলিয়ে গেছে। এ কারণে লোকজন চলাচলে দুর্ভোগে পড়েছেন। এ ছাড়া উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নে জুড়ী নদীর বাঁধ ভেঙে কয়েকটি বাড়ি প্লাবিত হয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আজ সোমবার সকাল ৯টায় কুলাউড়া উপজেলার মনু রেলসেতু পয়েন্টে মনু নদের পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে জুড়ীর কামিনীগঞ্জ বাজার সেতু পয়েন্টে জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।

জুড়ীর ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইমতিয়াজ গফুর মারুফ আজ সকাল ১০টার দিকে মুঠোফোনে বলেন, গতকাল রাতে দক্ষিণ কোনাগাঁও এলাকায় জুড়ী নদীর বাঁধের প্রায় ১৫ ফুট জায়গা ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। এ পর্যন্ত দক্ষিণ কোনাগাঁও ও কোনাগাঁওয়ের নদীতীরবর্তী ৪০ থেকে ৫০টি বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাটও তলিয়ে গেছে। লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

আজ সকাল ৯টার দিকে দেখা যায়, জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়কের কাপনাপাহাড় চা-বাগান, হাফিজি ও দক্ষিণ সাগরনাল এলাকা ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

সাগরনাল ইউনিয়নের বড়ডহর এলাকার মনোয়ারা খাতুন তাঁর অসুস্থ বৃদ্ধ মাকে নিয়ে অটোরিকশা ভাড়া করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাচ্ছিলেন। মনোয়ারা বলেন, ‘রাস্তায় পানি উঠছে জানিয়াই আইছি। কষ্ট হইছে। হঠাৎ করি মায়ের শরীর খুব খারাপ করছে। ডাক্তার দেখাইতে যাই।’

জুড়ীর ইউএনও বাবলু সূত্রধর বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। লোকজনের জন্য শুকনা খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।’

কুলাউড়ার ইউএনও মো. মহিউদ্দিন বলেন, মনু নদে পানি বাড়লেও কোথাও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে কুলাউড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর লস্করপুরে গোগালিছড়ার নদীর বাঁধ ভেঙে কিছু বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। জয়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ছয়টি পরিবার এসেছে। সেখানে চাল বিতরণ করা হয়েছে।