সেন্টমার্টিন দ্বীপে ডুবে গেছে ঘরবাড়ি

সেন্টমার্টিন দ্বীপে ডুবে গেছে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ এবং মৌসুমি জোয়ারের প্রভাবে টানা ভারী বৃষ্টিতে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলোচ্ছ্বাস ও ঢেউয়ের তোড়ে দ্বীপের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে দ্বীপের বিভিন্ন পাড়া-গ্রাম প্লাবিত হয়ে জনজীবনে নেমে এসেছে ভোগান্তি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সুইসগেট খালটি খনন না থাকার ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হওয়ায় দ্বীপের মাদমবলীয়া, কোনার পাড়া, মরংচড়া, লম্বাঘর, পূর্বপাড়া, গলাচিপা, হলবইন্না, দক্ষিণ পাড়া ও উত্তর অংশসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানিতে ডুবে গেছে বহু বসতঘর ও রাস্তাঘাট।

দ্বীপের বাসিন্দা তৈয়ব উল্লাহ বলেন, জীবনে কখনো এতো বড় জলোচ্ছ্বাস দেখিনি। পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির উচ্চতা দিনদিন বাড়ছে। সেন্টমার্টিনে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় এবারের জোয়ারে দ্বীপের চারপাশ থেকে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে।

তিনি আরো জানান, দ্বীপের অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি ঘরে পানি ঢুকেছে, আরো অনেক ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে জোয়ারের পানি। এদিকে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে ঘাটে নোঙরে থাকা অন্তত ছয়টি মাছ ধরার ট্রলার বিধ্বস্ত হয়েছে। দ্বীপে টানা পাঁচ দিন ধরে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় ২৬ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দ্বীপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ার দেখা দিয়েছে। এতে গলাচিপা, কোনার পাড়া ও দক্ষিণ পাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্তত অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি পানিবন্দি। মাছ ধরার ছয়টি ট্রলারও বিধ্বস্ত হয়েছে।

তিনি জানান, রাতে কিছুটা বাতাস কমলেও এখনো দ্বীপবাসী আতঙ্কে আছেন। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে হোটেল-রিসোর্ট ছাড়াও বিএন স্কুল ও স্থানীয় হাসপাতালে প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তবে দ্বীপের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়া ও নৌপথে চলাচল বন্ধ থাকায় খাদ্য ও নিত্যপণ্যের সঙ্কট ক্রমেই তীব্র হচ্ছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, বঙ্গোপসাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেন্টমার্টিনের লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। এখনো লোকজন সরিয়ে নেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

তিনি আরো বলেন, সেন্টমার্টিনে মালবাহী ট্রলার যেতে না পারায় খাদ্য ও নিত্যপণ্যের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। নৌবাহিনীর সাথে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুততম সময়ে মালামালবাহী ট্রলারগুলো দ্বীপে পাঠানো যাবে।

অন্য দিকে উখিয়ার উপকূলীয় জালিয়াপালং ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলেও প্লাবনের খবর পাওয়া গেছে। রেজুখালের পানি বেড়ে যাওয়ায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাগরের পানির উচ্চতা ক্রমেই বাড়ছে। সেন্টমার্টিনের মতো নিচু দ্বীপে পর্যাপ্ত ও টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় সামান্য দুর্যোগেও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ছে দ্বীপবাসী। সেন্টমার্টিনকে রক্ষা করতে হলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় টেকসই অবকাঠামো গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।